জেনে নিন ঝগড়া মিটিয়ে দিলেই রহমত নাজিল হয়। আসুন এ বিষয়ে কোরআনে কি বলা হয়েছে, সে সম্পর্কে আলোচনা করে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক। মুসলমান পরস্পর ভাই ভাই। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দুনিয়াতে পরস্পর ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করেছেন। মুসলিমদের প্রতি পারস্পরিক সুসম্পর্ক রাখা এবং কেউ বিবাদে জড়িয়ে পড়লে মীমাংসা করে দেওয়ার নির্দেশনা এসেছে কোরআন এবং সুন্নায়। কল্যাণের এ কাজে অংশগ্রহণ করলেই আল্লাহ রহমত নাজিল করেন। আল্লাহ তাআলা এ বিষয়টি এভাবে ঘোষণা করেন-
اِنَّمَا الۡمُؤۡمِنُوۡنَ اِخۡوَۃٌ فَاَصۡلِحُوۡا بَیۡنَ اَخَوَیۡکُمۡ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ لَعَلَّکُمۡ تُرۡحَمُوۡنَ
‘নিশ্চয়ই মুমিনগণ তো পরস্পর ভাই ভাই; কাজেই তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে আপোষ মীমাংসা করে দাও। আর আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করো, যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও।’ (সুরা হুজরাত : আয়াত ১০)
- আরো পড়ুন: মায়ের সাথে সদ্ব্যবহারের ফজিলত
- আরো পড়ুন: তাওবাহ দেরিতে করলে কি আল্লাহ ক্ষমা করবেন?
- আরো পড়ুন: নবিজীর (সা.) যেসব শারীরিক পরিশ্রম ও ব্যায়াম সুন্নাত
আয়াতটি দুনিয়ার সব মুসলিমকে এক বিশ্বজনীন ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করে। দুনিয়ার অন্য কোনো আদর্শ, মত ও পথের অনুসারীদের মধ্যে মুসলমানদের মতো এমন ভ্রাতৃত্বের বন্ধন পাওয়া যায় না। এটাও এ আয়াতের বরকতে সাধিত হয়েছে। প্রত্যেক মুসলমানের কল্যাণ কামনা করা নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাত। এ সম্পর্কে হাদিসে পাকে সুস্পষ্ট ঘোষণা রয়েছে।
ঝগড়া মিটিয়ে দিলেই রহমত নাজিল হয়
হজরত জারির ইবন আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার থেকে তিনটি বিষয়ে বাইআত নিয়েছেন। তাহলো-
১. নামাজ প্রতিষ্ঠা করার।
২. জাকাত আদায় করার এবং
৩. প্রত্যেক মুসলমানের কল্যাণ কামনা করার।’ (বুখারি)
এক মুসলমান অন্য মুসলমানের সাথে ঝগড়া-বিবাদ নয় বরং পরস্পর একে অপরের কল্যাণ কামনা করবে। ঝগড়া মিটিয়ে দেবে। হাদিসের একাধিক নির্দেশনায় তা ফুটে ওঠেছে-
১. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মুসলিমকে গালি দেওয়া ফাসেকি এবং তার সাথে লড়াই করা কুফরি।’ (বুখারি, মুসলিম)
২. নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন, ‘প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অপর মুসলমানের জান, মাল ও ইজ্জত (ক্ষতি করা) হারাম।’ (মুসলিম, তিরমিজি)
কেন তা হারাম এ কথাই এসেছে উল্লেখিত কোরআনের নির্দেশনায়। কেননা সব মুসলমান পরস্পর ভাই ভাই। আর ভাই হয়ে কেউ অন্য ভাইয়ের ক্ষতি করতে পারে না। হাদিসে পাকে আরও এসেছে-
৩. নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন, ‘এক মুসলমান আরেক মুসলমানের ভাই। সে তার ওপরে জুলুম করে না, তাকে সহযোগিতা করা পরিত্যাগ করে না এবং তাকে লাঞ্ছিত ও হেয় করে না। কোনো ব্যক্তির জন্য তার কোনো মুসলিম ভাইকে হেয় ও ক্ষুদ্র জ্ঞান করার মত অপকৰ্ম (খারাপ কাজ) আর নেই।’ (মুসনাদে আহমাদ)
৪. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন, ‘ঈমানদারদের সঙ্গে একজন ঈমানদারের সম্পর্ক ঠিক তেমন যেমন দেহের সাথে মাথার সম্পর্ক। সে ঈমানদারদের প্রতিটি দুঃখ-কষ্ট ঠিক এভাবে অনুভব করে, যেমন মাথা দেহের প্রতিটি অংশের ব্যথা অনুভব করে।’ (মুসনাদে আহমাদ)
৫. নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘পারস্পরিক ভালবাসা, সুসম্পর্ক এবং একে অপরের দয়ামায়া ও স্নেহের ব্যাপারে মুমিনগণ একটি দেহের মত। দেহের যে অঙ্গেই কষ্ট হোক না কেন তাতে গোটা দেহে জ্বর ও অনিদ্রায় ভুগতে থাকে।’ (বুখারি, মুসলিম)
৬. নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মুমিনগণ পরস্পরের জন্য একই প্রাচীরের ইটের মত একে অপরের থেকে শক্তিলাভ করে থাকে।’ (বুখারি, মুসলিম)
৭. অন্য এক বর্ণনায় নবিজী বলেছেন, ‘একজন মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই, সে তার উপর অত্যাচার করতে পারে না আবার তাকে ধ্বংসের মুখেও ঠেলে দিতে পারে না।’ (বুখারি, মুসলিম)
৮. নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা ততক্ষণ বান্দার সহযোগিতায় থাকেন যতক্ষণ বান্দা তার ভাইয়ের সহযোগিতায় থাকে।’ (মুসলিম)
৯. হাদিসের অন্য বর্ণনায় আরো এসেছে, ‘কোনো মুসলিম যখন তার ভাইয়ের জন্য তার অনুপস্থিতিতে দোয়া করে তখন ফেরেশতা বলে- ‘আমিন’ (কবুল কর)। আর তোমার জন্যও তদ্রূপ হোক।’ (মুসলিম)
- আরো পড়ুন: কোরআন এবং সুন্নাহর মানদণ্ডে শবে বরাত
- আরো পড়ুন: যেসব আমলে রমজানে বেশি ফজিলত
- আরো পড়ুন: শবেবরাতের রাতে নামাজরত মুসল্লির মৃত্যু
মনে রাখতে হবে
কোরআনের নির্দেশনা ও হাদিসের গুরুত্বারোপ থেকেই প্রমাণিত যে, মুসলিম উম্মাহ এক দেহ এক প্রাণ। যারা পরস্পরের সঙ্গে সুসম্পর্ক ও কল্যাণ কামনা করবে তারা মুক্তি পাবে। তাদের কোনো সমস্যা পরস্পর এগিয়ে গেলেই মিলবে আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত তথা অনুগ্রহ।
মুমিনরা যখন পরস্পর ভাই ভাই, তখন তাদের সবার মূল বস্তু হলো ঈমান। অতএব ঈমানের দাবি হলো- একই ধর্মের উপর বিশ্বাস স্থাপনকারীরা যেন ঝগড়া-বিবাদ, মারামারি না করে। বরং পরস্পর মিল-মহব্বতের সাথে পরস্পরের কল্যাণ কামনা করে। এক সাথে সুন্দর সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলে।
সুখে-দুঃখে একে অপরের সঙ্গে চলবে। পরস্পরকে ভালবেসে এবং একে অপরের হিতাকাঙ্ক্ষী ও কল্যাণকামী হবে। কখনও ভুল বুঝাবুঝির মুখোমুখি হবে না। কেউ ভুল বুঝাবুঝির মুখোমুখি হলে একে অপরের মধ্যে সমঝোতা বা মীমাংসা করে দেবে। আর তাতেই নাজিল হবে রহমত তথা অনুগ্রহ।
মুসলিম উম্মাহ সব বিষয়ে মহান আল্লাহকে ভয় করবে। সুখী সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়ে তোলবে। কোরআন সুন্নাহর উপর যথাযথ আমল করবে। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার তাওফিক দান করুন। কোরআন-সুন্নাহর উপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে।