শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের পদ্ধতি জানা থাকলে, শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করে লাভবান হওয়া সম্ভব। আজকাল অনেকেই বিভিন্ন ব্যবসার দিকে ঝুঁকে পড়ছেন। ব্যবসা কথাটি আসলে, তার সঙ্গে আসে মুনাফার চিন্তা। সঠিক ব্যবসায় পুঁজি খাটিয়ে বা বিনিয়োগ করে, একটি ভালো মুনাফা সবাই অর্জন করতে চায়।
সেক্ষেত্রে বিনিয়োগ করার জন্য, শেয়ার বাজার হতে পারে একটি চমৎকার বিনিয়োগ ব্যবস্থা। এই ব্যবসায় অল্প পুঁজি বিনিয়োগ করেই লাভ করা যায়। তবে, যে কোন ব্যবসায়ই লাভ ক্ষতি দুটোই থাকে।
- আরো পড়ুন: বিজনেস লোন পাওয়ার নিময়
- আরো পড়ুন: বিকাশ থেকে লোন পাবেন যেভাবে
- আরো পড়ুন: বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম
শেয়ার বাজারে ব্যবসাও তার ব্যতিক্রম নয়। তাই, বিনিয়োগ করার পূর্বে অবশ্যই এ বিষয় সম্পর্কে ভালো জ্ঞান থাকা দরকার। আজ আমরা শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের পদ্ধতি সম্পর্কে কিছু তথ্য জানবো। চলুন জেনে নেই, শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের পদ্ধতি।
শেয়ার বাজার কি?
শেয়ার বাজারের শেয়ার হচ্ছে কোন কোম্পানির মালিকানার কিছু অংশ। এই অংশ কম বেশি হতে পারে। একটি কোম্পানি তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আয় বাড়ানোর জন্য তার ব্যবসাকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে থাকে এবং সেগুলো বিক্রি করে থাকে।
এই ভাগগুলোই কোনো ব্যক্তি বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান ক্রয় করে থাকেন। যে যতটুকু অংশ ক্রয় করে থাকে তাকে ততটুকু অংশের মালিক বলা হয়ে থাকে। এই মালিকানা অনুপাতে শেয়ার হোল্ডাররা সেই কোম্পানির লাভ বা ক্ষতির অংশ পেয়ে থাকেন।
শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের জন্য কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। কিছু কিছু বিষয়ে মৌলিক জ্ঞান থাকতে হবে। একেবারে কোন কিছু না জেনেই শেয়ার ব্যবসায় নামা উচিত না।
বিনিয়োগ করার পূর্বে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খেয়াল করতে হবে। শেয়ার বাজারের বর্তমান অবস্থা খেয়াল করতে হবে। যে সেক্টরে বিনিয়োগ করা হবে তার বিগত বছরের কার্যক্রম খেয়াল করতে হবে। এছাড়াও, বিভিন্ন ক্যাটাগরির স্টক সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। নিয়মিত স্টক এক্সচেঞ্জের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট চেক করতে হবে।
একাউন্ট খোলা
শেয়ার বাজারে ব্যবসা করতে চাইলে প্রথমেই একজন ব্যক্তি কে বিও ( Beneficiary Owner’s ) একাউন্ট খুলতে হবে। এই একাউন্টটি ব্যাংক একাউন্ট এর মতো। এটি খুলতে হবে ব্রোকার হাউজে।
ব্রোকার হাউজ: ব্রোকার হাউজ হলো কিছু লাইসেন্স প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান যারা শেয়ার বাজারে সাধারন বিনিয়োগকারীদের জন্য কাজ করে থাকেন। কারন শেয়ার বাজারে সরাসরি শেয়ার কেনা বেচা করা যায়না। এজন্য ব্রোকার দরকার হয়। নির্দিষ্ট সময়ে ব্রোকারদের ব্রোকারেজ চার্জ দিতে হয়।
ব্রোকার হাউজে একাউন্ট খোলার পর সেখান থেকে একটা ব্রোকার নাম্বার ও বিও একাউন্ট নাম্বার দিবে। এই ব্রোকার নাম্বার ও একাউন্ট নাম্বার দিয়েই শেয়ার কেনা বেচা হয়ে থাকে। বিনিয়োগকারী তখন প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি উভয় শেয়ারই ক্রয় করতে পারবেন। একাউন্ট একক হতে পারে আবার যৌথ একাউন্ট ও হতে পারে।
শেয়ার সাধারনত ২ ধরনের হয়ে থাকে। যথা:
- প্রাইমারি শেয়ার
- সেকেন্ডারি শেয়ার
প্রাইমারি শেয়ারে কোন লস থাকে না। তবে সেকেন্ডারি শেয়ারে রিস্ক থাকে।
শেয়ার বাজারে লাভ করার উপায়
মূলত নিচের টিপসগুলো শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের পদ্ধতি এর অন্যতম কৌশল। তাই, যারা শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের পদ্ধতি জানতে চাচ্ছেন তারা প্রথমে নিচের টিপসগুলো মাথায় রাখুন।
১. ধার বা লোন মুক্ত থাকা
শেয়ার বাজারে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে সব সময় ধার বা লোন মুক্ত থাকতে হবে। কোন অবস্থাতেই ধার করে, বিনিয়োগ করা যাবে না। শেয়ার বাজারে যেসব প্রতিষ্ঠান ধার বা লোন দিয়ে থাকেন তাদের সুদের হার খুব বেশি থাকে।
বছর শেষে এই সুদের হার পরিশোধ করে তার থেকে নিজের লাভ বের করা খুব কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে পড়ে। জীবনে সুখী হওয়ার ৭ টি উপায় এর মধ্যে এটি একটি।
২. এক কোম্পানিতে বিনিয়োগ নয়
শেয়ার ব্যবসা করার ক্ষেত্রে কোন একটি কোম্পানিতে সব বিনিয়োগ করা উচিত নয়। খুব ভালো কোম্পানি দেখে বিনিয়োগ করলেও সেক্ষেত্রে কিছু ভয়ের আশঙ্কা থেকে যায়। কারণ ব্যবসায় লাভ ক্ষতি থাকেই।
তাই, কোনো কারণে সেই কোম্পানির শেয়ারের মূল্যপতন হলে তখন বিনিয়োগকারীর ক্ষতি বেশি হয়ে থাকে। তাই একসঙ্গে অল্প অল্প করে কয়েকটি কোম্পানি থেকে শেয়ার ক্রয় করলে তাতে লোকসানের সম্ভাবনা কম থাকে।
৩. ভালো কোম্পানি বাছাই করা
বিনিয়োগ করার পূর্বে ভালো কোম্পানি বাছাই করতে হবে। কোম্পানিটি কোন ক্যাটাগরিতে আছে সে দিকে নজর দিতে হবে।
শেয়ার বাজারে কোম্পানি গুলোর সাধারনত ৪ টি ক্যাটাগরি রয়েছে। যথা:
- কিছু কোম্পানি প্রতি বছর ১০ শতাংশ এর কম লাভ দিয়ে থাকে।
- কিছু কোম্পানি ১০ শতাংশ বা এর কিছু বেশি লাভ দিয়ে থাকে।
- আবার কিছু কোম্পানি ১ বছর পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের কোনো লাভ দেয় না।
তাই বিনিয়োগ করার পূর্বে শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো ব্যবসা যারা করছে তাদের খাতে বিনিয়োগ করতে হবে। তবে অনেক সময়ই ভালো কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা সম্ভব হয় না।
তখন নিজের পছন্দমত একটি কোম্পানি বাছাই করে সেখানে বিনিয়োগ করা যেতে পারে। বিনিয়োগ করার পূর্বে কোম্পানির গত কয়েক বছরের বিক্রয় ও মুনাফার প্রবৃদ্ধি সম্পর্কে একটি ধারণা নেওয়া যেতে পারে। তবে, একটি কোম্পানির বিবরনে অনেক তথ্য থাকে তাই অনেক সময় সব কিছু বুঝা যায় না। সেক্ষেত্রে একটি কোম্পানির ইপিএস সম্পর্কে জানতে পারলে সমাধান সম্ভব।
একটি কোম্পানি সব খরচ বাদ দিয়ে যে পরিমান মুনাফা অর্জন করে থাকে তার ভিত্তিতে সেই কোম্পানির ইপিএস হিসাব করা হয়ে থাকে। ইপিএস বাড়লে শেয়ারের দাম বাড়ে, ইপিএস কমলে শেয়ারের দাম কমে। সহজ ভাবে বললে ইপিএস ভালো হলে সেই কোম্পানির ব্যবসা ভালো আর ইপিএস খারাপ মানে সেই কোম্পানির ব্যবসা খারাপ।
৪. দৈনন্দিন লেনদেনের মানসিকতা পরিহার
শেয়ার বাজার ব্যবসা একটি দীর্ঘমেয়াদি ব্যবসা। এতে বিনিয়োগ করে সঙ্গে সঙ্গেই লাভ হয়ে যাবে এরকম ধারনা করা যাবে না। প্রতিটি ব্যবসায়ই লাভ ক্ষতি থাকে। অনেকে ব্যবসায় বিনিয়োগ করার পরের দিন থেকেই লাভ খুঁজে থাকে।
- আরো পড়ুন: জীবনে সম্ভাবনা এবং বিপদ একসাথে চলে
- আরো পড়ুন: মুনাফা কমেছে ব্যাংকে টাকা রাখবেন কোথায়?
- আরো পড়ুন: দীর্ঘদিন সফলতার সাথে চাকরী করার কৌশল
এতে করে সাময়িকভাবে অনেকে ভালো মুনাফা অর্জন করলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই লোকসান হয়ে থাকে। অনেক সময় নতুন শেয়ার বিনিয়োগকারীরা অধিক মুনাফা অর্জন করার জন্য যে শেয়ারের দাম যখন বাড়ে তখন সেই শেয়ার কিনতে আগ্রহী হয়ে পড়ে। এই রকম ছোটাছুটি করে দেখা যায় বছর শেষে লাভ এর চেয়ে ক্ষতি বেশি হয়। সময় দিয়ে ধীরে ধীরে বুদ্ধি খাটিয়ে বিনিয়োগ করলে দেখা যাবে এই ব্যবসায় মুনাফা প্রচুর।
সব ব্যবসায়ই লাভ লোকসান রয়েছে। এই ব্যবসায় ও আছে। যখন কোনো কোম্পানি লস করে বা কোনো দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত হয় বা দেউলিয়া হয়ে যায় তখন সেই শেয়ারের দাম ক্রমাগত কমতে থাকে। তবে লস হলেও বেচা কেনা বন্ধ করা যাবে না। মনোবল হারানো যাবেনা। বুঝে শুনে বিনিয়োগ করলে শেয়ারের দাম যতই কমুক না কেন বছর শেষে একটি নির্দিষ্ট মুনাফা কোম্পানি সেই শেয়ার হোল্ডারদের দিয়ে থাকে।
যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন। এবং আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে।