(ফ্রি PDF) SSC অতিরিক্ত সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

(ফ্রি PDF) SSC অতিরিক্ত সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

  • সৃজনশীল প্রশ্ন
  • ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে কারাবরণ- শেখ মুজিবুর রহমানের

বঙ্গবন্ধু ছাত্রজীবন থেকেই দেশ ও জাতির প্রতি সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত ছিলেন। তার রাজনৈতিক জীবন তাই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের। শোষণ নির্যাতনের বিরুদ্ধে মাথা না নোয়ানোর। পাকিস্তান আমলে তিনি তাই দীর্ঘ সময় কারাবাসে ছিলেন। পাকিস্তান সৃষ্টির পর পর ১৯৪৮ সালের মার্চেই তিনি কারাবন্দী হন।

ক. কোন শিক্ষা সম্মেলনে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়?
খ. ২১ ফেব্র“য়ারি, ১৯৫২ কে সামনে রেখে শেখ মুজিবুর রহমানকে ফরিদপুর জেলে স্থানান্তর করা হয় কেন?

গ. উদ্দীপকে নির্দেশিত বঙ্গবন্ধুর কারাবরণের প্রেক্ষাপট বর্ণনা কর।
ঘ. উদ্দীপকে নির্দেশিত ঘটনার ধারাবাহিকতায় পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী চুক্তি স্বাক্ষরে বাধ্য হন। দফার উল্লেখসহ আলোচনা কর।

সৃজনশীল প্রশ্নর উত্তর
ক ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বর মাসে করাচিতে অনুষ্ঠিত এক শিক্ষা সম্মেলনে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
খ ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্র“য়ারি দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘট এবং ঐদিন রাষ্ট্রভাষা দিবস পালন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

ভাষার দাবি সুপ্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার সংকল্প ঘোষণা করা হয়। কারাবন্দি শেখ মুজিব ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ২১ ফেব্র“য়ারির কর্মসূচি পালনে ছাত্র ও আওয়ামী মুসলিম লীগের নেতাকর্মীদের ডেকে পরামর্শ দেন। ফলশ্র“তিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও সহ-বন্দি মহিউদ্দিন আহমেদকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ফরিদপুর জেলে স্থানান্তর করা হয়।

গ বঙ্গবন্ধু দেশ ও জাতির জন্য ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ সংগ্রামী। পাকিস্তান সৃষ্টির পর পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী ভাষার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করলে বঙ্গবন্ধুও বিভিন্ন কর্মসূচিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে থাকেন। ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্র“য়ারি পাকিস্তান গণপরিষদ সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত গণপরিষদের ভাষা হিসেবে উর্দু ও ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা ব্যবহারের দাবি জানান। তাঁর দাবি অগ্রাহ্য হলে ২৬ ও ২৯ ফেব্র“য়ারি ঢাকায় ধর্মঘট পালিত হয়।

২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ পুনর্গঠিত হয়। ১১ মার্চ ‘বাংলা ভাষা দাবি দিবস’ পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়। ঐ দিন সাধারণ ধর্মঘট পালিত হয়। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ এ কর্মসূচি পালনে বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করে। পিকেটিং করা অবস্থায় শেখ মুজিব, শামসুল হক, অলি আহাদসহ ৬৯ জনকে গ্রেফতার করে কারাগারে অন্তরীণ করা হয়। উদ্দীপকে বঙ্গবন্ধুর কারাবরণের এ প্রেক্ষাপটটিই নির্দেশিত হয়েছে।

ঘ উদ্দীপকে ১৯৪৮ সালের ভাষা আন্দোলনের ঘটনাপ্রবাহ নির্দেশিত হয়েছে যে প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হয়েছিলেন। ১৯৪৮ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পুনর্গঠিত ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ ১১ মার্চ ‘বাংলা ভাষা দাবি দিবস’ পালনের ঘোষণা দেয়।

ঐ দিন ধর্মঘট পালনকালে শেখ মুজিব, শামসুল হক, অলি আহাদসহ ৬৯ জনকে গ্রেফতার করা হলে ঢাকায় ১৩-১৫ মার্চ ধর্মঘট পালিত হয়। বাধ্য হয়ে পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দীন ১৫ মার্চ সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে ৮ দফা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। দফাগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো :

১. বাংলা ভাষার প্রশ্নে গ্রেফতারকৃত সকলকে অবিলম্বে মুক্তি দান করা হবে।
২. পুলিশি অত্যাচারের বিষয়ে তদন্ত করে একটি বিবৃতি প্রদান করা হবে।

৩. বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার জন্য পূর্ববাংলার আইন পরিষদে একটি বিশেষ প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে।
৪. পূর্ববাংলার সরকারি ভাষা হিসেবে ইংরেজি উঠে যাওয়ার পর বাংলাকে সরকারি ভাষা হিসেবে প্রবর্তন করা হবে।

৫. সংবাদপত্রের ওপর হতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে।
৬. আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না।

৭. ২৯ ফেব্র“য়ারি হতে জারিকৃত ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হবে।
৮. রাষ্ট্র ভাষা আন্দোলন ‘রাষ্ট্রের দুশমনদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয় নাই’ এ মর্মে মুখ্যমন্ত্রী ভুল স্বীকার করে বক্তব্য দেবেন।

এভাবে ১৯৪৮ সালে ভাষার প্রশ্নে একটি মীমাংসা দাঁড়ালেও পরবর্র্তীতে তা রক্ষিত হয়নি। তাই বুকের তাজা রক্ত ঢেলে বাঙালিরা পরবর্তীতে ১৯৫২ সালে মাতৃভাষার দাবিকে সুপ্রতিষ্ঠিত করে।

সৃজনশীল প্রশ্ন

রূপকথা বহুদিন ধরে লন্ডনে বসবাস করছে। সুদূর লন্ডনে থেকেও বাংলা মাকে সে ভুলতে পারেনি। পদ্মা, মেঘনা, মধুমতি নিয়ে গড়া বাংলার জারি, সারি আর ভাটিয়ালি গান তাকে নিয়ত টানে। আর সেই টানে সাড়া দিয়ে ৮ ফাল্গুন সে বাংলাদেশে এসেছে। কিন্তু বাংলাদেশের একি হাল! তার বান্ধবী সুইটির বাসায় গিয়ে সে দেখে সুইটি মাইকেল জ্যাকসন, ব্রিটনি ছাড়া কিছুই শোনে না। প্রতিদিন সে ডিজে পার্টিতে যায়। রূপকথা এসব দেখে ভাবে এজন্যই কি বাংলার দামাল ছেলেরা বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছিল অকাতরে।

ক. কয়টি দল নিয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়?
খ. যুক্তফ্রন্ট সরকার মাত্র ৫৬ দিন ক্ষমতায় টিকে ছিল কেন? ব্যাখ্যা কর।

গ. কোন আন্দোলনের শিক্ষা রূপকথাকে প্রভাবিত করেছিল? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. রূপকথার এ ধরনের মনোভাবই আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করেছিলÑ বিশ্লেষণ কর।

সৃজনশীল প্রশ্নর উত্তর
ক ৪টি দল নিয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়।
খ ১৯৫৪ সালের ৩ এপ্রিল যুক্তফ্রন্টভুক্ত কৃষক-শ্রমিক পার্টির নেতা এ কে ফজলুল হক মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। যুক্তফ্রন্ট সরকার মাত্র ৫৬ দিন ক্ষমতায় ছিল।

পাকিস্তান সরকার পূর্ব বাংলার যুক্তফ্রন্ট সরকারকে মনেপ্রাণে গ্রহণ করতে পারেনি। তারা ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নেয়। আদমজি পাটকল ও কর্ণফুলী কাগজের কলে বাঙালি-অবাঙালি দাঙ্গাকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করিয়ে পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল গোলাম মোহাম্মদ ১৯৫৪ সালের ৩০ মে যুক্তফ্রন্ট সরকারকে বরখাস্ত করে। উল্লেখ্য, পাকিস্তান সরকারের ইন্ধনে ঐ দাঙ্গা হয়েছিল।

গ ভাষা আন্দোলনের শিক্ষা রূপকথাকে প্রভাবিত করেছিল। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ছিল এদেশের প্রাণের ভাষা, মায়ের ভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষার আন্দোলন। এ আন্দোলনে বাংলার দামাল ছেলেরা জীবন দিয়ে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা করেছিল। তাদের আত্মত্যাগ বাংলাদেশে বাংলা ভাষা চর্চার দাবি রাখে।

সবাই বাংলার মা, মাটি ও ভাষার সাথে মিশে থাকবে তাই ছিল ভাষা শহিদদের আত্মত্যাগের দাবি। রূপকথা এই আন্দোলন দ্বারা প্রভাবিত। তাই সে সুদূর লন্ডনে থেকেও বাংলা মাকে ভুলতে পারেনি। পদ্মা, মেঘনা, মধুমতি নিয়ে গড়া বাংলার জারি, সারি আর ভাটিয়ালি গান তাকে নিয়ত টানে।

আর সেই টানে সাড়া দিয়ে ৮ ফাল্গুন শহিদ দিবসে সে বাংলাদেশে আসে। কিন্তু তার বান্ধবী সুইটির বাসায় গিয়ে সে খুবই মর্মাহত হয়। কারণ সুইটি মাইকেল জ্যাকসন আর ব্রিটনির গান ছাড়া কিছুই শোনে না। সে প্রতিদিন ডিজে পার্টিতে যায়। বাংলাদেশের মানুষের এরূপ অবস্থা দেখে অর্থাৎ ইংরেজি সংস্কৃতি ও বিদেশি ভাষাপ্রীতি দেখে রূপকথার খুব দুঃখবোধ হয়।

ঘ দেশের মাটির প্রতি, মায়ের ভাষা বাংলার প্রতি রূপকথার হৃদয়ের টান। রূপকথার এ ধরনের মনোভাবই আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করেছিল। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী এ অঞ্চলের তথা পূর্ববাংলার মায়ের ভাষা বাংলাকে পদানত করতে চেয়েছিল। তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকের ভাষা বাংলাকে উপেক্ষা করে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সর্বাত্মক চেষ্টা করে।

কিন্তু প্রতিরোধ, হামলা, কাঁদুনে গ্যাস, ১৪৪ ধারা, গুলিবর্ষণ কিছুই বাংলার দামাল ছেলেদের থামাতে পারেনি। তারা জীবন দিয়েছিল তবু বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিল। পাকিস্তান রাষ্ট্রের বৈষম্যমূলক আচরণের বিরুদ্ধে ভাষা আন্দোলন ছিল বাঙালি জাতির প্রথম প্রতিবাদ ও বিদ্রোহ, বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রথম প্রেরণা।

১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই বাঙালি জাতি পশ্চিম পাকিস্তানি সরকারের অবহেলা, বঞ্চনা, শোষণের জাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছিল। মাতৃভাষা বাংলার প্রতি অবমাননা বাঙালির মনকে প্রবল নাড়া দিয়েছিল। তারা বুঝতে পেরেছিল পাকিস্তানিদের হাতে তাদের ভাষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি কিছুই নিরাপদ নয়। এভাবেই বাঙালির মাঝে বাঙালি জাতীয়তাবাদের বীজ বপিত হয়।

যার ফলে সম্ভব হয় ষাটের দশকের স্বাধিকার আদায়ের জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক আন্দোলন। এর হাত ধরে স্বায়ত্তশাসনের দাবি থেকে স্বাধীনতার দাবি এবং তারই ফলে বীর বাঙালি মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভ করে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটায়। তাই বলা যায়, ভাষার প্রতি রূপকথার এরূপ আন্তরিক মনোভাবই আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করেছিল।

  • সৃজনশীল প্রশ্ন
  • ভাষা আন্দোলন ও ছাত্র সমাজের ভূমিকা

সাংবাদিক আবু নাছের সাহেব ছাত্র রাজনীতি বন্ধের পক্ষে কোনোভাবেই একমত নন। তিনি বলেন, যে ছাত্ররা আন্দোলনের মাধ্যমে মায়ের মুখের ভাষায় কথা বলার অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে, সে ছাত্ররাই আজ বড় রাজনীতিবিদ হয়ে দেশের নেতৃত্ব দিচ্ছে। ছাত্রদের বুকের তাজা রক্তের ইতিহাস জাতি আজও ভুলে যায়নি। তিনি মনে করেন, ছাত্রদের অন্যতম কাজ অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম পরিচালনা করা।

ক. কে ঘোষণা দেন পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু?
খ. ‘যুক্তফ্রন্ট’ বলতে কী বোঝ?

গ. আবু নাছের সাহেবের বক্তব্যে ১৯৫২ সালে ছাত্রদের যে ভূমিকা ধরা পড়েছে তার ব্যাখ্যা দাও।
ঘ. উদ্দীপকে নির্দেশিত আন্দোলন বাংলাদেশে শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চায় প্রভাব রেখেছিলÑ বিশ্লেষণ কর।

সৃজনশীল প্রশ্নর উত্তর
ক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঘোষণা দেন পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু।
খ যুক্তফ্রন্ট ছিল মূলত একটি নির্বাচনি জোট। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগকে পরাজিত করার জন্য পূর্ববাংলার সদ্য প্রতিষ্ঠিত দলগুলো একত্রিত হয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠন করে। যুক্তফ্রন্ট মূলত চারটি বিরোধী রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছিল।

গ আবু নাছের সাহেবের বক্তব্যে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে ছাত্রদের আত্মত্যাগের কথা ধরা পড়েছে। সাংবাদিক আবু নাছের সাহেব মনে করেন, ১৯৫২ তে ছাত্ররা আন্দোলনের মাধ্যমে মায়ের মুখের ভাষায় কথা বলার অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। তাদের বুকের তাজা রক্তের ইতিহাস জাতি আজও ভুলে যায়নি।

১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারি ঢাকার পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত জনসভায় পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দীন জিন্নাহকে অনুকরণ করে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার নতুন ঘোষণা প্রদান করেন। এর প্রতিবাদে ছাত্রসমাজ ৩০ জানুয়ারি ধর্মঘট পালন করে। আবদুল মতিনকে আহ্বায়ক করে ‘রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ নতুনভাবে গঠিত হয়। নতুনভাবে আন্দোলন সংগঠিত হতে থাকে। এর সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোও যুক্ত হয়। ৪ ফেব্র“য়ারি ঢাকায় ছাত্র ধর্মঘট পালিত হয়।

২১ ফেব্র“য়ারি দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘট এবং ঐদিন রাষ্ট্র ভাষা দিবস পালন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ভাষার দাবি সুপ্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার সংকল্প ঘোষণা করা হয়। দেশব্যাপী জনমত গড়ে উঠতে থাকে। ২০ ফেব্র“য়ারি সরকারি এক ঘোষণায় ২১ ফেব্র“য়ারি থেকে ১৪৪ ধারা জারিসহ সভা সমাবেশ, মিছিল এক মাসের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়।

আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করা না করা নিয়ে অনেক আলোচনা শেষে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ২১ ফেব্র“য়ারি সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় (ঢাকা মেডিকেল কলেজের সম্মুখ চত্বর) একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে, ১০ জন করে মিছিল শুরু করা হবে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের দিক থেকে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল এগিয়ে চলে। পুলিশ প্রথমে কয়েকজনকে গ্রেফতার করে, মিছিলে লাঠিচার্জ ও কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করে। এক পর্যায়ে পুলিশ গুলিবর্ষণ করলে আবুল বরকত, জব্বার, রফিক, সালামসহ আরও অনেকে শহিদ হন, অনেকে আহত হন। ঢাকায় ছাত্রহত্যার খবর দ্রুত সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ছাত্রদের এ আত্মদান ভাষার দাবিকে প্রতিষ্ঠিত করে।

ঘ উদ্দীপকে ভাষা আন্দোলন নির্দেশিত হয়েছে। বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চায় ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছিল। ঢাকায় ২১ ফেব্র“য়ারি ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে চট্টগ্রামে কবি মাহবুব-উল-আলম চৌধুরী ‘কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’ শীর্ষক প্রথম কবিতা এবং তরুণ কবি আলাউদ্দিন আল আজাদ ‘স্মৃতির মিনার’ কবিতাটি রচনা করেন।

ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, বরিশাল, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন শহরে ছাত্র, যুবকসহ সাধারণ মানুষ ভাষার দাবিতে আন্দোলনের প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করে। পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতি ঘৃণা পোষণ শুরু করে। এসব হত্যাকাণ্ড পূর্ববাংলার জনগণের মনের ওপর বড় ধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। আবদুল গাফফার চৌধুরী রচনা করেন, ‘আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো ২১ ফেব্র“য়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’, সংগীতশিল্পী আবদুল লতিফ রচনা ও সুর করেন,

‘ওরা আমার মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চায়’, এছাড়া ‘তোরা ঢাকা শহর রক্তে ভাসাইলি’র মতো সংগীত। ড. মুনীর চৌধুরী জেলে বসে রচনা করেন ‘কবর’ নাটক, জহির রায়হান রচনা করেন ‘আরেক ফাল্গুন’ উপন্যাসটি।

ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পূর্ববাংলায় শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির চর্চায় পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। ভাষা আন্দোলনকে ঘিরে রচিত শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির সে ধারা বাংলার স্বাধীনতার পথ প্রশস্ত করেছিল। স্বাধীন বাংলাদেশে আজও তা আমাদের দেশ মাতৃকার প্রেমে উদ্বুদ্ধ করে।

  • সৃজনশীল প্রশ্ন
  • ১৯৫৪ সালের নির্বাচন

সবুজনগর অঞ্চলের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন প্রভাবশালী দলের নেতাকে মোকাবিলা ও পরাজিত করার জন্য ছোট ছোট দলগুলো একতাবদ্ধ হয়। তারা জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা বাস্তবায়নের জন্য এক সুদীর্ঘ নির্বাচনি ইশতেহার প্রকাশ করে। জনগণ উক্ত জোটের ওপর সার্বিক আস্থা রেখে তাদের পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেন। এর অবশ্যম্ভাবী ফল হিসেবে নির্বাচনে জোটের নেতৃবৃন্দ বিপুল ভোটে জয়ী হন এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতা চরমভাবে পরাজিত হন।
ক. আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রথম সভাপতি কে ছিলেন?
খ. ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ গড়ে তোলা হয় কেন?
গ. সবুজনগর অঞ্চলের ছোট দলগুলো স্বাধীনতাপূর্ব কোন নির্বাচন থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে একতাবদ্ধ হয়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘ক্ষমতাসীন ও প্রভাবশালী হলেই নির্বাচনে জয়ী হওয়া যায় না’-উদ্দীপক ও পাঠ্যপুস্তকের আলোকে উক্তিটির যথার্থতা মূল্যায়ন কর।

সৃজনশীল প্রশ্নর উত্তর
ক আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রথম সভাপতি ছিলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী।
খ দীর্ঘদিন ধরে মুসলিম লীগের এক অংশ যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী ও সংস্কারপন্থি ছিল, তাদের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানি মদদ পুষ্ট প্রতিক্রিয়াশীল অংশ নানাভাবে দমন, নিপীড়ন চালাতে থাকে।

মুসলিম লীগের দ্বিজাতিতাত্ত্বিক ধ্যান-ধারণা থেকে বের হয়ে অসাম্প্রদায়িক বাঙালি রাজনৈতিক নেতৃত্ব ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার রোজ গার্ডেনে এক সম্মেলনের মাধ্যমে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ গঠন করে।

গ সবুজনগর অঞ্চলের ছোট দলগুলো স্বাধীনতাপূর্ব ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচন থেকে শিক্ষাগ্রহণ করে একতাবদ্ধ হয়। ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচন ও যুক্তফ্রন্ট গঠন ছিল বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।

ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের শাসনের চরম ব্যর্থতার ফলে পূর্ব বাংলার সদ্য প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলো মুসলিম লীগকে পরাজিত করার কৌশল হিসেবে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করার পরিকল্পনা নেয়। এ লক্ষ্যে তারা যুক্তফ্রন্ট গঠন করে। মূলত চারটি বিরোধী রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়। যুক্তফ্রন্ট জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা বাস্তবায়নের জন্য ২১ দফা নির্বাচনি ইশতেহার প্রকাশ করে।

এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট ৩০৯টি আসনের মধ্যে ২২৩টি আসন লাভ করে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে। আর ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ পায় মাত্র ৯টি আসন। অনুরূপভাবে উদ্দীপকেও দেখা যায়, সবুজনগর অঞ্চলের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন প্রভাবশালী দলের নেতাকে মোকাবিলা ও পরাজিত করার জন্য ছোট ছোট দলগুলো একতাবদ্ধ হয়।

তারা জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা বাস্তবায়নের জন্য এক সুদীর্ঘ নির্বাচনি ইশতেহার প্রকাশ করে। জনগণ উক্ত জোটের ওপর সার্বিক আস্থা রেখে তাদের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেন। এর অবশ্যম্ভাবী ফল হিসেবে নির্বাচনে জোটের নেতৃবৃন্দ বিপুল ভোটে জয়ী হন এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতা চরমভাবে পরাজিত হন। সবুজনগর অঞ্চলের এই নির্বাচনে ছোট দলগুলোর একতাবদ্ধ হওয়া ১৯৫৪ সালের নির্বাচনের শিক্ষার প্রতিফলন।

ঘ সবুজনগর অঞ্চলের নির্বাচন পাঠ্যবইয়ের ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। উদ্দীপকের সবুজনগর অঞ্চলের নির্বাচনের মতো ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনের মাধ্যমে এ বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে যে, ক্ষমতাসীন ও প্রভাবশালী হলেই নির্বাচনে জয়ী হওয়া যায় না। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মুসলিম লীগ ছিল পুরাতন ও বড় দল।

এছাড়া পূর্ববাংলার প্রাদেশিক সরকার পরিচালনা করত মুসলিম লীগ। কিন্তু ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে মোট ৩০৯টি আসনের মধ্যে যুক্তফ্রন্ট ২২৩টি আসন লাভ করে এবং মুসলিম লীগ পায় মাত্র ৯টি আসন। ১৯৫৪ সালের নির্বাচন ছিল মুসলিম লীগকে বুঝিয়ে দেয়া যে, জনগণ পূর্ববাংলায় মুসলিম লীগকে আর চায় না। তারা যুক্তফ্রন্টের তরুণ নেতৃত্বের প্রতি ঝুঁকে পড়ে।

তারা ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের প্রতি ভোটের মাধ্যমে ধিক্কার জানায়। সর্বোপরি এ নির্বাচনের মাধ্যমে মুসলিম লীগ ও অবাঙালি নেতৃত্বের প্রতি বাঙালির মনে ব্যাপক অনাস্থা জন্মায়। তারা বুঝতে পারে পশ্চিম পাকিস্তানি ও তাদের এদেশীয় দোসরদের দ্বারা বাঙালির প্রকৃত মুক্তি সম্ভব নয়।

ফলে বাঙালি জাতীয়তাবাদী আদর্শের ভিত্তিতে পূর্ববাংলাবাসী স্বায়ত্তশাসনের প্রতি তাদের পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করে। মুসলিম লীগ ক্ষমতাসীন ও প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল হয়েও ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে পরাজিত হয়। সুতরাং এ কথা প্রমাণিত হয় যে, ক্ষমতাসীন ও প্রভাবশালী হলেই নির্বাচনে জয়ী হওয়া যায় না।

  • সৃজনশীল প্রশ্ন
  • অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে বৈষম্য

রিনির বাবা পাকিস্তান আমলে নৌবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন। সে সময়ে খুব কম সংখ্যক বাঙালি তার মতো উচ্চপদে অধিষ্ঠিত হতে পেরেছিলেন। বেশিরভাগ বাঙালি কৃষিকাজে জড়িত ছিল এবং তাদের অর্জিত আয় পশ্চিম পাকিস্তানের উন্নয়নে ব্যয় হতো।

ক. কত তারিখে ভারতের সাথে পাকিস্তানের যুদ্ধ শুরু হয়?
খ. ‘তমদ্দুন মজলিস’ কেন গঠিত হয়েছিল?

গ. উদ্দীপকে পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে কোন বৈষম্যের চিত্র ফুটে উঠেছেÑ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উক্ত পরিস্থিতিই বাঙালিদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের ইন্ধন জুগিয়েছিল- যুক্তিসহ বিশ্লেষণ কর।

সৃজনশীল প্রশ্নর উত্তর
ক ১৯৫৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ভারতের সাথে পাকিস্তানের যুদ্ধ শুুরু হয়।
খ বাংলা ভাষা ও দেশীয় সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখার জন্য ‘তমদ্দুন মজলিস’ গঠন করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল কাশেমের নেতৃত্বে ২ সেপ্টেম্বর তমদ্দুন মজলিস নামক একটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে।

৬-৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত উক্ত সংগঠনের যুবকর্মী সম্মেলনে ‘বাংলাকে শিক্ষা ও আইন আদালতের বাহন’ করার প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। ১৫ সেপ্টেম্বর এই সংগঠন ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা না উর্দু’ নামে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করে। এ সময়ে তমদ্দুন মজলিস ‘ভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করে।

গ উদ্দীপকে পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে বৈষম্যের চিত্র ফুটে উঠেছে। উদ্দীপকের এ বৈশিষ্ট্যটি পশ্চিম পাকিস্তানি শাসন-শোষণ প্রতিষ্ঠার ফলে যে পশ্চিম পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে প্রতিরক্ষা ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বৈষম্য চরম রূপ লাভ করেছিল সে বিষয়কেই নির্দেশ করে। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর স্থল, নৌ ও বিমান বাহিনীতে বাঙালিদের নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে চরম বৈষম্য বিরাজ করছিল।

মোট অফিসারের মাত্র ৫%, সাধারণ সৈনিকদের মাত্র ৪%, নৌবাহিনীর উচ্চপদে ১৯%, নিম্নপদে ৯%, বিমান বাহিনীর পাইলটদের ১১%, টেকনিশিয়ানদের ১.৭% ছিলেন বাঙালি। আর অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পাকিস্তান সরকারের বৈষম্যমূলক নীতির কারণে পূর্ববাংলার চেয়ে পশ্চিম পাকিস্তান অনেক বেশি সুবিধাজনক অবস্থানে ছিল।

বেশিরভাগ বাঙালি কৃষিকাজে জড়িত থাকলেও ব্যবসায়-বাণিজ্য, শিল্প উৎপাদন, কৃষিসহ অর্থনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তান পশ্চিম পাকিস্তানের চেয়ে কয়েকগুণ পিছিয়ে পড়ে। যেমন : ১৯৫৫-৫৬ সাল থেকে ১৯৫৯-৬০ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান লাভ করেছিল মোট বাজেট বরাদ্দের ১১৩ কোটি ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা, অপরদিকে পশ্চিম পাকিস্তান তখন পেয়েছিল ৫০০ কোটি টাকা।

একইভাবে ১৯৬০-৬১ থেকে ১৯৬৪-৬৫ সাল পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানের জন্য বরাদ্দ ছিল ৬,৪৮০ মিলিয়ন টাকা আর পশ্চিম পাকিস্তানের ক্ষেত্রে তা ছিল ২২,২৩০ মিলিয়ন টাকা। উপরিউক্ত তথ্যের ভিত্তিতে বলা যায়, পাকিস্তানের বৈষম্যমূলক নীতির কারণে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে বৈষম্য ছিল ব্যাপক এবং এ বৈষম্যের ফলে বাঙালিরা অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হতে থাকে।

ঘ উক্ত পরিস্থিতিই অর্থাৎ প্রতিরক্ষা ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পাকিস্তানের বৈষম্যমূলক নীতিই বাঙালিদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের ইন্ধন জুগিয়েছিল। ১৯৪৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান দুটি অংশ নিয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয়। তবে শুরু থেকেই পাকিস্তানের শাসনভার পশ্চিম পাকিস্তানের ধনিক গোষ্ঠীর হাতে কেন্দ্রীভূত হওয়ায় পূর্ববাংলার সংস্কৃতি, অর্থনীতি, রাজনীতি ও সমাজ ব্যবস্থাকে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী নিজেদের করায়ত্ত করতে শুরু করে।

অর্থাৎ পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটির সামাজিক কাঠামোর ভিত্তি ছিল সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক ধাঁচের। পূর্ব পাকিস্তানের সমাজ কাঠামো ছিল মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণিভিত্তিক। অন্যদিকে পশ্চিম পাকিস্তানের সমাজকাঠামো ছিল ভূস্বামী, পুঁজিপতি ও মধ্যবিত্ত শ্রেণিভিত্তিক। একই পাকিস্তানের এ দু ধরনের সমাজ কাঠামোর বিপরীতমুখী গতিধারা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিরাট বৈষম্য সৃষ্টি করে।

আইয়ুব শাসনামলে এ বৈষম্য ব্যাপক থেকে ব্যাপকতর হয়। এক্ষেত্রে উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রেই নয় প্রশাসনিক ও শিক্ষা ক্ষেত্রেও বৈষম্য ছিল ব্যাপক। এ পরিস্থিতিতে ১৯৬৬ সালে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের অধিকার রক্ষার জন্য বঙ্গবন্ধু ৬ দফা ঘোষণা করেন। এতে প্রত্যক্ষভাবে স্বাধীনতার কথা বলা না হলেও ৬ দফা কর্মসূচি বাঙালিদের স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছিল।

৬ দফা আন্দোলন কঠোরভাবে দমনের পন্থা গ্রহণ করা হলে বাঙালি জাতির মধ্যে ঐক্যের চেতনা দৃঢ়ভাবে জাগ্রত হয়। পরবর্তীতে ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের ফলে সামরিক শাসক পদত্যাগে এবং ১৯৭০ সালে পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন দিতেও বাধ্য হয়।

এর মধ্য দিয়ে পূর্ব বাংলার জনগণের মধ্যে জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক চিন্তা চেতনার বিকাশ ঘটে এবং ৭০-এর নির্বাচন বাঙালি জাতীয়তাদের রাজনৈতিক অগ্রযাত্রাকে মুক্তিযুদ্ধের চরিত্রদানে বিশাল ভূমিকা রাখে। উপরিউক্ত আলোচনার ভিত্তিতে বলা যায়, পাকিস্তান সরকারের বৈষম্যমূলক নীতিই পর্যায়ক্রমে বাঙালিদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের ইন্ধন যুগিয়েছিল।

  • সৃজনশীল প্রশ্নর উত্তর
  • আগরতলা মামলা

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনীতির চূড়ান্ত লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং বাস্তবতার নিরিখে তার বিশ্বাস ছিল শেষ পর্যন্ত সশস্ত্র সংগ্রাম ব্যতীত বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন করা সম্ভব হবে না।

ক. ঐতিহাসিক আগরতলা মামলায় কতজনকে আসামি করা হয়?
খ. আগরতলা মামলা প্রত্যাহারের আন্দোলন গণআন্দোলনে রূপ নেয় কেন? ব্যাখ্যা কর।

গ. বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্য ও বিশ্বাস তাকে ষড়যন্ত্রমূলক কোন মামলায় আসামি করেছিল? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উক্ত মামলার ফলাফল স্পষ্ট করে দিয়েছিল বাংলার মুক্তির দূত ছিলেন বঙ্গবন্ধু- বিশ্লেষণ কর।

সৃজনশীল প্রশ্নর উত্তর
ক ঐতিহাসিক আগরতলা মামলায় ৩৫ জনকে আসামি করা হয়।
খ বিচারের উদ্দেশ্যে গঠিত এবং ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে প্রতিষ্ঠিত বিশেষ ট্রাইব্যুনালে ১৯৬৮ সালের ১৯ জুন তারিখে আগরতলা মামলার শুনানি শুরু হয়। মামলা শুরু হওয়ার পর তা প্রত্যাহারের জন্য আন্দোলন শুরু হয় এবং ছাত্রসমাজের ১১ দফার ভিত্তিতে কৃষক-শ্রমিক-ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গণআন্দোলনে রূপ লাভ করে।

৬ দফা ও ১১ দফা আন্দোলনের ফলে যে গণজাগরণ সৃষ্টি হয় তারই ধারাবাহিকতায় ‘ঐতিহাসিক আগরতলা মামলা’ বাঙালিদের স্বাধীনতার দিকে ধাবিত করতে অনুপ্রেরণা জোগায়। ফলে আগরতলা মামলা প্রত্যাহারের আন্দোলন গণআন্দোলনে রূপ নেয়।

গ উদ্দীপকে উল্লিখিত বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্য ও বিশ্বাসই তাকে ঐতিহাসিক আগরতলা মামলার আসামি করেছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনীতির চূড়ান্ত লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং তার বিশ্বাস ছিল শেষ পর্যন্ত সশস্ত্র সংগ্রাম ব্যতীত বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন করা সম্ভব হবে না।

তাই তিনি সশস্ত্র পন্থায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য সে সময়ে গোপনে গঠিত বিপ্লবী পরিষদের সদস্যদের তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সম্মতি দিয়েছিলেন। বিপ্লবী পরিষদের পরিকল্পনা ছিল একটি নির্দিষ্ট রাতে এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ে বাঙালিরা বিভিন্ন গ্র“পে বিভক্ত হয়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সবগুলো ক্যান্টনমেন্টে কমান্ডো স্টাইলে হামলা চালিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানিদের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে তাদের বন্দি করবে এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করবে।

পরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত হওয়ার আগেই তা ফাঁস হয়ে যাওয়ার কারণে ঐতিহাসিক আগরতলা (‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান এবং অন্যান্য’) মামলা দায়ের হয়। এ মামলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে এক নম্বর আসামি করা হয়। এছাড়া রাজনীতিবিদ, বেসামরিক সরকারি কর্মকর্তা, সামরিক ও প্রাক্তন সামরিক কর্মকর্তা এবং অন্যান্য বেসামরিক ব্যক্তিবর্গসহ মোট ৩৫ জনকে আসামি করা হয়।

তাঁদের বিরুদ্ধে পাকিস্তান দণ্ডবিধি ১২১-এ ও ১৩১ ধারায় তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানকে সশস্ত্র পন্থায় স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করার অভিযোগ আনা হয়।

ঘ আগরতলা মামলায় ঐতিহাসিক ফলাফল প্রমাণ করে দিয়েছিল বাংলার মুক্তির দূত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মামলা শুরু হওয়ার পর তা প্রত্যাহারের জন্য আন্দোলন শুরু হয়। বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা ভিত্তিক আন্দোলনে জনতা আগে থেকেই ছিল রাজপথে। ছাত্রসমাজের ১১ দফা আন্দোলন তার সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়। ১৯৬৯ সালে আন্দোলন তাই ব্যাপক রূপ লাভ করে।

পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে ১৯৬৯ সালে সব চাইতে গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলন সংঘটিত হয়। সকল গণতান্ত্রিক দল, পেশাজীবী সংগঠন ও মানুষ যার যার অবস্থান থেকে এই আন্দোলনে যুক্ত হয়। এই আন্দোলনে যুক্ত হতে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আসাদুজ্জামান আসাদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. শামসুজ্জোহা শহিদ হন।

প্রদেশব্যাপী ছাত্র, শিক্ষক, কৃষক, শ্রমিকসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ তখন রাস্তায় নেমে আসে। অবশেষে ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্র“য়ারি আইয়ুব খান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে বাধ্য হন। অন্যান্য নেতৃবৃন্দকেও মুক্তি দেওয়া হয়। আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।

২৩ ফেব্র“য়ারি রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে শেখ মুজিবকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সেখানে তাকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। বাঙালি জাতি তার মুক্তির দূত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বরণ করে নেয় এবং স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখতে থাকে।

ANSWER SHEET

যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে।

এগুলো দেখুন

SSC ফ্রি PDF ব্যবসায় উদ্যোগ: MCQ উত্তরসহ

SSC ফ্রি PDF ব্যবসায় উদ্যোগ: MCQ উত্তরসহ

SSC ফ্রি PDF ব্যবসায় উদ্যোগ: MCQ উত্তরসহ বহুপদী সমাপ্তিসূচক বহুনির্বাচনি প্রশ্নোত্তর ১. রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় যে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *