‘মিনি কক্সবাজার’ দেখবেন যেখানে

জেনে নিন ‘মিনি কক্সবাজার’ দেখবেন যেখানে । দুবলায় আমাদের দ্বিতীয় ও শেষ দিন। সন্ধ্যায় মোংলার উদ্দেশ্যে ট্রলারে উঠবো। তাই যাওয়ার পূর্বে আমি, কামরুল, দেলু, নোমান ও রুহুল ভাই মিলে সমুদ্র ঘেঁষা বালু চরে যাবো বলে ঠিক করি। ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যা ও ঝড়ে হাজারো মানুষ সাগরে ভেসে যায়। বালুচরেই মরদেহের স্তূপ পড়ে ছিল। সেই থেকে ওই চরের নামকরণ হয় মরণচর। দুবলার পাশেই এর অবস্থান।



‘মিনি কক্সবাজার’ দেখবেন যেখানে

বিকেল ৪ টার দিকে দুপুরের খাবার শেষ করে আমি আর কামরুল ব্যাগ প্রস্তুত করে রাখলাম। এক ফাঁকে দুবলায় প্রস্তুত করা লইট্টা, চিংড়ি, রূপচাঁদা শুঁটকি কিন নিলাম। এসব শুঁটকি বস্তাবন্দি করে রওয়ানা দিলাম মরণচরের উদ্দেশ্যে। ১৫ মিনিট হাঁটতেই আমরা পৌঁছে গেলাম মরণচরে। একি এ তো চর নয় যেন ছোটখাটো কক্সবাজার। কয়েক কিলোমিটার জুড়ে সৈকতের মতো শোভা পাচ্ছে। সাগরে ঢেউ আঁচড়ে পড়ছে চরে।

বলের মতো টকটকে লাল একটি সূর্য সাগরে ডুবু ডুবু ভাব। চারদিকে বসেছে গাঙচিলের মেলা। তাদের আওয়াজ ভেসে আসছে কানে। গোধূলি বেলায় মাছ ধরার ট্রলারগুলোকেও বেশ সুন্দর লাগছে। সৈকতের বালিয়াড়িতে ঘোরাফেরা করছেন পর্যটকরা। অনেকে শিশুদের নিয়ে খেলাধুলা করছেন। রয়েছেন শুঁটকি পল্লীর অনেক জেলে ও শ্রমিকরাও। একপাশে বিক্রি হচ্ছে কয়েক ধরনের শুঁটকি।

রয়েছে চা, চটপটি ও ফুচকার দোকানও। আছে মসজিদ মন্দির। দিনের বেলায় লঞ্চ, জাহাজ কিংবা ট্রলারে এখানে এসে নামেন সুন্দরবনের পর্যটকরা। ঘোরাফেরা শেষে আবারও লঞ্চ, জাহাজ কিংবা ট্রলারে উঠে যান তারা। সূর্য ডোবার আগ মুহূর্তে সুন্দর একটি মুহূর্ত উপভোগ করি আমরা। সন্ধ্যে নামতেই আমরা দুবলায় ফিরছিলাম। তবে হাঁটতে ইচ্ছে হচ্ছিলো না। মানে দুবলা ছেড়ে যেতে চাইছি না। কামরুলেরও হয়তো একই অবস্থা, কারণ তার ধীরে ধীরে হাঁটা তাই প্রমাণ করে।

তবে অফিস থাকায় যেতে বাধ্য। অবশেষে আমি আর দেলু ভাই দেব চাচার ট্রলারের কাছে চলে গেলাম আর কামরুল বেলায়েত ভাইয়ের ঘরে গিয়ে আমাদের ব্যাগ প্রস্তুত রাখলো। সোয়া ৭ টায় ট্রলার ছাড়বে। তাই ট্রলারে উঠে গেলাম। দেলু ভাই ও দেব চাচার কাছ থেকে বিদায় নিলাম। তবে হঠাৎই মনের ভেতরটা কেঁদে উঠলো। তাদের জন্য বুকের একপাশে মায়া জমে আছে।



একই সাথে সুন্দরবনের গহীনের এমন সুন্দর জায়গার প্রেম যেন ছাড়তে ইচ্ছে করছে না। তবুও ফিরতেই হলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই ট্রলার ছেড়ে দিলো। বেলায়েত ভাইয়ের ঘরের পাশ থেকে কামরুলকে তুলে নিলাম। ট্রলারের ছাদেই বসে আছি দু’জন। আকাশে চাঁদ দেখা যাচ্ছে। জ্যোৎস্নার আলোয় সাগর বেশ ভালোই লাগছে। কয়েক ঘণ্টা ট্রলার চলার পর আমরা পশুর নদীতে উঠে যাই। আর দু’জনে মিলে সুন্দরবনের সৌন্দর্য আর জেলে-শ্রমিকদের আন্তরিকতা নিয়ে আলোচনায় মেতে উঠি।

একই সাথে দেলু ভাইয়ের রান্নার কথা তুলতেও ভুলে করিনি। এক সময় ঘুম চলে আসলো দু’জনের। ট্রলারও চলতে থাকলো। এর সাথে বলতে চাই বিদায় সুন্দরবন। আবার হয়তো আসবো কোনও একদিন। ততদিন যেন ভালো থাকে এ প্রকৃতি।

যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন। এবং আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে।

এগুলো দেখুন

‘নিউজিল্যান্ড পাড়ায়’ দেখবেন যেখানে

‘নিউজিল্যান্ড পাড়ায়’ দেখবেন যেখানে

জেনে নিন ‘নিউজিল্যান্ড পাড়ায়’ দেখবেন যেখানে । দেশের মধ্যেই রয়েছে নিউজিল্যান্ড পাড়া। নিশ্চয়ই অবাক হচ্ছেন! …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *