বিপাকীয় সমস্যা জন্মগত হলে যা করণীয়

জেনে নিন বিপাকীয় সমস্যা জন্মগত হলে যা করণীয় । আসুন এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক। অনেকেরই বিপাকীয় সমস্যা দেখা দেয়। যাদের দেহে এক বা একাধিক এনজাইমের ঘাটতি রয়েছে, তাদের এ সমস্যা বেশি হয়ে থাকে। এ সমস্যায় প্রোটিন সংশ্লেষ বাধাগ্রস্ত হয়।



বিপাকীয় সমস্যা জন্মগত হলে যা করণীয়

ফলে কোনও দেহবর্জ্য ক্রমশ দেহে জমা হতে থাকে ও পরবর্তী ধাপের উপাদানটি তৈরি করতে ব্যর্থ হয়। ক্ষতিকারক উপাদানের পরিমাণ দেহে বাড়তে থাকে। যেটি একটা সময় বড় বিপদের কারণ হতে পারে।

বিপকায়ীয় সমস্যা জন্মগত হয়ে থাকে। জন্মগত বিপাকীয় সমস্যার ধরন ও প্রতিকার নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যলয়ের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শাহজাদা সেলিম।

প্রধানত জিনের মিউটেশনের কারণে এ সমস্যাটি ঘটে। মিউটেশন জিনের একটি নির্দিষ্ট এনজাইমের নিয়ন্ত্রক অংশটিতে ঘটলে ওই এনজাইম এবং তার কো-এনজাইম বা কো-ফ্যাক্টর কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে; তথ্য প্রবাহকারী প্রোটিন ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং সংবেদনশীল সিস্টেমের কার্যকারিতা ব্যাহত হয়।

পৃথিবীতে কমপক্ষে ৩’শ জন্মগত মেটাবলিক রোগ শনাক্ত হয়েছে। দিনে দিনে আরো এ ধরনের নতুন রোগ শনাক্ত হচ্ছে। এ দলভুক্ত অনেক রোগ শনাক্ত হওয়ার বাইরে রয়েছে। বিভিন্ন দেশের প্রায় ৫ হাজার জীবিত শিশুর মাঝে একজন এ রোগে আক্রান্ত থাকতে পারে। এ দলভুক্ত রোগগুলোর একেকটির প্রাবল্য একেক রকম।

যেমন ফ্যামিলিয়াল হাইপার কোলেস্টেরলেমিয়া প্রতি ৫’শ জীবিত নবজাতকের একজনের থাকতে পারে; ফিনাইল কিটোনরিয়া ১২ হাজারে একজনের থাকতে পারে; অর্গানিক এসিডোইউরিয়া ১৫ হাজারে একজনের থাকতে পারে; গ্লাইকোজেন স্টোরেজ ডিজিজ ৬০ হাজারে একজনের; গ্যালাকটোসেমিয়া ৪৫ হাজারে একজনের; হমোসিস্টোনরিয়া এক লাখে একজন এবং ম্যাপলসিরাপ ইউরিনডিজি দুই লাখ ৯০ হাজার নবজাতকের মাঝে একজনের থাকতে পারে।

এ জিনগত ত্রুটিসমূহ অটোসোমাল রিসেসিভ ট্রেইট হিসাবে পূর্ব পুরুষ থেকে উত্তর পুরুষে বাহিত হয়। কোনও একজনের দেহে এ রোগ থাকলে পরবর্তী চারটি সন্তানের একজনের (২৫ শতাংশ) আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকবে। এ দলভুক্ত কিছু রোগ এক্স-লিঙ্কড্; যেখানে মাতা বাহক, পুরুষদের ৫০ শতাংশ স্বাভাবিক অথবা রোগাক্রান্ত। মাইটোকন্ড্রিয়াল রোগগুলো যাদের আছে তাদের সবকটি (১০০ শতাংশ) সন্তানই এ রোগে আক্রান্ত হবে।

এ রোগকে দুটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়— ক্যাটাগরি ১- এর রোগসমূহে আক্রান্ত ব্যক্তির এনজাইমের কার্যকারিতা ব্যাহত হয়। ক্যাটাগরি ২- এ দলভুক্ত রোগসমূহে মেটাবলিক পাথওয়ে আক্রান্ত হয়। ক্যাটাগরি ২- এর রোগসমূহকে আবার ১, ২, ৩ এভাবে ভাগ করা হয়।

এ রোগগুলোর শারীরিক লক্ষণ নবজাতক শিশু কোনও কোনও ক্ষেত্রে পরিণত বয়সেও দেখা দিতে পারে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে অনির্দিষ্ট বিপাকীয় লক্ষণসমূহ দেখা দিতে পারে।

যেমন- শিশুর খাদ্যগ্রহণে অনীহা, ঘন ঘন বমি হওয়া, পানিশূন্যতা, দুর্বল বোধ করা, মাংশপেশি থলথলে বা শক্তিহীন মনে হওয়া এবং খিচুনি। কোনো কোনো শিশুর শরীরে ইনফেকশনেও এ রকম দেখা দেয়।

এ দলভুক্ত শিশুদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ হলো জীবাণু সংক্রমণ। তবে কিছু কিছু শিশুর তীব্র শ্বাসকষ্ট হতেও দেখা যায়। কিছু কিছু নবজাতক এ রোগগুলোর লক্ষণ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। যদিও ভালোভাবে লক্ষ্য না করলে তা শনাক্ত হতে সময় লাগতে পারে।

এ রোগগুলোকে শনাক্ত করার উদ্দেশ্যে নবজাতকদের স্ক্রিনিং টেস্ট করার কোনো বিকল্প নেই। এতে যাদের রোগ ধরা পড়বে তাদের চিকিৎসা দিতে হবে এবং ভালো ফল সে ক্ষেত্রে আশা করা যেতে পারে।

পরিণত বয়সে বা পরে কোনও একসময় এ রোগগুলো ধরা পড়লে চিকিৎসার পরও ভালো ফল পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে। অনেক ক্ষেত্রে রোগাক্রান্ত সন্তান ধারণকারিণী মায়েরও বেশ কিছু সমস্যা দেখা দেয়। যেমন— ফিনাইল কিটোনরিয়ায় আক্রান্ত মাকে সন্তান গর্ভে ধারণকারী সময়ে খাদ্যাভ্যাসে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আনতে হয়। গ্লাইকোজেন স্টোরেজডিজিজ রোগীদের অসিদ্ধ ভুট্টার শর্করা যথেষ্ট ভালো ফল পাওয়া যায়।

মেটাবলিক ত্রুটি সাপেক্ষে শৈশবে বা কৈশোরে রোগের লক্ষণ দেখা দেয়া নির্ভর করে। যেমন প্রোপাইওনিয়া এসিডেমিয়ায় আক্রান্ত বালকদের মাঝে মাঝেই ২-৩ দিন যাবৎ বমি হতে থাকে, যা খাদ্যগ্রহণে বিরত থাকলেই ঠিক হয়ে যায়।

এ রোগে আক্রান্ত পরিণত বয়সিদের হাত-পা কাঁপে এবং ক্রমশ স্মৃতিশক্তি লোপ পেতে থাকে। যাদের ফ্রুকটোজ জাতীয় খাদ্য হজমে এনজাইমের ত্রুটি থাকবে তারা ফ্রুকটোজ জাতীয় খাবার খেলে মারাত্মক বিপাক জনিত সমস্যায় পড়বেন। এনিমিয়া বিপাক জনিত সমস্যার রোগীরা সবচেয়ে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হন এবং ঘন ঘন আইসিইউতে নিতে হতে পারে।



শৈশব বা কৈশোরে কিছু কিছু রোগের লক্ষণ দেখা দেয়। যেমন- এলক্যাপটোনরিয়ায় আক্রান্তদের বড় বড় জয়েন্টগুলোতে ও মেরুদণ্ডে ব্যথা শুরু হয় তৃতীয় বা চতুর্থ দশকে।

হাইপোগ্লাইসেমিয়া (রক্তে গ্লুকোজ বেশি কমে যাওয়া) পরে যে রোগগুলো সেগুলো সাধারণত শৈশবেই প্রতিভাত হয়। যেসব শিশু-কিশোর অল্প পরিশ্রমে কাতর হয়ে পড়ে, তাদেরও এ দলভুক্ত রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। উইলসনডিজিজ কৈশোরে বা প্রাপ্তবয়সেই দেখা দেয়।

রোগ শনাক্তকরণের উদ্দেশ্যে সুনির্দিষ্ট পরীক্ষা করা হয়, যা রোগীর লক্ষণ, পারিবারিক ইতিহাস ইত্যাদিও ভিত্তিতে নিরূপিত হয়। এ রোগগুলো অনেক সময়ই অগোচরে থেকে যায়, আর যখন তীব্র লক্ষণ দেখা দেয়, তখন রোগ শনাক্তকরণের চেষ্টা করা হয়।

এর মধ্যেই হয়তো অনেকটা অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গিয়ে থাকতে পারে। তাই সম্ভব হলে প্রতিটি শিশুর জন্মগত মেটাবলিক রোগের স্ক্রিনিং করা উচিত। এ রোগগুলোর পরীক্ষাসমূহের মধ্যে রক্ত ও প্রস্রাব পরীক্ষা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

কারও কারও আল্ট্রাসনোগ্রাম, এক্সরে, সিটিস্ক্যান, এমআরআই ও বিশেষ জেনেটিক টেস্ট করা দরকার হতে পারে। টেস্টগুলো বিশেষ ধরনের হলেও বাংলাদেশেই এখন তা সম্ভব। এমনকি সন্তান মায়ের পেটে থাকা অবস্থাতেই স্যাম্পল নিয়ে টেস্ট করা যায়। যতদ্রুত রোগ শনাক্ত করা যাবে, চিকিৎসায় তত ভালো ফল আশা করা যেতে পারে।

যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন। এবং আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে।

এগুলো দেখুন

পেটে গ্যাসের সমস্যায় করণীয় কি? পেটের গ্যাস দূর করার উপায়!

পেটে গ্যাসের সমস্যায় করণীয় কি? পেটের গ্যাস দূর করার উপায়!

আসসালামুয়ালাইকুম অনেক রোগীই আমাদের কাছে আসেন পেটের সমস্যা নিয়ে পেট ফেঁপে থাকে ফুলে থাকে পেটে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *