জেনে নিন শিশুর ঠান্ডাজনিত সমস্যার প্রতিরোধ ও প্রতিকার সম্পর্কে। আসুন এ সম্পর্কে আজকে আলোচনা করে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক। শীতের সকাল খুব ঠান্ডা। বেলা বাড়ার সাথে সাথে তাপমাত্রা বাড়ে। আবার সন্ধ্যা বা রাতে জেঁকে বসে শীত। কখনও হয়তো শুষ্ক-দমকা বাতাসে হুট করেই বেড়ে যায় শীতের তীব্রতা। আবহাওয়ার এমন তারতম্যের সাথে যে কারো খাপ খাওয়ানো কঠিন। শিশুদের ক্ষেত্রে তো আরো সমস্যা।
এ কারণে এই সময়ে শিশুদের কমন কোল্ড বা সাধারণ ঠান্ডা লাগা খুবই স্বাভাবিক। যে ঠান্ডা থেকে হতে পারে জ্বর, গলাব্যথাসহ অন্যান্য অনেক জটিলতা। এসব সমস্যা থেকে শিশুদের নিরাপদে রাখার জন্য ঠান্ডার কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধের উপায়গুলো জানা দরকার।
- আরো পড়ুন: শিশুদের ক্যানসার, খেয়াল রাখুন লক্ষণগুলোর
- আরো পড়ুন: শিশু কেন খেতে চায় না
- আরো পড়ুন: স্বল্প ওজনের নবজাতকের যত্ন
শিশুর ঠান্ডাজনিত সমস্যার প্রতিরোধ ও প্রতিকার
ঠান্ডাজনিত সমস্যার প্রকারভেদ
১. কাশি
শিশুরা ঠান্ডাজনিত যে কয়েকটি সমস্যায় ভোগে, কাশি তার মধ্যে অন্যতম। ক্রুপ কাশি, শুকনা কাশি, হুপিং কাশিসহ কয়েক রকম কাশি রয়েছে।
ক্রুপ কাশি: এই কাশিতে শিশুর ট্রাকিয়া বা শ্বাসনালি ফুলে যায়। স্বরতন্ত্র ফুলে যাওয়ার কারণে কাশির সময় একধরনের আওয়াজ হয়।
শুকনা কাশি: এটি সাধারণত ইনফ্লুয়েঞ্জা সংক্রমণের জন্য হয়ে থাকে। এ ধরনের কাশি ঘুমের সময় বা উষ্ণ তাপমাত্রায় শিশুদের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।
সিক্ত কাশি: শ্বাসনালিতে শ্লেষ্মা জমে যাওয়ার কারণে এই কাশি হয়।
হুপিং কাশি: শিশুর হুপিং কাশি হলে বারবার কাশি হতে থাকে। অনেক সময় কাশি শুরু হলে একবারে ৫ থেকে ১৫টি কিংবা আরও বেশি কাশি হতে পারে। মূলত রাতের দিকে এ ধরনের কাশি বাড়ে। এই কাশি হলে শ্বাস নেওয়ার সময় শব্দ হয়।
শিশুদের কাশির কারণ
বিভিন্ন কারণে শিশুদের কাশি হতে পারে, তবে এগুলোর মধ্যে প্রধান হচ্ছে ফ্লু বা ঠান্ডা লাগা। গলায় জমে থাকা শ্লেষ্মা এবং গলা ও শ্বাসনালি ফুলে যাওয়ায় সৃষ্ট অস্বস্তির কারণে কাশি হয়ে থাকে।
২. সর্দি বা ঠান্ডা লাগা
শিশুদের সর্দি লাগার ফলে নাক বন্ধ হয়ে যায়। নাক ও চোখ থেকে পানি পড়ে। প্রচণ্ড মাথাব্যথা হয়। এমনকি কখনও কখনও সর্দির কারণে জ্বরও আসতে পারে।
৩. ফ্লু
ফ্লুর সংক্রমণ হলে সাধারণ সর্দি কাশির মতোই লক্ষণ দেখা দেয়। এ অবস্থায় শিশুর নাক দিয়ে পানি পড়ে। কখনো কখনো জ্বর এমনকি ডায়রিয়া বা বমিও হতে পারে। ফ্লুর কারণে কাশি সাধারণত শুষ্ক হয়ে থাকে।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন
ঠান্ডা লাগা, জ্বর, সর্দি, কাশি এগুলো শিশুদের খুবই সাধারণ সমস্যা। তাই অধিকাংশ সময়ই এসব সমস্যায় চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। যথাযথ যত্ন ও বিশ্রামেই শিশু সুস্থ হয়ে ওঠে। তবে যদি নিম্নোক্ত লক্ষণগুলো দেখা দেয়, সে ক্ষেত্রে শিশুকে চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে।
১. সাত দিনের বেশি সময় ধরে শিশু যদি শুকনা কাশিতে ভোগে।
২. যদি কাশির সাথে সর্দি ও জ্বর থাকে।
৩. শ্বাস নেয়ার সময় যদি কোনও ধরনের আওয়াজ হয় এবং বার বার কাশি হতে থাকে।
৪. যদি আক্রান্ত শিশুর ক্ষুধা এবং ওজন কমে যায়।
৫. কাশির কারণে যদি শিশু ঘুমাতে না পারে।
৬. শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে, যেমন: দ্রুত শ্বাস বা বুকের নিচের অংশ ভিতরের দিকে ঢুকে যেতে থাকলে।
- আরো পড়ুন: হাঁপানি রোগীর সন্তানধারণ
- আরো পড়ুন: শিশুদের ক্যানসার, খেয়াল রাখুন লক্ষণগুলোর
- আরো পড়ুন: শিশু কেন খেতে চায় না
ঠান্ডাজনিত সমস্যা প্রতিরোধের উপায়
নিম্নলিখিত উপায়ে আপনার শিশুকে ঠান্ডাজনিত সমস্যার প্রকোপ থেকে রক্ষা করতে পারেন।
১. ঠান্ডা আবহাওয়ায় শিশুর শরীর চাদর বা গরম জামাকাপড় দিয়ে ঢেকে রাখুন।
২. হাঁপানির কারণে যদি বারবার কাশি হয়, তবে হাঁপানির জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
৩. শিশুকে সংক্রমণ প্রতিরোধের টিকা দিন।
৪. সাধারণ পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন। যেমন: নিয়মিত বিরতিতে হাত ধোয়া, নাকে–মুখে হাত না দেয়া ইত্যাদি।
শিশুর কাশিতে বাড়িতে করণীয়
১. বুকের দুধসহ স্বাভাবিক খাবার চালিয়ে যাওয়া।
২. শিশুকে গরম রাখার জন্য পর্যাপ্ত কাপড় পরিধান করানো।
৩. হালকা গরম শর্ষের তেল বা অলিভ-ওয়েল দিয়ে শরীর ম্যাসাজ করা।
৪. ভিটামিন সি জাতীয় খাবার বেশি খাওয়ানো।
যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন। এবং আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে।