১০টি খাবারে আপনার জন্য ক্যানসারের ঝুঁকি

১০টি খাবারে আপনার জন্য ক্যানসারের ঝুঁকি এই বিষয় নিয়ে আজকের আলোচনা করা হবে। ক্যানসার বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রাণঘাতী রোগের মধ্যে অন্যতম। ক্যানসারের কারণে বিশ্বে প্রতিবছর লাখো মানুষ মারা যায়। এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, ২০১২ সালে বিশ্বে ৮০ লাখ মানুষ ক্যানসারে মারা যায়। পরবর্তী বছরগুলোয়ও এ অবস্থার উন্নতি হয়নি। আগামী ২০ বছরে ক্যানসারের কারণে মৃত্যুর হার ৭০% বৃদ্ধি পাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

অবাক হওয়ার মতো কথা হলো, এসব মৃত্যুর ৩০% অতি সহজে প্রতিরোধ করা সম্ভব। এর জন্য দরকার শুধু দৈনন্দিন জীবনে খাদ্যাভ্যাস ও লাইফস্টাইল পরিবর্তন। আমরা প্রতিনিয়ত যেসব খাবার খাই, তার মধ্যে অনেক খাবার ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। সুতরাং যেসব খাবার ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়, তা বর্জন করা স্বাস্থ্যের জন্য অতি প্রয়োজন।



এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ১০% ক্যানসারের মূল কারণ কোনও না কোনও খাবার। বহু ক্যানসার যেমন খাদ্যের কারণে হয়, তেমনি বহু ক্যানসার আবার খাবারের মাধ্যমে প্রতিরোধ করা সম্ভব। নিচে কিছু খাবারের কথা বর্ণনা করা হলো, যা ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। খাবারগুলো বর্জন করা সম্ভব হলে ক্যানসারের ঝুঁকি বহুলাংশে কমে আসবে বলে আশা করা যায়।

১. অর্গানিক নয় এমন খাবার খাওয়া থেকে সতর্ক হওয়া বাঞ্ছনীয়। ফলমূল-শাকসবজি শরীরের জন্য অত্যাবশকীয় খাবার। শুধু আঁশ নয়, ফলমূল ও শাকসবজিতে আছে অসংখ্য অত্যাবশ্যকীয় উপাদান ও উপকরণ, যার অভাবে শরীর সুষ্ঠুভাবে কার্যসম্পাদন করতে পারে না। এসব উপাদানের মধ্যে আছে ভিটামিন, খনিজ পদার্থ, পলিফেনল ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট।

আজকাল শাকসবজি ও ফলমূল উৎপাদনে রাসায়নিক সার ও বিষাক্ত কীটনাশক ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এসব রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের কারণে খাবার শুধু খাওয়ার অনুপযোগী হয়ে পড়ে না, ক্যানসারের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের মূল উপাদান হলো নাইট্রোজেন, অ্যাট্রাজিন, থায়োডিকার্ব এবং অর্গানোফসফেট। এসব উপাদান বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শাকসবজি ফলমূলের গায়ে লেগে থাকে বা ভেতরে ঢুকে পড়ে খাবারকে খাওয়ার অনুপযোগী করে তোলে।

এনভায়রনমেন্টাল ওয়ার্কিং গ্রুপ কর্তৃক পরিচালিত এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, ৯৮% শাকসবজি ও ফলমূল ক্যানসার সৃষ্টিতে সক্ষম ক্ষতিকর উপাদান দ্বারা দূষিত হয়ে পড়ে। স্ট্রবেরি, আঙুর, কমলালেবু, আপেলে বেশি কীটনাশক ব্যবহৃত হয়। তাই এসব ফলমূল ও শাকসবজি খাওয়ার আগে বারবার খুব ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে।

ভালো করে ধুলেও শাকসবজি বা ফলমূল শতভাগ পরিষ্কার ও বিশুদ্ধ হয় না। কিছু পরিমাণ কীটনাশক থেকে যেতেই পারে। এ কারণে রাসায়নিক সার ও অতিমাত্রার কীটনাশক ব্যবহার না করে অর্গানিক উপায়ে খাবার উৎপাদনে গুরুত্ব দিতে হবে। উন্নত দেশগুলোয় অর্গানিক খাবার উৎপাদন হয় এবং স্টোরগুলোয় বিক্রির আলাদা ব্যবস্থা থাকে।



২. ফ্রেঞ্চ ফ্রাই ও আলুর চিপস খাওয়ার আগে একটু চিন্তা করুন। ফ্রেঞ্চ ফ্রাই ও আলুর চিপস তৈরিতে ক্ষতিকর ও অস্বাস্থ্যকর ট্রান্সফ্যাট ব্যবহার করা হয়। ট্রান্সফ্যাটের সমস্যার কথা আমরা বহু আগ থেকে জানলেও সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা গেছে, এসব স্ন্যাক-জাতীয় খাবারে ক্যানসার সৃষ্টিকারী অ্যাক্রাইলেমাইড নামের এক রাসায়নিক যৌগ উপস্থিত থাকে।

ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউট বলেছে, অ্যাক্রাইলেমাইডের এক বড় উৎস হলো খাবার। অনেক খাবারে অ্যাক্রাইলেমাইডের উপস্থিতির কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও জাতিসংঘ ভীষণ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। প্রচণ্ড উত্তাপে দীর্ঘক্ষণ ধরে খাবার ভাজি, রান্না বা পোড়ানো হলে অ্যাক্রাইলেমাইড উৎপন্ন হয়। ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের মতে, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই মচমচে করে তৈরি করা হলে অ্যাক্রাইলেমাইডের পরিমাণ বেড়ে যায়।

এসব কথা পড়ে তাহলে কী আমরা আলুর স্ন্যাক খাওয়া বন্ধ করে দেব? না, এর প্রয়োজন নেই। আলুর যাবতীয় খাবার আমরা ঘরেই প্রস্তুত করতে পারি। তবে সেই ভাজি বা রান্না হতে হবে ১২০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম তাপমাত্রায় অল্প সময়ের জন্য। ফ্রাই করার পর তৈরি খাবার ওভেনে রেখে শুকিয়ে নিলে খুব ভালো হয়।

৩. মাইক্রোওভেনে তৈরি পপকর্ন বা ভুট্টার খই খাওয়ার ব্যাপারে আমাদের সচেতন হতে হবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নের কারণে আজকাল আমাদের অনেক কাজ খুব সহজ হয়ে গেছে। মাইক্রোওভেন ব্যবহার করে আজকাল ঘরে ঘরে ভুট্টার খই তৈরি করা হয়। এক ধরনের বিশেষ থলেতে ভুট্টা রেখে মাইক্রোওভেনে দিলে মিনিটের মধ্যে ম্যাজিক শুরু হয়ে যায়।

কিন্তু এ পদ্ধতিতে খই তৈরি করে খাওয়ার মধ্যে ক্যানসারের ঝুঁকি আছে। যে থলেতে ভুট্টা রেখে খই তৈরি করা হয়, তা থেকে পারফ্লোরোঅক্টানোয়িক অ্যাসিড নামের এক ধরনের রাসায়নিক যৌগ উৎপন্ন হয়। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে- এ রাসায়নিক যৌগ লিভার, কিডনি, প্যানক্রিয়াসসহ আরও কয়েকটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।

মাইক্রোওভেনে খই তৈরি করার সময় ডাইঅ্যাসিটাইল নামের অন্য এক রাসায়নিক পদার্থ তৈরি করে, যা ক্যানসার ছাড়াও ফুসফুসের সমস্যা তৈরি করতে পারে। ক্যানসারের ঝুঁকি কমানোর জন্য খই তৈরির জন্য মাইক্রোওভেনের পরিবর্তে সনাতনী পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে।

৪. লাল মাংস ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায় বলে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বলা হয়েছে। গরু, মেষ, শূকর ও অন্যান্য পশুর লাল মাংস সুষম খাবারের উৎস, যা শাকসবজি ও ফলমূলে পাওয়া যায় না। অতিমাত্রায় লাল মাংস খাওয়া স্বাস্থ্যসম্মত নয়-এ কথাটি পুরোনো হলেও লাল মাংস ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়-এ কথাটি অতি সম্প্রতি জানা গেছে।

দ্য ওয়ার্ল্ড ক্যানসার রিসার্চ ফান্ড এবং অ্যামেরিকান ইনস্টিটিউট ফর ক্যানসার রিসার্চ প্রকাশ করেছে-যেসব মানুষের খাবারে লাল মাংসের আধিক্য থাকে, তাদের প্যানক্রিয়াস, পাকস্থলী, ফুসফুস, উওসোফেগাস, ব্রেস্ট ও এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যানসারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। লাল মাংস রান্নার জন্য দীর্ঘক্ষণ ধরে উচ্চ তাপ প্রয়োগ করতে হয়।

অনেকে আবার পোড়া লাল মাংস খেতে পছন্দ করে। এসব পদ্ধতিতে লাল মাংস রান্না করার সময় মাংসে হেটারোসাইক্লিক অ্যামাইন তৈরি হয়, যা ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে। লাল মাংসে অতিমাত্রায় সম্পৃক্ত চর্বি থাকে, যা স্তন ও মলাশয়ের ক্যানসার সৃষ্টির সহায়ক। ক্যানসারের ঝুঁকি কমানোর জন্য লাল মাংস বর্জন করা উত্তম। আর সম্পূর্ণ বর্জন করা না গেলে লাল মাংস খাওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তবে পোড়া লাল মাংস কোনোমতেই খাওয়া উচিত হবে না।

৫. বিশ্বব্যাপী স্থূলতা এক বড় ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। স্থূল মানুষ ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ ও স্ট্রোকে বেশি আক্রান্ত হয়। স্থূলতার ভয়ে আজকাল অসংখ্য মানুষ চিনির পরিবর্তে ডায়েট, জিরো ক্যালরি এবং লো-ক্যালরির কৃত্রিম চিনিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ক্যালরিবিহীন কৃত্রিম চিনি ওজন কমাতে বা স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করলেও ক্যানসার তৈরিতেও ভূমিকা রাখে এ কথাটি খুব কম মানুষই জানে। কৃত্রিম চিনি হিসাবে পরিচিতি অ্যাসপার্টেম চিনির চেয়ে ২’শ গুণ বেশি মিষ্টি।

এ অতিপরিচিত ও বহুলব্যবহৃত অ্যাসপার্টেম ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। অনেক ডায়েট খাবারে অনাবশ্যকীয় কৃত্রিম রং, রাসায়নিক যৌগ ও প্রিজারভেটিভ থাকে, যা ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। আমি মনে করি, কৃত্রিম চিনির চেয়ে অল্প চিনি খাওয়া অনেক স্বাস্থ্যসম্মত। ওজন কমানোর জন্য বা ডায়াবেটিসের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কৃত্রিম চিনি বা চিনি গ্রহণ না করেও বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে এসব স্বাস্থ্য সমস্যা দূর করা যায়। সুষম খাবার, ব্যায়াম ও লাইফস্টাইল পরিবর্তন মানুষকে বহু স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে রক্ষা করে থাকে।

৬. পরিশোধিত খাদ্যশস্য দিয়ে প্রতিনিয়তই আমরা আমাদের ক্ষুধা মেটাচ্ছি। রুটি, পেস্ট্রি, সাদা চাল, ময়দা, পেস্তা হলো কর্বোহাইড্রেট বা শর্করার প্রধান উৎস। এসব খাবার আমাদের প্রতিদিনের শক্তি জোগায়। কারণ এসব পরিশোধিত খাদ্যশস্য অতি সহজে ও অল্প সময়ে গ্লুকোজে রূপান্তরিত হয় এবং শরীরের কোটি কোটি কোষে পৌঁছার জন্য রক্তে ছড়িয়ে পড়ে।

দ্রুত সৃষ্ট এ গ্লুকোজ শুধু সাধারণ কোষের শক্তি জোগায় না, ক্যানসার কোষের শক্তিও জোগায়। অপরিশোধিত খাদ্যশস্য স্থূলতা ও ডায়াবেটিসের অন্যতম এক কারণ হলেও তা ক্যানসার সৃষ্টি করে না। ক্যানসার কোষ বা টিউমারের বয়োবৃদ্ধি ও পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ পরোক্ষ ভূমিকা পালন করে এ পরিশোধিত খাদ্যশস্য। পরিশোধিত খাদ্যশস্য, বিশেষ করে ময়দা সাদা করার জন্য ক্লোরিন গ্যাস ব্যবহার করা হয়।

দ্য এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সির সূত্রমতে, ক্লোরিন গ্যাস মানবদেহের জন্য সম্পূর্ণ অনুপযোগী। ক্যানসার কোষ বা টিউমার বৃদ্ধিসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা প্রতিরোধের জন্য পরিশোধিত খাদ্যশস্যের পরির্তে সম্পূর্ণ শস্য বা ভুসিযুক্ত শস্য খাওয়া আবশ্যক। হোলগ্রেইন বা সম্পূর্ণ শস্যে প্রচুর আঁশ ও পুষ্টিকর উপাদান থাকে। সম্পূর্ণ শস্য খেলে মলাশয়ের ক্যানসারের ঝুঁকি বহুলাংশ কমে যায়।

৭. সোডা অতি পরিচিত ও বহুলব্যবহৃত পানীয়। গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড গরমে এক বোতল ঠান্ডা মৃদু হিস্হিস শব্দ করা মিষ্টিজাতীয় সোডা যে কাউকে অপরিসীম তৃপ্তি দিতে পারে। সোডা শুধু তৃষ্ণা নিবারণ করে না, সোডা পান ক্যানসারের ঝুঁকিও বাড়ায়। অন্যান্য মিষ্টি কোমল পানীয়র মতো সোডার মধ্যেও আছে অ্যাসপার্টেম জাতীয় অনেক কৃত্রিম চিনি।

আগেই বলা হয়েছে, অ্যাসপার্টেম অতি সুপরিচিত কারসিনোজেন (যা ক্যানসার সৃষ্টি করে)। এক গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যাসপার্টেম মস্তিষ্ক ক্যানসার সৃষ্টির প্রবল ঝুঁকি বাড়ায়। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় ১ লাখ ২৫ হাজার মানুষের ওপর পরীক্ষা করে দেখা গেছে, যারা কৃত্রিম চিনিসমৃদ্ধ সোডা পান করেন, তাদের মধ্যে লিউকেমিয়া, লিম্পোমা এবং মাল্টিপল মায়েলোমার প্রকোপ বাড়ে।

কৃত্রিম চিনি ছাড়াও সোডায় থাকে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ ও রং, যা ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে সাহায্য করে। ৪-মিথাইলইমিডাজল থেকে উৎপন্ন ক্যারামেল রং ক্যান্সার সৃষ্টির সহায়ক শক্তি হিসাবে কাজ করে। কৃত্রিম চিনিসমৃদ্ধ সোডা ও অন্যান্য কোমল পানীয় বর্জন করা উচিত। প্রাকৃতিক ফলের রস স্বাস্থ্যের জন্য অতি উপকারী এবং ক্যানসার প্রতিরোধক। আসুন, আমরা কৃত্রিমতা ছেড়ে প্রকৃতিতে ফিরে আসি।

৮. লবণে জারিত বা ধূমশোধিত শূকরের মাংস, হটডগ, সালামি, মিটলোফ এবং সসেজ হলো বহু মানুষের দৈনন্দিন জীবনের খাবার। প্রক্রিয়াজাত মাংস নিঃসন্দেহে খেতে বেশ সুস্বাদু। সাথে সাথে এসব সুপরিচিত খাবার ক্যানসারের ঝুঁকিও বাড়ায় বেশ দ্রুতগতিতে। প্রক্রিয়াজাত মাংসে সোডিয়াম নাইট্রেটের মতো ক্ষতিকর প্রিজারভেটিভ থাকে। সোডিয়াম নাইট্রেটসহ অন্যান্য রাসায়নিক যৌগ ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায় বলে পরীক্ষায় দেখা গেছে।

নাইট্রেট খাওয়ার পর এন-নাইট্রোসো যৌগে রূপান্তরিত হয়। এসব মেটাবলিক যৌগ শরীরে ক্যানসার তৈরিতে সাহায্য করে। ধূমায়িত বা ধূমশোধিত মাংস উচ্চতাপে পোড়ানো হয় বলে নাইট্রেট বিক্রিয়ার মাধ্যমে নাইট্রাইটে রূপান্তরিত হয়। এসব নাইট্রাইট খুব ক্রিয়াশীল কারসিনোজেন। ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে হলে প্রক্রিয়াজাত মাংস খাওয়া কমাতে হবে বা বর্জন করতে হবে।

৯. বিয়ার বা ওয়াইনকে পশ্চিমা বিশ্বে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী বলে গণ্য করা হয়। কম বা মধ্যম মাত্রার অ্যালকোহল পান নাকি হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়, কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত অ্যালকোহল পান ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায় বলে এক পরীক্ষায় বলা হয়েছে। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে ক্যানসারে মোট মৃত্যুর ৩% হয় অ্যালকোহল পানের কারণে। অ্যালকোহল শরীরের সুস্থ কোষকে ধ্বংস করে এবং পরবর্তী সময়ে ক্যানসার কোষই শূন্যস্থান পূরণ করে নেয়।

অ্যালকোহল অর্থাৎ ইথাইল অ্যালকোহল শরীরে বিশোধিত হওয়ার পর রাসায়নিক পরিবর্তনের মাধ্যমে অ্যাসিটেলডিহাইডে রূপান্তরিত হয়। অ্যাসিটেলডিহাইড ডিএনএ ভেঙে দেয়ার মাধ্যমে ক্যানসার সৃষ্টি করে। এ ক্ষতিকর কারসিনোজেন অসুস্থ কোষকে মেরামতের মাধ্যমে সুস্থ হওয়ার সুযোগ দেয় না। ফলে ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি ও বিস্তারলাভ ঘটে অতি দ্রুতগতিতে। অন্যদিকে অ্যালকোহল নারীদের শরীরে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। সুতরাং ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে হলে অ্যালকোহল পানে বিরত থাকতে হবে।

১০. টিনজাত টমেটো ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। টমেটো সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর খাবারের মধ্যে অন্যতম। টমেটোয় লাইকোপেন, লিউটিন, বিটা-কেরটিন ও কোলিনের মতো গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে। এছাড়াও টমেটোয় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ, সি ও কোলিক অ্যাসিড। কিন্তু টিনজাত টমেটো ভালো নয়।


 


সব টিনজাত খাবারের মতো টমেটোর টিনের অভ্যন্তরীণ দেওয়ালে আস্তর হিসাবে ব্যবহৃত বিসফেনোল-এ নামক এক ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদানের সংস্পর্শে আসে টমেটো। বিসফেনোল এ কারসিনোজেন হিসাবে পরিচিত। প্লাস্টিক বোতলেও বিসফেনোল এ থাকে। ক্ষতিকর প্রভাবের কথা বিবেচনায় নিয়ে ফ্রান্স ২০১৩ সালে বিসফেনোলের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে।

বিসফেনোলের কারণে স্তন ক্যানসার ও প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। টমেটো অতিমাত্রায় অ্যাসিডিক হওয়ার কারণে বিসফেনোলের সাথে খুব দ্রুত বিক্রিয়া করতে পারে এবং এর ফলে বিসফেনোল টমেটোর ভেতরে ঢুকে পড়ে। এ কারণে অন্যান্য টিনজাত খাবারের তুলনায় টিনজাত টমেটো ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি বাড়ায়। সুতরাং ক্যানসারের ঝুঁকি কমানোর জন্য আমাদের টিনজাত টমেটো খাওয়া বন্ধ করতে হবে। তাজা টমেটো পাওয়া গেলে টিনজাত টমেটো কেনার দরকারই বা কী!

আগেই বলেছি, অনেক খাবার ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। আবার অনেক খাবার ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই ভেবেচিন্তে খাবার খেতে হবে, যাতে করে আমরা নিরাপদ ও সুস্থ জীবনযাপন করতে পারি। সবাই ভালো থাকুন, সব ধরনের রোগ থেকে নিরাপদ থাকুন।

যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন।



 

এগুলো দেখুন

চায়ের কেজি লাখ টাকা

যে চায়ের কেজি লাখ টাকা

জেনে নিন যে চায়ের কেজি লাখ টাকা । আসুন এ বিষয়ে আজকে আমরা আলোচনা করে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *