বয়ঃসন্ধিকালে সন্তানের বন্ধু হয়ে ওঠা সবচেয়ে জরুরি

বয়ঃসন্ধিকালে সন্তানের বন্ধু হয়ে ওঠা সবচেয়ে জরুরি দুর্বা ডেস্ক :: বয়ঃসন্ধিকাল লাইফের সবচেয়ে স্পর্শকাতর সময়। ছোটবেলায় শুনতাম মা খালারা বলতো এটা বিপজ্জনক বয়স। এই কথায় যুক্তি আছে। বয়ঃসন্ধিকালের উপর অনেক ক্ষেত্রে সারাজীবন নির্ভর করে। মাঝে মধ্যে বয়ঃসন্ধির কোনো ভুল সিদ্ধান্তর বোঝা বয়ে বেড়াতে হয় সারাজীবন। বয়ঃসন্ধিকাল থেকে ধীরে ধীরে মানসিক পরিপক্কতাও আসা শুরু হয়। জন্মের পর থেকে একটা নিদিষ্ট সময় পর্যন্ত আমরা মা বাবা থেকে শিখি। তারপর ধীরে ধীরে যখন বড় হই চারপাশ দ্বারা আমাদের মন মানসিকতা, চিন্তাভাবনা প্রভাবিত হয়। আর বয়ঃসন্ধিকাল হচ্ছে সেই সময় যে সময় কিশোর কিশোরীরা যেকোনো ব্যাপারে প্রভাবিত হয়ে যায় খুব বেশি।

হোক তা ভালো বা মন্দ। সেজন্যই সচেতন এবং সাবধান থাকাটা জরুরি। বয়ঃসন্ধিকালে যদি আপনি আপনার সন্তানের ভালো বন্ধু হতে পারেন তার বিপদের আশংকা অনেকাংশে কম। বেশিরভাগ সময় দেখা যায় এই বয়সটাতে কিশোর কিশোরীরা বন্ধুবান্ধব দ্বারা প্রভাবিত হয় প্রচুর এবং সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয় বন্ধুদেরই। সেজন্য খেয়াল রাখা উচিত আপনার সন্তানের বন্ধু কারা। আর আপনার সন্তানের বন্ধু কে, কার সাথে সে মিশছে এটা জানতে হলে আপনার হয়ে উঠতে হবে আপনার সন্তানের বন্ধু। এই বয়সে আবেগ খুব বেশি থাকে। এই আবেগটাই বিপদের কারণ হয়। যদি বুঝতে পারেন সন্তান বিপথগামী হচ্ছে, তখন কি করবেন?

এই সময় মানসিক অবস্থা অনেক সেনসিটিভ থাকে। যার ফলে গুরুজনের সদুপদেশও খুব বিরক্ত লাগে। ভালোমন্দ বোঝাতে গেলে তারা আপনার কথা আমলেই নেবেনা, উল্টো বিরক্ত হবে। কিন্তু কথা তো বলতে হবে, তাদেরকে সর্তক তো করতে হবে। সেটা কিভাবে? যেভাবেই হোক, উপদেশের বা ধমকের সুরে না। ঠিক তেমনভাবে যেমন দৈনন্দিনের ৮-১০ টা কথা বলেন, সেভাবে বলুন। তাকে ফিল করতে দেয়া যাবে না কোনোভাবে আপনি তাকে উপদেশ দিচ্ছেন।

যারা ড্রাগ অ্যাডিক্টেড থাকে খোঁজ নিয়ে দেখবেন এদের বেশিরভাগই মাদকাসক্ত হয়েছে বয়ঃসন্ধিকালের সময়টাতে। হয়তো কৌতুহলবশত কিংবা মানসিক অশান্তি থেকে। পরে সেই আসক্তি আর ছাড়ানো যায়নি। ভায়োলেন্ট হয়ে দূর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছে।

এমন একটা ঘটনা কিন্তু ২০১৩ সালে আমরা দেখেছিলাম। ঐশী নামের ইয়াবা আসক্ত একটি মেয়ে তার মা বাবাকে খুন করেছিল। মেয়েটা কিন্তু বয়ঃসন্ধির কিশোরী ছিল। আমরা কখনোই চাইনা এ ধরনের ঘটনা আবার হোক। সুতরাং চোখ কান খোলা রাখতে হবে। নজরে রাখতে হবে এমনভাবে যেন তারা টের না পায়। আপনি তাকে নজরে রাখছেন টের পেলেই তারা লুকানোর চেষ্টা করবে বেশি।

এই বয়সটায় কৌতুহল অনেক বেড়ে যায়। এই কৌতুহল থেকে অনেক কিছু জানতে ছেলে মেয়েরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়। যা পরে তার জীবনের কাল হয়ে দাঁড়ায়।যৌ’নতা, মাদক এই বয়সের একটা কমন কৌতুহল। অনেকে কৌতুহল থেকেই নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। আর যৌ’নতা ইত্যাদি নিয়ে আগ্রহের কারণ মা বাবার সন্তানের সাথে এসব ব্যাপারে খোলাখুলিভাবে কথা না বলা। মা বাবার সাথে যখন এ ব্যাপারে খোলাখুলি কথা না বলতে পারে তখন নিজে থেকে অনেক কিছু জানার চেষ্টা করে ইন্টারনেট বা অন্য কোনো মাধ্যমে।

আর এইভাবে জিনিসটা বিকৃতভাবে তাদের সামনে আসে। কৌতুহলবশত প’র্নগ্রাফি দেখে তাতে আসক্ত হয়ে যায় এবং একটা ভুল ধারনা জন্মায় সে’ক্স বিষয়ে। এই ব্যাপারটা যে কতটা ভয়াবহ আকার ধারন করতে পারে সেটা সহজেই বুঝতে পারবেন যখন দেখবেন কিশোর কতৃক ধ’র্ষণের ঘটনাগুলো। সেজন্য সন্তানের সাথে সব বিষয়ে আগে থেকেই খোলাখুলি আলোচনা করুন যাতে তারা নিজে থেকে আবিষ্কার করতে গিয়ে ভুলটা শিখে ভুল পথে পা না বাড়ায়।

আবেগ বেশি থাকার কারণে তারা ছোটখাটো ব্যাপারে অনেক কষ্ট পায় যেটা আপাতদৃষ্টিতে আপনার কাছে বোকামি মনে হলেও তাদের কাছে তা না। খুব তুচ্ছ একটা ব্যাপারে সে খুব কষ্ট পেল রিঅ্যাক্ট করল, আপনি পাত্তা দিলেন না, গুরুত্ব দিলেন না বরং তাচ্ছিল্য করলেন- এই কাজটা কখনোই করবেন না। তার কথা মন দিয়ে শুনুন।

আপনি বুঝতে পারছেন ব্যাপারটা আহামরি কিছুই না। কিন্তু আপনার এটাও বুঝতে হবে আপনার সন্তানের কাছে ব্যাপার গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং ধমক না দিয়ে সমব্যথী হোন, সুন্দরভাবে বোঝান।বড় হওয়ার পর সে নিজেই বুঝবে তার মন খারাপের কারণগুলো কত তুচ্ছ ছিল। কিন্তু সেই মুহুর্তে যদি আপনি নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দিয়ে ফেলেন আবেগের বশে সে ক্ষতিকারক কিছু করে ফেলতে পারে।

এই বয়সে সন্তানরা কিছুটা বেপরোয়া ধরনের হয়ে যায়, কথা শুনতে চায়না। নিজের মন মতো চলতে চায় এবং নিজের সিদ্ধান্তকেই বেস্ট মনে করে। আপনি যদি বকা মার দিয়ে তাকে বুঝাতে চান বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হিতে বিপরীত হবে। আরো বেপরোয়া হয়ে যাবে কিংবা আপনার চাপে যদি সে ঠান্ডাও থাকে সুযোগ পেলে এমন কিছু করে ফেলবে যা আপনি কখনো আশাও করেন নি। গুড প্যারেন্টিং এই সময়টাতে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

এই বয়সে ছেলেমেয়েরা প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে সহজেই। প্রেমকে যদি শুরু থেকেই নিষিদ্ধ হিসেবে ঘোষণা দিয়ে দেন তারা লুকিয়ে প্রেমের সর্ম্পকে জড়িয়ে বিপদেও পড়ে যেতে পারে কারণ এই সময়টাতে ভালোমন্দ জাজ করার মত মানসিকতা তৈরী হয়না বরং আবেগ কাজ করে বেশি। আপনার অবগত থাকা উচিত আপনার সন্তান কাকে পছন্দ করছে, কার সাথে সর্ম্পকে আছে সে ক্ষতিকর বা বিপজ্জনক কিনা আপনার সন্তানের জন্য। শুধু একটা ফ্রেন্ডলি প্যারেন্টস এর অভাবে কত ছেলেমেয়ে টিন এজে কতটা সাফার করেছে আমার নিজের দেখা এবং একসময় আমি নিজেও এর ভুক্তভোগী ছিলাম।

আবার মা বাবার অতি শাসনে সুযোগ পেলে দড়ি ছিড়ে একেবারে ধংস হয়ে যেতেও দেখেছি।

আবার অনেক সময় অনেক মা বাবা সন্তানদের অতিরিক্ত সাপোর্ট করতে গিয়ে তাদের সিদ্ধান্ত যাচাই না করে তাদের পাশে থেকেছে। এটাও কিন্তু ঠিক না।মোবাইল, ল্যাপটপ ইউজ করতে দেবেন অবশ্যই কিন্তু কীভাবে ইউজ করছে, কী দেখছে, ক্ষতিকর কিনা সেটাও খেয়াল রাখতে হবে। সন্তান যেখানে যায় যাই করে সেটা যাচাই করে নিতে হবে, সন্তানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তার প্রতি সাপোর্টিভ হোন।

বয়ঃসন্ধিতে আসার আগেই তার মানসিক ও শারীরিক পরিবর্তন সম্পর্কে ধারনা দিন এবং তার সাথে খোলাখুলি সব আচরণ করুন। বোঝান এ ধরনের পরিবর্তন স্বাভাবিক ব্যাপার।

বয়ঃসন্ধিতে অনেকেরই পড়াশোনার মনোযোগ কমে যায়, সেই সময় জোরপূর্বক প্রেসার দেওয়া অনুচিত। বেশি সমস্যা মনে হলে থেরাপিস্টের সাহায্য নিন প্রয়োজনে।

অনেক মা বাবাই আছে যারা সন্তানের পড়াশোনা ছাড়া অন্য কোনো কিছুতেই সাপোর্ট দেন না। তাদের যদি কোন ব্যাপারে শখ বা প্যাশন থাকে সেটার গুরুত্ব দেন না।এটা কখনোই করবেন না। আপনার সন্তান পড়াশোনার বাইরে কি করতে পছন্দ করে খেয়াল রাখুন। গান, নাচ, আবৃত্তি, ছবি আঁকা যেটা তার ভালো লাগে সাপোর্ট দিন। তার ভালো লাগা নিয়ে কখনো কটু কথা বলবেন না।


আরো পড়ুন: বাঘিয়ায় মুক্তিযোদ্ধার আর্তনাদ!পুলিশকে নিয়ে জমি দখল?ভিডিওসহ


অনেকেই এই বয়সে ডিপ্রেশনে পড়ে যায় শুধুমাত্র এই কারণে যখন তারা নিজেদের ভালো লাগার ব্যাপারগুলো এক্সপ্লোর করতে প্যারেন্টসের সাপোর্ট পায় না, বরং নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পায়। এই সময় নেগেটিভ কথাবার্তা মনে বিরূপ প্রভাব ফেলে। তাদের ডিমোটিভেট করে দেয় ভীষন। কোনকিছু চাপিয়ে দেবেন না। সন্তানের ভয়ের জায়গা না হয়ে ভরসার জায়গা হয়ে উঠুন।

এক কথায় এই সময় সন্তানের বন্ধু হয়ে উঠুন যাকে সে নিদ্বিধায় সব বলতে পারবে, তার চলাচল, মেলামেশা ও সব কাজের ব্যাপারে সবকিছু আপনার জানা থাকলে তার বিপদের আশংকা এমনিতেই কমে যাবে এবং জীবন হবে সুন্দর।

যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন।

এগুলো দেখুন

কষা পায়খানা দূর করার ঘরোয়া চিকিৎসা ! কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায়

কষা পায়খানা দূর করার ঘরোয়া চিকিৎসা ! কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায়

ইদানিং দেখা যাচ্ছে ছোট থেকে বড় সকলের কোষ্ঠকাঠিন্য বা কষা পায়খানা নিয়ে চিন্তায় আছেন বা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *