জেনে নিন শিশু বিছানায় প্রস্রাব করলে করণীয় সম্পর্কে। আসুন এ বিষয়ে আজকে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক। ঘুমের মধ্যে বিছানায় বাচ্চার প্রস্রাব করা তথা বেডওয়েটিং নিরাময় যোগ্য একটি রোগ। ৭ বছর বয়সের পর বাচ্চাদের এ ধরনের সমস্যা থাকে না; এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। এরপরও ৭ বছরের পর বেড ওয়েটিং সমস্যার সমাধান না হলে চিকিৎসা আছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন ঢাকা শিশু হাসপাতালের শিশু বিভাগের অধ্যাপক ডা. এএসএম নওশাদ উদ্দিন আহমেদ।
- আরো পড়ুন: ১০টি খাবারে আপনার জন্য ক্যানসারের ঝুঁকি
- আরো পড়ুন: তারুণ্যের চাই সুষম খাদ্যাভ্যাস
- আরো পড়ুন: লেবুপানি কমাবে ওজন
কোনও বাচ্চা যদি সপ্তাহে অন্তত ২ দিন করে টানা ৩ মাস তার অজান্তে রাতে বিছানায় প্রস্রাব করে, তাহলে এটাকে আমরা বেডওয়েটিং বলি। এটা একটা ইন ভলান্টারি মেথড। বাচ্চা তার নিজের অজান্তেই বিছানায় প্রস্রাব করে দেয়। এক্ষেত্রে বাচ্চার কোনও কন্ট্রোল থাকে না।
শিশু বিছানায় প্রস্রাব করলে করণীয়
সাধারণত আমরা জানি, ৫ বছরের একটা বাচ্চা তার প্রস্রাব নিয়ন্ত্রণ করতে পারে রাতের বেলায়। ৫-৭ বছর বয়সের মধ্যে বাচ্চা যদি বিছানায় প্রস্রাব করে রাতের বেলায়, তখন সেটাকে আমরা বেডওয়েটিং বলি। ৭ বছর বয়সের মধ্যে বেশিরভাগ বেডওয়েটিং বন্ধ হয়ে যায়।
কিন্তু কিছু বাচ্চার ৭ বছরের পরেও এ ধরনের সমস্যা থেকে যায়। এক্ষেত্রে অব্যাহত বেডওয়েটিং হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে তার শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য। আমাদের কাছে যখন কোনও রোগী আসে, আমরা তার হিস্ট্রি নিয়ে তার শারীরিক-পরীক্ষা এবং ল্যাবরেটরি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে থাকি।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর যদি আমরা নিশ্চিত হই এটা প্রাইমারি লেভেল, তখন সেক্ষেত্রে আমরা অভিভাবক এবং বাচ্চাকে কাউন্সেলিং করতে পারি। আর যদি সাত বছর পার হয়ে যাওয়ার পরও বাচ্চার বেডওয়েটিং হচ্ছে এবং প্রস্রাবের সাথে জ্বালাপোড়া আছে, তাহলে সেক্ষেত্রে অবশ্যই শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
বাচ্চা যদি বারবার বেশি পরিমাণে প্রস্রাব করে এবং প্রস্রাবের রঙ যদি হলুদ বা লাল হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের কাছে আসতে হবে।
এক্ষেত্রে আমরা প্রথমে শিশুর ডিটেইলস হিস্ট্রি নিয়ে থাকি। তার ফ্যামিলিতে এ ধরনের হিস্ট্রি আছে কিনা সেটা জানার চেষ্টা করি। যদি বাচ্চার মা-বাবার বেডওয়েটিং হিস্ট্রি থাকে, তাহলে সে ক্ষেত্রে বাচ্চার ৪৪-৭৭ শতাংশ পর্যন্ত বেডওয়েটিং হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আর যদি মা-বাবার এ ধরনের হিস্ট্রি না থাকে তাহলে সে ক্ষেত্রে বাচ্চার ১৫ পার্সেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তারপরে দেখি বাচ্চা পানি কেমন পরিমাণে খায়। বাচ্চা দিনের বেলায় বেশি প্রস্রাব করে না কি রাতের বেলায় বেডওয়েটিং করে। বাচ্চার শরীর ভেঙে যাচ্ছে কিনা। কারণ, ডায়াবেটিস থাকলে শরীর ভেঙে যেতে পারে। বাচ্চার প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া আছে কিনা- এ সকল বিষয় দেখার পরে আমরা বাচ্চার পরীক্ষা করি।
পরীক্ষায় আমরা দেখি তার কিডনি এবং মূত্রথলিতে কোনো সমস্যা আছে কিনা। অনেক সময় পিঠে মেরুদণ্ডের নিচে টিউমার জাতীয় কিছু থাকতে পারে, তো সেটা দেখে আমরা কিছুটা সন্দেহ করতে পারি। এছাড়া বাচ্চার কোষ্ঠকাঠিন্য আছে কিনা সেটাও জানার চেষ্টা করি। কারণ বাচ্চার কনস্টিপেশন বা পায়খানা কষা থাকার কারণেও বেডওয়েটিং হতে পারে।
এসব হিস্ট্রি নেওয়ার পর আমরা বাচ্চার কিছু ল্যাবরেটরি ইনভেস্টিগেশন করে দেখি যে, বাচ্চার কোনো প্রস্রাবে ইনফেকশন আছে কিনা। তার ব্লাড সুগার টেস্ট করে দেখি ডায়াবেটিস আছে কিনা। তার কিডনি, মূত্রথলির আলট্রাসনোগ্রাম বা ইমেজিং পরীক্ষা করে দেখি যে, প্রস্রাবের রাস্তায় কোনো সমস্যা আছে কিনা। এসব প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা তার চিকিৎসা শুরু করে থাকি।
- আরো পড়ুন: দলিল ও খতিয়ান বিষয়ক আলোচনা
- আরো পড়ুন: বাঙালির বিবাহ উৎসব
- আরো পড়ুন: লিসবন: ভাস্কো দ্য গামা ব্রিজ, বাইর আলতো
এছাড়া বেডওয়েটিং রোগের ক্ষেত্রে আমাদের অভিভাবকদের অবশ্যই সচেতন হতে হবে। যখন বাচ্চার মা-বাবা অন্য রোগের কারণে তাদেরকে আমাদের কাছে নিয়ে আসেন, তখন প্রসঙ্গক্রমে এটাও বলে যে বাচ্চা বিছানায় প্রস্রাব করে। বাচ্চাটা তখন সাইকোলজিক্যাল প্রবলেম সাফার করে, যখন তার মা-বাবা, ভাই-বোন বলে, সে বিছানায় প্রস্রাব করে। তখন বাচ্চাটা নিজেকে গুটিয়ে রাখে, সে স্ট্রেস ফিল করে। এবং এই স্ট্রেস ফিল করার কারণে বেডওয়েটিং প্রবলেম আরও বেড়ে যায়।
এছাড়া বেডওয়েটিংয়ের কারণে মা-বাবা হয়তো মাঝে-মাঝে বাচ্চাদের মারধরও করে। সেক্ষেত্রে বাচ্চাদের এ সমস্যা আরও বেড়ে যায়। কারণ এই বেডওয়েটিং বাচ্চারা নিজে থেকে করে না।
সুতরাং এই বেডওয়েটিং বন্ধ করার জন্য মা-বাবাদের কিছু সঠিক ব্যবহার এবং ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে বাচ্চাকে সঠিক পরিচালনার মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে উত্তরণ করতে হবে।
যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন। এবং আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে।