গ্রাফিক্স ডিজাইন’র জন্য কেমন কনফিগারেশনের ডেক্সটপ বা ল্যাপটপ প্রয়োজন

গ্রাফিক্স ডিজাইন’র জন্য কেমন কনফিগারেশনের ডেক্সটপ বা ল্যাপটপ প্রয়োজন । আসুন জেনে নেওয়া যাক কি ধরণের কনফিগারেশনের ডেক্সটপ বা ল্যাপটপ নিলে আপনি কাজ করতে পারবেন। গ্রাফিক্স ডিজাইন পারি বা না পারি তবে কম্পিউটারের কনফিগারেশন কেমন হবে এটা জানা খুবই জরুরি। আপনি যদি সিদ্ধান্ত নিয়েই থাকেন গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখবেন অথবা শিখার ইচ্ছা তাহলে বসে না থেকে এই আর্টিক্যাল টি পড়ে নিন।

গ্রুপে, পেইজে, ওয়েব সাইটে, ইনবক্সে কম বেশি সবাই এই ধরনের প্রশ্নের উত্তর সার্চ করতে থাকেন “কেমন পিসি বা ল্যাপ্টপ ওয়েব ডেভেলপমেন্ট শেখা বা করার জন্য দরকার?”, “গ্রাফিক্স ডিজাইনার হতে হলে কেমন পিসি বা ল্যাপটপ বানানো প্রয়োজন?” এমন প্রশ্নের উত্তর অনেকেই খুজেছেন বা কোন পরিচিত কাউকে জিজ্ঞেস করেছেন কিন্তু উত্তর পাননি বা আশানুরূপ হয় নি। তাই আজ আমি এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে চলে এলাম।

বর্তমানে যারা গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন বা মোটামুটি লেভেলে ফ্রিল্যান্সিং করছেন বা করতে চান তাদের কয়েকটি কমন প্রশ্ন এগুলো।

যারা গ্রাফিক ডিজাইন শিখছেন অথবা শিখার পর চেষ্টা করছেন ফ্রিলান্সিং করে আয় করার, তারা অনেকেই দ্বিধার মধ্যে থাকেন যে কি ধরনের কম্পিউটার হলে ভালো কাজ করা যায়। যাদের ডেক্সটপ বা ল্যাপটপ নেই, যারা ডেক্সটপ বা ল্যাপটপ কিনবে তারাও হয়’ত বুঝতে পারে না, কি ধরনের ডেক্সটপ বা ল্যাপটপ কিনলে আসলে ভাল হবে। কত দামের ডেক্সটপ বা ল্যাপটপ কিনলে প্রোফেসনাল টাইপের গ্রাফিক ডিজাইন এর কাজ করা যাবে। আবার অনেকেই রয়েছেন পুরাতন ডেক্সটপ বা ল্যাপটপ আপগ্রেড করাতে চান।

গ্রাফিক্স ডিজাইন’র জন্য কেমন কনফিগারেশনের ডেক্সটপ বা ল্যাপটপ প্রয়োজন

গ্রাফিক্স ডিজাইন কাজের জন্য উপযুক্ত ডেক্সটপ বা ল্যাপটপ এর বিভিন্ন পার্টস এর মান এবং মূল্য এর একটি আনুমানিক ধারনা দেওয়া হল:

মাদারবোর্ড

বাজারে ভিবিন্ন কোম্পানির মাদারবোর্ড আছে তবে এর মধ্যে গিগাবাইট এর মাদারবোর্ড অপেক্ষাকৃত ভালো। গিগাবাইটের মাদারবোর্ড ২৫০০-৮৫০০০ টাকার মাদারবোর্ড আছে। আপনি যেহেতু 2D গ্রাফিক্স এর কাজ করবেন, তাই সাধারণত ৭০০০-১৫০০০ এর ভিতরে ভালো মানের মাদারবোর্ড পেয়ে যাবেন। আপনি যদি 3D গ্রাফিক্স এনিমেশনের কাজ করতে চান তাহলে আর একটু আপগ্রেট মাদারবোর্ড নিতে পারেন তবে সেক্ষেত্রে দাম একটু বেশি পরবে। মাদারবোর্ড কেনার সময় অবশ্যই আপনাকে প্রসেসর এর সঙ্গে মিল রেখে মাদারবোর্ড কিনতে হবে, আপনি যদি ইন্টেল এর প্রসেসর ব্যবহার কতে চান তাহলে আপনাকে ইন্টেল এর মাদারবোর্ড ই ব্যবহার করতে হবে আর আপনি যদি রাইজনের প্রসেসর ব্যবহার করতে চান তাহলে অবশ্যয়ী আপনাকে রাইজনের মাদারবোর্ড কিনতে হবে।



প্রসেসর

গ্রাফিক্স এর কাজ করার জন্য অবশ্যই ভালো মানের প্রসেসর হতে হবে। সাধারনত গ্রাফিক্স ডিজাইনাররা Intel অথবা AMD প্রসেসর ব্যবহার করে থাকেন। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রসেসর Intel, আপনি Intel core i5 / Intel core i7 প্রসেসর কিনতে পারেন তবে ইদানিং AMD ও খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছে। প্রসেসর কেনার সময় Processor Generation & GHz কত তা দেখে কিনবেন। যখন পিসি কিনবেন তখনকার সময়ের Generation বা তার কাছাকাছি জেনারেশন এর প্রসেসর কিনার চেষ্টা করবেন। যেমন বর্তমানে বাজারে Intel 9th Generation ও AMD 3rd Generation এর প্রসেসর পাওয়া যায়। গ্রাফিক্স ডিজাইনের কাজ করার জন্য প্রসেসর খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। প্রসেসর কম্পিউটার এর বেশির ভাগ কাজ প্রসেসর করে থাকে তাই ভালো প্রসেসর খুবই জরুরী। আপনার কম্পিউটারের প্রসেসর এর মান যদি খারাপ হয় তাহলে আপনি যখন অনেকগুলি ফাইল বা প্রোগ্রাম এক সঙ্গে ওপেন করে কাজ করতে চাইবেন তখন আপনার কম্পিউটার এর গতি কমে আসবে, এবং কম্পিউটার হ্যাং ও হতে পারে তবে মনে রাখবেন অনেক ভাল প্রসেসর অনেক দাম পড়ে যাবে তাই প্রথমে র‍্যাম এর ব্যাপারটি নিশ্চিত করে প্রসেসর এর ব্যাপার এ সিদ্ধান্ত নিন।

র‌্যাম

র‍্যামের উপর গুরুত্ব দিন প্রসেসর এর চেয়েও বেশি। তবে ভালো মানের প্রসেসর এর কার্যক্ষমতা বাড়াতে তার প্রধান মেমরী বা র‌্যাম যত বেশি হবে তত কম সময়ে প্রসেসিং হবে। গ্রাফিক্স ডিজাইন এ ফটোশপ অনেক জনপ্রিয় একটা সফটওয়্যার আর ফটোশপ চালাতে মেমরি বা র‍্যাম বেশি প্রয়োজন হয়। তাই আপনি যদি র‍্যাম একটু বেশি করে লাগান তাহলে কাজ করতে সুবিধা হবে। ফটোশপ সব সময় অনেক ডাটা নিয়ে কাজ করে আর এই ডাটাগুলো কম্পিউটার র‍্যাম এ জমা থাকে তাই র‍্যাম এর স্পেস বেশি থাকা প্রয়োজন।

আপনি যখন অনেক বড় বড় ফাইল নিয়ে কাজ করবেন যেমন আপনার বায়ার আপনাকে এমন ও ছবি দিবে যেগুলির এক একটার সাইজ ৫০ মেগা থেকে শুরু করে ১৫০ মেগাবাইট পর্যন্ত অথবা তার ও বেশি হতে পারে, তারপর আপনি যখন সেই ছবি এডিটিং করা শুরু করবেন সেখানে আরো কিছু উপাদান যোগ হলে আপনার মেগা বাইট এর পরিমান আরো বেড়ে যাবে আর আপনার র‍্যাম যদি কম হয় তাহলে প্রোগ্রাম হয়ে যাবে স্লো, আর এই স্লো বা হ্যাং হওয়ার কারণে আপনি আপনার বায়ারের কাজটি সঠিক সময় মত করতে পারলেন না, এটা আপনার এবং আপনার বায়ার কারো জন্য ভাল হবে না। তাই আমি বলবো কাজের উপর নির্ভর করে আপনার র‍্যাম ৮-১৬ গিগাবাইট এর মধ্যে নেয়ার চেষ্টা করবেন।

আর একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল আপনি যদি উইন্ডোজ এর ৬৪ বিট ব্যবহার করেন আর ফটোশপ ও ৬৪ বিট এ ইন্সটল না করেন তাহলে বেশি র‍্যাম আপনার কম্পিউটারে কোন কাজে আসবে না। ৮ GB র‍্যাম 4000-4500 মধ্যে ভালো ব্রান্ড এর র‍্যাম পাবেন আপনি যদি মনে করেন আপনি ১৬ গিগাবাইট ব্যবহার করবেন সে ক্ষেত্রে আপনি ৮ গিগাবাইট এর ২ টি র‍্যাম এক সঙ্গে ব্যবহার করতে পারেন। কোর সিরিজের প্রসেসর আর ৪ জিবির উপর র‍্যাম থাকলে কাজে দারুন গতি আসে।

একটা বেশী আরেকটা কম হলে কাজ ঠিকমত হবে না, কাজের জন্য দুটোর মিলবন্ধন দরকার। আর গ্রাফিক্স কার্ড(জিপিইউ) খুব গুরুত্বপুর্ণ যদি থ্রিডি বা অন্য কোন চাপের কাজ করতে চান। মনে রাখবেন CORE i3 + 8GB RAM is surely better than CORE i7+4 GB RAM। সবসময় RAM বেশি নেয়ার চেষ্টা করবেন সম্পূর্ণ configuration অনুযায়ী।

বাজারে অনেক কোম্পানির র‌্যাম পাওয়া যায় আপনি Twinmos / Apacer / A Data কোম্পানির DDR3/DDR4 ভার্সনের ৮ জিবি র‌্যাম নিতে পারেন।

হার্ডডিস্ক

1TB Harddisk নিতে পারেন এবং C ড্রাইভের জন্য ১২০/১২৮ GB SSD হার্ডডিস্ক নিবেন, এতে করে আপনার কম্পিউটার কয়েক গুন বেশী ফাস্টার/দ্রতগতী হবে।

মনিটর

গ্রাফিক্স ডিজাইনের জন্য 22″ মনিটর হলে ভালো হবে। Dell/HP/Asus ব্রান্ড মনিটর বর্তমানে বেশিরভাগ গ্রাফিক্স ডিজাইনাররা Dell S2218H 21.5 Inch Full HD LED Borderless ব্যবহার করে থাকেন। মনিটরের দাম পরবে ১০, ৫০০ টাকার মত।

গ্রাফিক্স কার্ড

আপনার বাজেট যদি ভালো হয় তাহলে আপনি আলাদা ভাবে গ্রাফিক্স কার্ড লাগাতে পারেন কিন্তু গ্রাফিক্স কার্ড বেশ দামি তাই আমি বলবো আপনি থ্রিডি এনিমেশন অথবা ভিডিও এডিটিং এর দিকে না গেলে মাদার বোর্ড এর সঙ্গে যে গ্রাফিক্স কার্ড থাকে সেটাই যথেষ্ট। তবে আপনি যদি আলাদা গ্রাফিক্স কার্ড লাগাতে চান তাহলে বলবো আপনি OpenCL capable GPU, CUDA cores দরকারি নয়। অ্যাডোব CS6 Mercury ইঞ্জিন নিয়ে এসছে যেটা OpenGL and OpenCL এর কাজ করে। তাই nVidia কার্ড সঙ্গে CUDA cores দরকার নেই।

কম্পিউটর মনিটর

আপনি বেশি স্পেস এর র‍্যাম নিলেন, ভালো মানের প্রসেসর নিলেন, ভাল মানের গ্রাফিক্স কার্ড নিলেন কিন্তু দেখা গেল আপনার মনিটর এর মান ভালো না তাহলে আসলে কোনো লাভ নেই। তাই ভাল কালার সিস্টেম এর মনিটর মিনিমাম ১৯২০x১২০০ পিক্সেল ডাইমেনশন। ২১-২৪ ইঞ্চি সাইজ। কালার কেলিব্রাটর সেট আপ করে নিন যদি আপনি প্রিন্ট ডিজাইন এর কাজ করেন, কারন অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় আপনি মনিটর এ যে কালার দেখছেন প্রিন্ট করার পর সে রকম কালার পাওয়া যায় না। আপনি মার্কেট এ অনেক ব্রান্ড ই মনিটর পাবেন, ভালো হয় ২১-২৪ ইঞ্চি এর মধ্যে মনিটর ব্যবহার করলে কিন্তু সাইজ এর থেকে ও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল কালার এর ব্যাপারটি। আপনি Samsang অথবা Dell এর মধ্যে ১০-১২ হাজার টাকায় চমৎকার HD monitor পেয়ে যাবেন।

কিবোর্ড/মাউস

লংটাইম ব্যবহারের জন্য A4 Tech কিবোর্ড ও মাউস ভালো হবে।

সব মিলিয়ে বলা যায় আপনি ৪০-৬০ হাজার টাকার মধ্যে গ্রাফিক্স ডিজাইন এর জন্য পারফেক্ট একটা পরিপূর্ণ কম্পিউটার পেতে পারেন। আর আপনি যদি আপগ্রেড করতে চান তাহলে ১৫-২০ হাজার টাকার মধ্যে আপনি আপগ্রেড করাতে পারবেন। কম্পিউটার কেনার আগে ঠিক করে নিন আপনার কাজের ক্ষেত্র আপনি যখন নতুন কম্পিউটার কিনবেন অথবা কম্পিউটার আপগ্রেড করবেন আমার মতে আপনি আগে বের করুন আপনি গ্রাফিক্স ডিজাইন কোনো কাজ এর জন্য করবেন।

আপনি যদি মাত্র গ্রাফিক্স ডিজাইন শুরু করে থাকেন অথবা শুরু করবেন ভাবছেন তাহলে আপনার যদি কম্পিউটার থাকে তাহলে যেটা রয়েছে সেটা দিয়ে এই শুরু করতে পারবেন সেটা একদম সাধারন কম্পিউটার হলে ও সম্ভব। আপনি যখন সম্পূর্ণভাবে প্রফেশনালি শুরু করবেন তখন আপনাকে কম্পিউটার আপগ্রেড করতে হবে। আর সে ক্ষেত্রে এমন ও না আপনার খুব উচ্চমানের কম্পিউটার লাগবে। আপনি ঠিক করেন আপনি কোনো কাজটি করবেন আপনি যদি ফটোশপ এর কাজ করেন তাহলে আপনাকে ফটো এডিটিং এর কাজগুলো বেশি করতে হবে আর সে ক্ষেত্রে আপনার কম্পিউটার এর মান অনেক ভালো হতে হবে আর আপনি যদি লোগো ডিজাইন, প্রিন্ট ডিজাইন এর কাজের কথা চিন্তা করেন তাহলে আপনাকে Adobe Illustrator অথবা Corel draw এর কাজ বেশি করতে হবে যার জন্য খুব উচ্চমানের কম্পিউটার প্রয়োজনীয় নয়।



গ্রাফিক্স ডিজাইন’র জন্য কেমন কনফিগারেশনের ডেক্সটপ বা ল্যাপটপ প্রয়োজন

ল্যাপটপ না ডেক্সটপ কিনবেন?

অনেকেই বলেন গ্রাফিক্স ডিজাইনের জন্য ডেক্সটপ ভালো, আসলে এমন কোন কথা নেই যে ডেক্সটপ গ্রাফিক্স ডিজাইনের ল্যাপটপ ভালো না। আমার আসলে কম বাজেটের মধ্যে অনেক ভালো ডেক্সটপ কনফিগারেশন পেয়ে যাই তাই বলে থাকি ডেক্সটপ ভালো। যেমন একটি ভালো মানের ডেক্সটপ ৪০-৫০ হাজার দিয়ে নেওয়া সম্ভব কিন্তু আমি যদি সেমই কনফিগারেশন ল্যাপটপ কিনতে চাই তাহলে ১ লাখের কাছাকাছি খরচ হবে, তাই আমরা এই মানের ল্যাপটপ না কিনে ডেস্কটপ কিনি তাই বলে থাকি গ্রাফিক্স ডিজাইনের জন্য ডেক্সটপ ভালো।

আসলে দুটোরই অনেক ভালো-মন্দ বিষয় আছে। তবে আমার মতে গ্রাফিক্স ডিজাইনে স্পিডে কাজ করতে চাইলে ৬০ হাজার ৮০ হাজার বা ১ লাখের মধ্যে ল্যাপটপ কেনেন বাজেট ৫০ হাজারের নিচে হলে ডেক্সটপ কেনেন। আপনি এই ডেস্কটপ দিয়ে ১ লাখ টাকার ল্যাপটপ এর স্পিড পাবেন। অনেক ফ্রিল্যান্স গ্রফিক্স ডিজাইনাররা MacBook Pro ব্যবহার করেন, আপনার বাজেট ভালো থাকলে অ্যাপল এর MacBook Pro কিনতে পারেন। এটা জেনারেল ডেস্কটপ থেকে বেশি ভাল পারফরম্যান্স দেয়। তার মানে আসল বিষয় হচ্ছে কনফিগারেশন।

যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে।

এগুলো দেখুন

সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং কি – কোথায় করবেন এবং কিভাবে করে

সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং কি – কোথায় করবেন এবং কিভাবে করে

জেনে নিন সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং কি – কোথায় করবেন এবং কিভাবে করে । আসুন এ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *