জীবন ধারনের জন্য অতি প্রয়োজনীয় অঙ্গ হলো কিডনি। মস্তিষ্ক ও হৃদযন্ত্র যেমন মানুষের জন্য জরুরি ঠিক তেমনি জরুরি আমাদের দুটি কিডনি। মানব দেহের শরীরের যাবতীয় ক্ষতিকর অপ্রয়োজনীয় ও বর্জ্য পদার্থগুলো দুটো কিডনির মধ্যে রয়েছে আবার দুটো ছোট ছোট স্বয়ংসম্পূর্ণ ল্যাবরেটরি।
আরো পড়ুন:গর্ভাবস্থায় স্বাস্থ্যবান থাকার জন্য ১০টি করণীয় এবং বর্জনীয় কাজ
আরো পড়ুন:প্রেগন্যান্সির প্রাথমিক লক্ষণ ১০টি কি! মাসিক মিস হলে মিলিয়ে নিন
মুত্রনালীতে জীবাণুর সংক্রমণ
মুত্রনালীতে জীবাণু সংক্রমণ থেকে বাচতে আমাদের প্রয়োজন সচেতনা হওয়া। মুত্রনালীর যেকোনো অংশে যদি জীবাণুর সংক্রমণ সৃস্টি হয়, তাহলে সেটাকে ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন বলা হয়। কিডনি, মূত্রনালি একাধিক অংশে একসঙ্গে এই ধরণের ইনফেকশন হতে পারে।
আরো পড়ুন:গর্ভকালীন গোপনাঙ্গের যত্ন নেওয়ার ৯টি গোপন কথা
আরো পড়ুন:গর্ভাবস্থায় খাওয়ার জন্য যেসব সেরা ফল
ইউরিন ইনফেকশনের লক্ষণসমূহ কি কি? চলুন জেনে নেই বিস্তারিত।
১. বমি ভাব বা বমি হওয়া।
২. প্রস্রাবে বাজে গন্ধ।
৩. তলপেটে বা পিঠে তীব্র
৪. ব্যথা।প্রস্রাব গাঢ় হলুদ বা লালচে হওয়া।
৫. একটু পর পর প্রস্রাব লাগা কিন্তু ঠিক মতো না হওয়া।
৬. প্রস্রাব করার সময় জ্বালা পোড়া বা ব্যথা করা।
৭. সবসময় জ্বর জ্বর ভাব অথবা কাঁপুনি দিয়ে ঘন ঘন জ্বর হওয়া।
এই রোগে সাধারন্ত নারীরাই বেশি এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। তবুও নারী-পুরুষ নির্বিশেষে যে কেউ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।
বিশেষ করে গরমের দিনে খুব সহজেই মূত্রাশয়ের সংক্রমণ দেখা দিতে পারে। ইউরিনারি ইনফেকশনের অন্যতম লক্ষণ হলো প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া, কিডনিতে ব্যথা করা, কোমরে ব্যথা করা, তলপেটে ব্যথা করা ইত্যাদি।
এই রোগ থেকে বাচার উপায়
যথাযথ ভাবে মেনে চললে ইউরিনারি ইনফেকশন প্রতিরোধ করা সম্ভব। ইউরিনারি ইনফেকশন প্রতিরোধের উপায়গুলো
প্রস্রাব আটকে না রাখা
প্রস্রাব আটকে না রাখা বাড়ির বাইরে অনেকেই মূত্রত্যাগ করতে চান না। এই দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব আটকে রাখা হতে পারে ইউরিনারি ইনফেকশনের অন্যতম কারণ।
প্রস্রাব যদি মূত্রাশয়ে দীর্ঘক্ষণ আটকে রাখা হয়, তাহলে তাতে ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়তে থাকে। প্রতি ২০ মিনিটে মূত্রস্থিত ই.কলি ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যায়। আর বেশি সংখ্যক ব্যাকটেরিয়া মানে বেশি ব্যথা। তাই নিঃসন্দেহে সেরা উপায় হলো প্রচুর পানি পান করা এবং মূত্রত্যাগের মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া বের করে দেয়া। ঘরোয়া পদ্ধিতির পাশাপাশী ডাক্তারের পরমার্শ নেওয়া।
প্রচুর পানি পান
প্রতিদিন প্রচুর পরিমানে পানি পান করা। যেকোনো রোগের প্রতিরোধক হলো প্রচুর পানি পান করা। ইউরিনারি ইনফেকশনের জন্য এটাই একক ও সেরা উপায়।
অনেকেই ভাবেন সারাক্ষণ তো জ্বালাপোড়া হচ্ছে না, শুধু টয়লেটে গেলেই যা সমস্যা! ফলে টয়লেটে যাওয়া কমিয়ে দেন। এর ফল হয় ভয়াবহ। গবেষণায় জানা গেছে, প্রচুর পানি পান শুধু মূত্রত্যাগের সময় জ্বালাপোড়াই কমায় না, ইউরিনারি ইনফেকশনও দূর করেন। তাই দেরি না করে প্রচুর পরিমান পানি পান করুন। পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশী অন্যদেরকে সচেতন করুন।
যৌন মিলনের আগে-পরে
যৌন মিলনের আগে ও পরে কি করবেন? জানা নেই তবে এবার জেনে নিন। অনেকেরই দেখা যায় যৌনমিলনের পরে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া দেখা দেয়। মিলনের আগে ও পরে মূত্রত্যাগ করা ইউরিনারি ইনফেকশন রোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। পুরুষের চেয়ে নারী ক্ষেত্রে এটা বেশি কার্যকর। এত:এব: যৌন মিলনের পূর্বে ভালো করে প্রস্রাব শেরে নিন।
ভিটামিন সি
নিয়মিত ভিটামিন সি গ্রহণ কমিয়ে দিতে পারে ইউরিনারি ইনফেকশনের সম্ভাবনা। প্রতিদিন ১০০০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি গ্রহণে শরীরে যে অম্ল উত্পন্ন হয়, তাতে মূত্রে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের বিস্তার হ্রাস পায়। বেশী বেশী করে ভিটামিন সি গ্রহণ করুন।
গোসল করুন গরম পানিতে
নিয়মিত গরম পানি দিয়ে গোসল করুন। ইউরিনারি ইনফেকশনের ফলে সৃষ্ট ব্যথা উপশমে কুসুম গরম পানিতে গোসল অনেকের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেন। সবসময় কুসুম গরম পানি ব্যবহার করুন। তাতে ইনফেকশন থেকে বাচতে পারেন।
ঢিলেঢালা পোশাক-ব্রা
ঢিলেঢালা পোশাক ও ব্রা ব্যবহার করুন। সুস্থ থাকতে স্বাস্থ্যবিধি পালনের কোনো বিকল্প নাই। ধর্মী ভাবেও ঢিলেঢালা পোশাক পরা নিয়ম। বর্তমান সমাজে বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন ঢিলেঢালা পোশাক পড়া স্বাস্থ্যর জন্য ভালো। সুতি কাপড়ের অন্তর্বাস ব্যবহার, নিয়মিত গোসল করা, আপনার বাসস্থান ও চলাফেরা এলাকা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা ইত্যাদি খুবই জরুরি।
ইউরিন ইনফেকশন থেকে মুক্তি পাবার ঘরোয়া উপায়গুলো
ছেলেদের চেয়ে মেয়েরাই এই রোগে বেশী আক্রান্ত হয়। কারণ মেয়েদের ইউরিথ্রা বা মূত্রনালী পায়ুর খুব কাছাকাছি থাকে ফলে মলদার দিয়ে নির্গত ব্যাকটেরিয়া সহজেই মূত্রনালিতে প্রবেশ করতে পারে। এছাড়াও মেয়েদের মুত্রনালী ছোট হওয়ায় ব্যাকটেরিয়া খুব সহজেই মুত্রথলিতে ও কিডনিতে পৌঁছে ইনফেকশন ঘটাতে পারে।
আরো পড়ুন:প্রেগন্যান্সি পরীক্ষা করুন ঘরে বসেই – জানুন এ টু জেড
প্রস্রাব পরীক্ষার মাধ্যমে মূত্রনালির সংক্রমন বা ইউটিআই নির্ণয় করা যায়। কী জীবাণুর সংক্রমণ হয়েছে তা দেখে ডাক্তার আপনাকে এন্টিবায়োটিক সেবন করতে দেবেন। এন্টিবায়োটিক-এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে বলাই বাহুল্য। যেমন- ডায়রিয়া, বমি , র্যাশ ও চুলকানি হওয়া ইত্যাদি। এই সংক্রমণ প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে দ্রুত সুস্থ হওয়া যায়।
প্রচুর পানি পান করুন
যাদের ইউটিআই আছে তাদের প্রচুর পানি পান করা প্রয়োজন। বেশী পানি পান করলে প্রস্রাবের বেগ বৃদ্ধি পায় এবং প্রস্রাবের সাথে শরীর থেকে ব্যাকটেরিয়া বের হয়ে যায়। সবসময় প্রচুর পরিমান পানি পান করুন।
গরম সেঁক নিন
হট ওয়াটার ব্যাগ এ গরম পানি নিয়ে আপনার তলপেটের উপর রাখুন, এতে খুব দ্রুত প্রস্রাবের জ্বালা পোরা ও ব্যথা দূর হবে। তবে বেশী সময় এটা ব্যবহার না করাই উত্তম।
বেকিংসোডা পান করুন
না কোন সফট ড্রিংক এর কথা বলছি না, বেকিং সোডার কথা বলছি। এক গ্লাস পানিতে এক চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে সপ্তাহে একদিন সকাল বেলা পান করুন প্রস্রাবের জ্বালা পোড়া কমবে ।
সেলারি বীজ
ব্যবহৃত আয়ুর্বেদিক ওষুধ সর্দি, ফ্লু, জল ধরে রাখা, দুর্বল হজম, বাত এবং রোগের চিকিত্সা করতে, সেলারি বীজ হাজার বছর ধরে সামগ্রিক স্বাস্থ্যের অংশ হয়ে আসছে। সেলারি বীজ মূত্র বর্ধক হিসাবে কাজ করে। এক মুঠো সেলেরি বীজ চিবিয়ে রস খেতে পারেন অথবা এক কাপ গরম পানিতে কিছু সেলেরি বীজ দিয়ে ঢেকে দিন, ৮ মিনিট পর মিশ্রণটি ছেঁকে নিয়ে পান করুন। এটা ইউটিআই প্রতিরোধ করে।
শসা খান
শশা এমন একটা ফল, যার নানা রকম উপকার ৷ এক শশাতেই আপনার শরীর থাকবে একেবারে চাঙ্গা ! শুধু ফিটনেসে সাহায্য করে না শশা, সঙ্গে ঝকঝকে সুন্দর ত্বক, যৌবন ধরে রাখতে শশার জুড়ি মেলা ভার ৷ জানেন কি? আমরা নিয়মিত যেভাবে শশা খেয়ে থাকি, সেভাবে শশা খেলে তার কোনও উপকারই নেই ৷
ইউরিন ইনফেকশনের লক্ষণ এবং এ থেকে বাচার ঘরোয়া উপায়
বরং অনেক সময়ই কেটে শশা খাওয়া থেকে অপকার হতে পারে ৷ চিকিৎসকরা বলছেন, কেটে, নুন ছড়িয়ে বা স্যালাডে শশা না খেয়ে বরং শশার জ্যুস বানিয়ে খান ৷ এতে যেমন ত্বক হয়ে উঠবে উজ্জ্বল, তেমনি মেদ ঝড়িয়ে আপনার দেহকে করে তুলবে আকর্ষণীয় ৷ তা কীভাবে বানাবেন শশার জ্যুস! এছাড়া শসাতে প্রচুর পরিমান পানি আছে। প্রতিদিন কম পক্ষে একটি শসা স্লাইস করে খেতে পারেন।
আরামদায়ক পোশাক পড়ুন
একসময় কর্মক্ষেত্রে প্রতিদিনের পোশাক বলতেই বোঝানো হতো ফরমাল আউটফিট। সেখান ক্যাজুয়াল পোশাক যতটা আরামদায়ক, ফরমাল পোশাক ততটা নয়। স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় ব্যাকটেরিয়া জন্মায়। সূতির অন্তর্বাস পরলে ও ঢিলেঢালা পোশাক পরলে স্পর্শকাতর অঙ্গে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। আসুন নিজে সর্তক হই। অন্যকেও সর্তক করি।
আরো পড়ুন:নারীর পাঁচটি স্বাস্থ্য সমস্যা
যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন।