সন্তান জন্ম দেবার পর যে ৭টি খাবার খেতে ভুলবেন না দুর্বা ডেস্ক :: আপনি শ্বাসের ব্যায়াম করছেন, ডিলেইড কর্ড ক্লাম্পিং (চিকিৎসা প্রক্রিয়া) এর সুবিধা-অসুবিধা হিসাব করছেন, বাচ্চাকে বুকে জড়িয়ে রাখা, ঔষধ, ফরসেপ নিয়ে বিস্তারিতভাবে ৩ পাতার জন্ম পরিকল্পনা লিখছেন। কিন্তু মা হবার পর প্রথম বেলার খাবার নিয়ে কিছু ভেবেছেন? নিশ্চিতভাবে মাতৃত্বের চাহিদাকে আমরা তালিকার সবচেয়ে শেষে রাখি কিন্তু একটি মেয়েকে খেতে হয়। যখন মেয়েটি মা হয় তখন তার রানীর মত খাওয়া উচিত।
খেতে ভালোবাসে এমন ডায়েটিশিয়ান হিসেবে আমি আমার পুরা গর্ভাবস্থায় কেবল ভেবেছি প্রসবোত্তর প্রথম বেলায় আমি কী খাব? আমি নিজেকে কল্পনা করি বিছানায় বসে আছি, বাচ্চাকে দুধ খাওয়াচ্ছি (সুন্দর করে সেজেগুজে), গরুর মাংস, নরম ডিমের কুসুম, সুশি, শ্যাম্পেনের সাগরে ভাসছি।
যাই হোক ব্যাপারটা ঠিক এরকম নয়। আমি যখন ২০ ঘন্টা ক্ষুধার্ত ছিলাম, বমি করছিলাম এবং রক্তক্ষরণ হচ্ছিল, তখন একমাত্র খাবার চিন্তা আমাকে বাঁচিয়ে রাখছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আপনাকে খেতে হবে কারণ জন্মদিন আসলে একটি কঠিন পরিশ্রম। কারও জন্য (ভাগ্যবতী মা হলে) এটা স্প্রিন্ট, অন্যদের জন্য কয়েক দিনের ম্যারাথন।
জন্মদান প্রক্রিয়া প্রচন্ড চাহিদাসম্পন্ন এবং ক্লান্তিকর।
এটি ১ ঘন্টায় প্রায় ১০০ ক্যালরী ক্ষয় করে। ডেলিভারির পরে আমরা যা খাই তা আমাদেরকে পরের কয়েক সপ্তাহে, এমনকি মাসে, বিনিদ্র রাতে, বাচ্চার খেয়াল রাখতে, শরীর সুস্থ করতে এবং স্তন্যদান করতে শক্তি জোগাবে। সুতরাং জন্ম দেওয়ার পর পর এবং স্বাভাবিক খাবারে ফিরে আসার আগে পর্যন্ত মায়েদের কী খাওয়া উচিত সে ব্যাপারে আমার পরামর্শ হলো-
১. মুরগির স্যুপ
মুভিতে বাচ্চার জন্মের সময় মেয়েদের ভেজা দেখা যায়। এর একটি কারণ আছে। আপনি প্রচন্ড ঘেমে যাবেন। অনেক মহিলার ক্ষেত্রে ডেলিভারির পরে ও কয়েক সপ্তাহ ধরে হরমোনের ওঠা নামার কারণে প্রচন্ড ঘাম হওয়া স্বাভাবিক। ডেলিভারি সময় আপনাকে আইভি ফ্লুইড দেওয়া হয় যেন খুদেটি আসার সময় আপনার শরীরের তরল স্তর ঠিক থাকে। বিশেষ করে আপনি যখন স্তন্যদান করছেন। অনুমান করা হয় স্তন্যদানকারী মায়ের এক লিটার বেশি পানিও প্রয়োজন হয় যিনি স্তন্যদান করেন না তার তুলনায়।
আমি মনে করি পানি যথেষ্ট নয়, সে ক্ষেত্রে চিকেন স্যুপ উপযুক্ত প্রসব-পরবর্তী খাদ্য। স্যুপটি স্বাভাবিকভাবে পানি এবং লবণের চাহিদা পূরণ করবে এবং কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ নুডুলস খেতে সাহায্য করবে। হাসপাতালের কাছে ভাল খাবার ব্যবস্থা নেই? আপনার ডেলিভারি ব্যাগে কয়েক কাপ ইনস্ট্যান্ট নুডলস রাখুন এবং ওয়ার্ডে বসেই স্রেফ গরম পানিতে ছেড়ে দিন। এটি বলার অপেক্ষা রাখে না বাড়ি ফেরার পর বাড়িতে তৈরি খাবার সর্বোত্তম। ইনস্ট্যান্ট খাবার নয়।
২. নোনা বিস্কিট
গরম কিছুতে চুমুক দেবার সামান্য চিন্তা ও যদি আপনাকে ঘামিয়ে ছাড়ে তাহলে নোনতা বিস্কুট আপনাকে কার্বোহাইড্রেট সরবরাহ করবে এবং ইলেক্ট্রোলাইট চাহিদা পূরণ করে শক্তি ফিরিয়ে দেবে। সাধারণত গর্ভাবস্থায় বমিভাব কমাবার জন্যও নোনতা বিস্কুট খেতে পরামর্শ দেয়া হয়। মাথা ঘুরালে এটি একটি আদর্শ পছন্দ হতে পারে। আপনার ডেলিভারি ব্যাগে কিছু নোনতা বিস্কুট যোগ করতে পারেন।
৩. খেজুর
প্রাকৃতিক মিষ্টির ব্যাপারে অনেক কিছু বলার আছে যা সহজেই আপনার হাসপাতালে ব্যাগে জায়গা করে নিতে পারে। একটি ছোট গবেষণায় দেখা গেছে ডেলিভারির পর পরই খেজুর খেলে তার রক্তক্ষরণ কমায় অক্সিটোসিন দেয়ার চাইতে (আমি যদি এটা প্রসবের পূর্বে জানতাম!)। প্রসব-পরবর্তী চটজলদি শক্তি প্রদানের জন্য এটি সরল চিনির একটি চমৎকার উৎস। স্তন্যদানের সময় ক্যালোরি এবং শর্করা উচ্চমানের হওয়া প্রয়োজন।
৪. ওটমিল আর ফল
যদি আপনি ভেবে থাকেন জন্মদান ভয়ঙ্কর, তবে প্রসব-পরবর্তী প্রথম রেচন ক্রিয়ার ফলাফল দেখুন। বাস্তবিকই জন্মদানের সময় রক্তক্ষরণজনিত ক্ষয়ক্ষতি খুব সাধারণ। প্রসব পরবর্তী সময়ে ব্যথা কমানোর ঔষধ এবং আয়রন সাপ্লেমেন্ট গুলোর কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য খুব সাধারন পার্শপ্রতিক্রিয়া। আপনার যদি সিজারিয়ান অপারেশন হয়ে থাকে তাহলে অন্ত্রের কার্যাবলী স্বাভাবিক হতে কয়েক সপ্তাহ লেগে যাবে।
এ প্রক্রিয়া সহজ করতে আপনারা আঁশসমৃদ্ধ খাদ্য নির্বাচন করা উচিত। ওটমিল একটি মসৃন নরম শর্করা। কমে যাওয়ার শর্করার মজুদের জন্য এর সাথে কিছু শুষ্ক ফল আরো পুষ্টি যোগ করবে। ওটমিলের আর একটি ইতিবাচক বিষয় হলো এটি স্তন্য বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। গবেষণায় প্রমাণিত না হলেও শর্করা, আয়রন এবং ক্যালরির সংমিশ্রন স্তন্য বৃদ্ধিকারক হিসেবে কাজ করবে। অধিকাংশ হাসপাতালের (বাংলাদেশ নয়) সকালের নাস্তায় ওটমিল থাকে তবুও কয়েকটি প্যাকেট ব্যাগে রেখে দিতে পারেন জরুরি প্রয়োজনে।
৫. শুষ্ক গরুর মাংস
হেমারেজ না হলেও রক্তক্ষরণ স্বাভাবিক, ডেলিভারির পর বেশিরভাগ মহিলার জন্য দিনের পর দিন, কারো কারো জন্য সপ্তাহের পর সপ্তাহ পর্যন্ত। এ কারণে লৌহের ঘাটতি এবং অ্যানিমিয়া অস্বাভাবিক নয় এবং এটি সুস্থ হয়ে উঠতে এবং স্তন্যের সরবরাহে হস্তক্ষেপ করতে পারে। জন্মের পরপরই আপনি যদি বড়োসড়ো স্টেক খেতে না পারেন তবে শুষ্ক গরুর মাংস বিকল্প হতে পারে। প্রতি ২ আউন্স পরিবেশনে আপনি ২.২ মিলিগ্রাম আয়রন পাবেন। সাথে সোডিয়াম ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য রক্ষা করবে। এটি প্রোটিনের ভালো উৎস।
৬. ডিম
আপনার যদি মনে হয় থাকে জিমে পায়ের ব্যায়াম করার পরে আপনার অতিরিক্ত প্রোটিন দরকার তবে সন্তান হবার পর এ সময়ের জন্য অপেক্ষা করুন যখন পর্যাপ্ত বিশ্রামও পাবেন না। জন্মদানের কঠিন প্রক্রিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত মাংসপেশিকে সুস্থ করতে ডিম একটি ভালো আমিষের উৎস। আপনি যদি ফর্টিফাইড ডিম খুঁজে পান তবে সেটা আরো ভালো কেননা সেটি মস্তিষ্ক কার্যক্ষমকারী ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ। গবেষণায় পাওয়া গেছে ওমেগা থ্রি এর ঘাটতি প্রসবপরবর্তী বিষণ্ণতার ঝুঁকি বাড়ায়। ডিম এ ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
দেখুন আপনার হাসপাতালে তৈরি কোন খাবার সরবরাহ করে কিনা, না হলে একটি কুলারে কয়েকটি সেদ্ধ ডিম নিয়ে যান।
আরো পড়ুন: বাঘিয়ায় মুক্তিযোদ্ধার আর্তনাদ!পুলিশকে নিয়ে জমি দখল?ভিডিওসহ
৭. আপেল
বারো ঘন্টা ধরে ক্যান্ডি এবং পপসিকল খাবার পরে দাঁত পরিষ্কার করার জন্য একটা আপেল যদি পেতাম! (যখন ব্রাশ করার জন্য সিংকে যেতে পারছিলাম না)। আপেল খাওয়া অবশ্যই নিয়মিত দাঁত মাজা এবং ফ্লসিং এর বিকল্প নয় তবে এটি ব্রাশ করার মতোই লালার ব্যাকটেরিয়ার হ্রাস করে। একটি আপেল ৪.৪ গ্রাম ফাইবার থাকে এবং এটি হাসপাতালের ব্যাগে নিয়ে যাওয়া খুব সহজ।
এগুলো ঠিক মনমুগ্ধকর খাবার নয় যা আপনি পুরো গর্ভাবস্থায় খাবার স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু অভিজ্ঞতা এবং বিজ্ঞানের ভিত্তিতে খাওয়া-দাওয়া আপনাকে সুস্থ হতে সাহায্য করবে।
যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন।
সন্তান জন্ম দেবার পর যে ৭টি খাবার খেতে ভুলবেন না