জেনে নিন দাঁত কিড়মিড় কেন ক্ষতিকর । আসুন এ বিষয়ে আজকে আলোচনা করে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক। দাঁত কিড়মিড় একটি জটিল সমস্যা। অনেকেই ঘুম থেকে জাগেন মাথাব্যথা, চোয়ালব্যথা, ঘাড়ব্যথা কিংবা কোমরে ব্যথা নিয়ে। তারা ভাবেন এর কারণ হয়তো বিছানার তোশক ভালো ছিল না কিংবা অন্য কিছু।
ফলে ঘুম থেকে ওঠার পর তরতাজা তো মনে হয়ই না; বরং শরীরে কেমন যেন ম্যাজম্যাজ ভাব করে। অথচ ঘুমের মধ্যে দাঁত কড়কড় করে শব্দ করার কারণেই এমনটি হয়েছে। দাঁত কিড়মিড় কেন ক্ষতিকর এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন নিউ সাউথ রোড হসপিটালের ডা. চৌধুরী সাইফুল আলম বেগ।
- আরো পড়ুন: কফি খাবেন তবে দাঁতে দাগ হবে না যে পদ্ধতিতে
- আরো পড়ুন: প্রাচীন ভেষজ উপায় দূর হবে দাঁতের হলদে ছোপ
- আরো পড়ুন: দাঁতে পোকা বলতে কিছু নেই
বেশিরভাগ মানুষেরই দাঁতে দাঁত ঘষার অভ্যাস থাকে। অনিয়মিত দাঁত কিড়মিড় করাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ব্রুক্সিসম বলে। ফলে তেমন কোনো ক্ষতি হয় না। কিন্তু দাঁতে দাঁত ঘর্ষণের বিষয়টি নিয়মিত হলে দাঁতের ক্ষতি হয় এবং মুখের স্বাস্থ্যের জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। বড়দের তুলনায় ছোটদের এটি বেশি হয়ে থাকে।
কেন আমাদের দাঁতে দাঁত ঘর্ষণ হয়
মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তার কারণে হয়ে থাকে দাঁত কিড়মিড় করার সমস্যাটি। এটি প্রায়ই ঘুমের সময় হয় এবং অস্বাভাবিক কামড়, অনুপস্থিত বা বাঁকা দাঁতের কারণে হয়। নিদ্রাহীনতার মতো ঘুমের সমস্যার কারণেও হতে পারে।
দাঁত কিড়মিড় কেন ক্ষতিকর
যেহেতু দাঁত কিড়মিড় করার সমস্যাটি বেশিরভাগ সময়ই ঘুমে থাকাকালীন হয়, তাই বেশিরভাগ মানুষই এ সম্পর্কে জানেন না। যদিও নিস্তেজ ও নিয়মিত মাথাব্যথা অথবা চোয়ালে ব্যথা হওয়া ব্রুক্সিসম হওয়ার লক্ষণ।
দাঁত কিড়মিড় করা ক্ষতিকর কেন
কিছু ক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী দাঁতের পিষণ দাঁত ভেঙে গেলে বা পড়ে গেলে হয়। দীর্ঘস্থায়ী দাঁত ঘর্ষণের ফলে দাঁত ক্ষয় হয়। ফলে দাঁতে ব্রিজ, ক্রাউন, রুট ক্যানাল, ইমপ্লান্ট, পারশিয়াল ডেঞ্চার এমনকি সম্পূর্ণ ডেঞ্চারও করতে হতে পারে। দাঁত কিড়মিড় করার ফলে শুধু দাঁতেরই ক্ষতি হয় না বরং মাড়িরও ক্ষতি হতে পারে।
দাঁত কিড়মিড় করা বন্ধ করার উপায়
ঘুমের সময় মাউথ গার্ড ব্যবহার করলে দাঁত কিড়মিড় করার সমস্যা থেকে মুক্ত হতে পারেন। এজন্য দন্ত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। স্ট্রেস মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করুন। ঘুমের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করুন। এ ছাড়া চকলেট, কফি এবং কোকা কোলার মতো ক্যাফেইনসমৃদ্ধ পানীয় এড়িয়ে চলুন।
১. অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন।
২. খাবার ছাড়া অন্য কিছু কামড়ানোর অভ্যাস থাকলে তা পরিত্যাগ করুন। চুইংগাম এড়িয়ে চলুন।
৩. দিনেরবেলায় যদি দাঁত পেষার সমস্যাটি লক্ষ করেন, তা হলে দুই পাটি দাঁতের মাঝে জিভ রাখুন। এভাবে অনুশীলন করলে চোয়ালের পেশি রিলাক্স হবে।
৪. রাতে মাড়ির পেশিকে রিলাক্স রাখার জন্য কানের লতির সামনের অংশে উষ্ণ কাপড় রাখুন।
- আরো পড়ুন: বয়স্ক নারীদের গুরুত্বপূর্ণ ৫ খাবার
- আরো পড়ুন: প্রথম সন্তানের পর জন্মনিয়ন্ত্রণে কোন পদ্ধতি কার্যকর
- আরো পড়ুন: স্লিপ অ্যাপনিয়া বুঝবেন যেসব লক্ষণে, কী করবেন?
শিশুদের ক্ষেত্রে
আনুমানিক ১৫ থেকে ৩৩ শতাংশ শিশুর দাঁত কিড়মিড় করার সমস্যা হয়ে থাকে। শিশুদের ক্ষেত্রে ২ টি সময়ে হয়ে থাকে এ সমস্যা, তাদের দুধ দাঁত ওঠার সময় এবং স্থায়ী দাঁত ওঠার সময়। এ ২ সেট দাঁত পুরোপুরি ওঠার পর বেশিরভাগ শিশুরই দাঁত কিড়মিড় করার অভ্যাসটি দূর হয়ে যায়।
শিশুদের ক্ষেত্রে রাতের বেলায় দাঁত কিড়মিড় করার সমস্যাটি হতে দেখা যায়। এর সঠিক কারণ জানা যায়নি। হতে পারে অনিয়মিত দাঁতের সারি অথবা ওপরের ও নিচের পাটির দাঁতের অসংযোগ, অসুস্থতা, অন্য কারণ যেমন- পুষ্টির ঘাটতি, পিনওয়ার্ম, অ্যালার্জি, এন্ডোক্রাইন গ্রন্থির সমস্যা এবং মানসিক কারণ যেমন- দুশ্চিন্তা ও স্ট্রেসের কারণে।
শিশুর দাঁত কিড়মিড় করার কারণে সমস্যা হওয়া বিরল। নিয়মিত দাঁত কিড়মিড় করার ফলে চোয়ালে ব্যথা, মাথাব্যথা, TMD ইত্যাদি হতে পারে। যদি আপনার সন্তান দাঁত ব্যথার কথা বলে তা হলে তাকে ডেন্টিস্টের কাছে নিয়ে যান। এ ছাড়া—
১. শিশুর স্ট্রেস কমানোর চেষ্টা করুন, বিশেষ করে ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে।
২. পেশিকে শিথিল করার জন্য ম্যাসাজ ও স্ট্রেচিং করান।
৩. পর্যাপ্ত পানি পান করান। ডিহাইড্রেশনের কারণেও দাঁতে দাঁত ঘষার প্রবণতা হতে পারে।
যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে।