স্টাফ রিপোর্টার :: ৩ সাংসদের মৃত্যু এবং এক সাংসদের সদস্যপদ শূন্য ঘোষণা করায় ৪টি সংসদীয় আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। লক্ষ্মীপুর-২, সিলেট-৩, ঢাকা-১৪ ও কুমিল্লা-৫ আসনে উপনির্বাচন জুলাই মাসে হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এরই মধ্যে লক্ষ্মীপুর-২ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত থাকায় বাকি ৩ আসনে আওয়ামী লীগের ভেতরে বাইরে নৌকার প্রার্থী নিয়ে জোর আলোচনা চলছে।
ইতোমধ্যে এসব আসনে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে নৌকার মাঝি কারা হচ্ছেন, এ নিয়ে সর্বত্র চলছে আলোচনা। অন্যদিকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে নানা হিসাব কষছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তফসিল ঘোষণা না হলেও এরই মধ্যে নৌকা প্রতীক পেতে শতাধিক প্রার্থী দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। এ তালিকা ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে- তফসিল ঘোষণা হলে প্রার্থী বৃদ্ধির সংখ্যা আরো প্রকট হবে।
উপনির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ অনিশ্চিতে নৌকা প্রার্থীদের অনেকটাই বিজয় নিশ্চিত, এমন প্রত্যাশায় অধিক প্রার্থী মরিয়া হয়ে উঠেছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে। এর মধ্যে দলটির অঙ্গসংগঠনের ত্যাগী-পরীক্ষিত নেতারা ছাড়াও অবসরপ্রাপ্ত আমলা, ব্যবসায়ী নেতা, অভিনেতা ও পাতি নেতারাও আছেন। আবার বিএনপি-জামায়াতপন্থী ব্যক্তিরাও খোলস পাল্টে নৌকা প্রতীকের জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন।
মনোনয়ন প্রত্যাশী সব প্রার্থীরাই রাজনীতিক সক্রিয়তা বাড়ানোর পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও প্রচার চালাচ্ছেন। কেউ কেউ পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন সাঁটিয়ে এলাকায় নিজের প্রার্থিতা জানান দিচ্ছেন। আবার অনেকে খাদ্যসামগ্রীসহ করোনা প্রতিরোধের সামগ্রীও বিতরণ করছেন।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল। যেকোন নির্বাচনে এ দলের প্রার্থীর সংখ্যা অধিক হবে এটাই স্বাভাবিক।’
কি ধরণের প্রার্থীরা মনোনয়নের দৌড়ে এগিয়ে থাকবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সাংগঠনিকভাবে দক্ষ, ত্যাগী, পরীক্ষিত এবং এলাকায় জনপ্রিয়তা আছে এমন প্রার্থীরাই মনোনয়নে এগিয়ে থাকবেন। তবে বিএনপি-জামায়াতপন্থী বা দলে অনুপ্রবেশকারী কাউকে মনোনয়ন দেয়া হবে না।’
আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল নেতা জানান, উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে সাংগঠনিক ও একাধিক সংস্থা মাঠ জরিপ করছে। নির্বাচন কমিশন উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করলে মনোনয়ন ফরম ছাড়া হবে। পরবর্তিতে দলের মনোনয়ন বোর্ডে সবকিছু যাচাই-বাচাই করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ঢাকা-১৪ আসন
রাজধানীর শাহ আলী ও দারুস সালাম থানা, বৃহত্তর মিরপুরের অর্ধেক, রূপনগরের আংশিক, সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়ন নিয়ে এই আসন গঠিত। এই আসনের অধীন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৭, ৮, ৯, ১০, ১১ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ড। জাতীয়ভাবেই আসনটির গুরুত্ব অনেক।
এছাড়া আসনটির অধীন রয়েছে গাবতলী পশুর হাট, বাস টার্মিনাল, ট্রাক টার্মিনাল, বালু ও পাথর ঘাট, বেশকিছু শপিং মল, ফুটপাথ, বোটানিক্যাল গার্ডেন, মিরপুর চিড়িয়াখানা, খেয়াঘাট, মাজার, মাছের আড়তসহ বিভিন্ন সরকারি সম্পত্তি। এসব কারণেই ঢাকা-১৪ আসনের গুরুত্ব অনেক।
বিগত ২০০৮ সালের নির্বাচনে আসলামুল হক আসলাম আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে বিএনপি প্রার্থী এসএ খালেককে পরাজিত করেছিলো। বিগত ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনেও তিনি এই আসনে নৌকার মাঝি হয়ে সংসদে যান। গত ৪ এপ্রিল সংসদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আসলামুল হক মারা গেলে আসনটি শূন্য ঘোষণা হয়।
জানা গেছে, ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এ আসনটিতে নৌকা প্রতীক পেতে ৫০ জনেরও বেশি প্রার্থী দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে প্রয়াত আসলামুল হকের স্ত্রী মাকসুদা হক তার স্বামীর অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করার জন্য উপনির্বাচনে নৌকার মাঝি হতে চান। আবার আসলামুলের বড় ভাই ও জাতীয় পার্টির (জেপি) প্রেসিডিয়াম সদস্য মফিজুল হক বেবুও চাইছেন এ আসনে নির্বাচন করতে।
পরিবারের বাইরে মনোনয়ন পেতে ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছেন সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর যুব মহিলা লীগের সভাপতি সাবিনা আক্তার তুহিন। এর আগে একাদশ নির্বাচনে প্রয়াত আসলামুল হকের সাথে নৌকার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন সাবিনা আক্তার।
সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় উপরের দিকে রয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোবাশ্বের চৌধুরী, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পোশাক প্রস্তুতকারক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সিনিয়র সহ-সভাপতি এস এম মান্নান কচিও।
আবার স্থানীয় নেতাকর্মীদের একটি অংশ যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলকে এই আসনে নৌকার মাঝি হিসেবে দেখতে জোর প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগের অন্যতম সম্ভাব্য প্রার্থী রয়েছেন ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং দারুস সালাম থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মাজহারুল আনাম।
এছাড়াও দারুস সালাম থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী ফরিদুল হক হ্যাপী, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সদস্য দেলোয়ার হোসেন, শাহ আলী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আগা খান মিন্টু, ডিএনসিসি ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার দেওয়ান আবদুল মান্নান, মিরপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম হানিফ, মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিরিন রোকসানা, ফুওয়াং ফুডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সিআইপি ড. আরিফ আহমেদ চৌধুরী, কাউন্সিলর মুজিব সারোয়ার মাসুম, অভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজলসহ অনেকেই প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
কুমিল্লা-৫ আসন
বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন নিয়ে এই আসনটি গঠিত। সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন খসরুর মৃত্যুতে আসনটি শূন্য ঘোষণা হয়। আসনে অন্তত দুই ডজনের বেশি আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী, অবসরপ্রাপ্ত আমলা ও ব্যবসায়ী মনোনয়ন পেতে লবিং-দৌড়ঝাঁপ চালিয়ে যাচ্ছেন।
সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় মতিন খসরুর পরিবারেরই চারজন মনোনয়ন প্রত্যাশী আছেন। তারা হলেন- প্রয়াত মতিন খসরুর স্ত্রী সালমা সোবহান খসরু, ছেলে মুনেফ ওয়াসিফ, মেয়ে ডা. উম্মে হাবিবা দিলশাদ মুনমুন এবং ছোট ভাই জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুল মমিন ফেরদৌস।
আলোচনায় রয়েছেন ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) মোস্তাফিজুর রহমান, কুমিল্লা (দক্ষিণ) জেলা আওয়ামী লীগের প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বুড়িচং উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন স্বপন, বুড়িচং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল হাসেম খান, সাধারণ সম্পাদক ও বুড়িচং উপজেলা চেয়ারম্যান আখলাক হায়দার, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর খান চৌধুরী, সহ-সভাপতি মো. শাহজালাল ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল বারী।
এছাড়াও সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় আছেন- কেন্দ্রীয় যুবলীগের সহ-সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি এহতেশামুল হাসান ভূঁইয়া রুমি, এফবিসিসিআই পরিচালক ও কুমিল্লা (উত্তর) জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা হেলেনা জাহাঙ্গীর, সাবেক ছাত্রনেতা ও সোনার বাংলা কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম রেজা সৌরভ, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, ঢাকার আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার সোহরাব খান চৌধুরী, বুড়িচং উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মো. আল আমিন, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুস ছালাম বেগ, ইকরা ফুটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মাহতাব হোসেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দিদার মো. নিজামুল ইসলাম, শিল্পপতি এম এ মতিন, শেখ হাসিনা ফাউন্ডেশনের সভাপতি আবদুল জলিল ও অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী চৌধুরী মানিক।
সিলেট-৩ আসন
দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জের একাংশ নিয়ে গঠিত এ আসনটি। সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর মৃত্যুতে আসনটি শূন্য ঘোষণা হয়। এখানেও সরগরম আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপে। আবার এই আসনটি দখলে নিতে চায় জাতীয় পার্টিও।
এখানে আওয়ামী লীগের অন্তত ২৫ জন প্রার্থী মনোনয়ন পাওয়ার আশা করছেন।
প্রার্থিতা ঘোষণা দিয়ে ভোটের প্রস্তুতি শুরু করেছেন প্রয়াত এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর স্ত্রী ফারজানা সামাদ চৌধুরী। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের পরিচিত নেতা হাবিবুর রহমান হাবিবও নৌকার টিকিট পেতে লড়াইয়ে রয়েছেন। নৌকার জন্য মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। সক্রিয় হয়েছেন বিএমএর কেন্দ্রীয় মহাসচিব ও স্বাস্থ্য বিভাগের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী।
এছাড়াও লন্ডনের ম্যানচেস্টার আওয়ামী লীগ সভাপতি স্যার এনামুল ইসলাম, সিলেট জেলা বারের পিপি অ্যাডভোকেট নিজাম উদ্দিন, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু জাহিদ, রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিক শাহ মুজিবুর রহমান জকন, সাবেক সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট আব্দুর রকিব মন্টুসহ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের অনেক নেতা এ আসনে নির্বাচন করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
লক্ষ্মীপুর-২ আসন
মানবপাচারের দায়ে কুয়েতে সাজাপ্রাপ্ত সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের লক্ষ্মীপুর-২ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর মনোনয়ন চূড়ান্ত রয়েছে। জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন এই আসনে নৌকা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। গত ১৩ মার্চ দলের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের যৌথসভায় তার দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত হয়। গত ১১ এপ্রিল এই আসনে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও মহামারি কোভিড-১৯ এর কারণে তা স্থগিত হয়ে যায়।
যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন।