ভ্রমণে আগ্রহী পর্যটকদের জন্য প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে তার দরজা খুলছে সৌদি আরব। মধ্যপ্রাচ্যের এই রক্ষণশীল দেশটি ২০ ডিসেম্বর নতুন ই-ভিসা কার্যক্রম ঘোষণা করেছে, যার আওতায় ৪৯টি দেশের মানুষ দেশটিতে প্রবেশের অনুমতি পাবে এবং সর্বোচ্চ তিন মাস পর্যন্ত থাকতে পারবে।
সৌদি আরবের ভিসা প্রোগ্রাম সে দেশের অর্থনৈতিক সংস্কার পরিকল্পনার একটি অংশ। তেলের ওপর দেশটির নির্ভরতা কমানোর লক্ষ্যে সৌদি আরবের বর্তমান নেতা প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান পর্যটন ভিসা কর্মসূচির প্রবর্তন করেন।
সৌদি আরব নিয়ে অধ্যয়নরত প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক বার্নার্ড হেকেল নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, ‘ধর্মীয় উদ্দেশ্যে আগত পর্যটকদের সম্পর্কে সৌদি কর্তৃপক্ষের ইতিমধ্যে বেশ অভিজ্ঞতা রয়েছে। তবে সংস্কৃতি, মরুভূমি—এসব নিয়ে পর্যটন নতুন এবং বহির্বিশ্বের নিজেদের আরও বেশি করে তুলে ধরার একটি উপায়।
- আরো পড়ুন: দুবাই থেকে নিউইয়র্ক যাওয়া ২৬ মিনিটে !
- আরো পড়ুন: দুবাই টুরিস্ট ভিসা প্রসেসিং লিংক সহ এ টু জেড
- আরো পড়ুন: K ভিসা আবেদনকারী
এর আগে সৌদিতে কর্মরত প্রবাসী, ব্যবসায়ীদের মধ্যে ভিসা সীমাবদ্ধ ছিল এবং হজ ও ওমরাহ পালনের জন্য ভ্রমণকারী মুসলমানদের জন্য ভিসা ইস্যু করা হত। এই কর্মসূচির মাধ্যমে আমেরিকা, কানাডাসহ বেশির ভাগ ইউরোপীয় দেশ এবং চীনসহ ৪৯টি দেশের মানুষ তাদের সফরের আগে অথবা সৌদিতে পৌঁছে ‘অন-অ্যারাইভাল’ ভিসার জন্য আবেদন করে ভ্রমণ করতে পারবেন।
এই ৪৯টি দেশের ১৮ বছরের বেশি বয়সী নাগরিকেরা visa.visitsaudi.com এই ওয়েবসাইটে গিয়ে নিবন্ধন করে ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। অন-অ্যারাইভাল ভিসার ক্ষেত্রে দেশটিতে পৌঁছানোর আধা ঘণ্টার মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ভিসা ফি ৪৪০ সৌদি রিয়াল (১১৭ ইউএস ডলার) এবং এতে একটি স্বাস্থ্যবিমা ফি অন্তর্ভুক্ত। ১৮ বছরের কম বয়সী আবেদনকারীদের অবশ্যই একজন প্রাপ্তবয়স্ক অভিভাবকের সঙ্গে আবেদন করতে হবে।
ভিসা প্রোগ্রামের অন্তর্ভুক্ত নয়, এমন দেশের নাগরিকদের সৌদি দূতাবাস বা তাদের নিকটতম কনস্যুলেটে যোগাযোগ করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। সিঙ্গেল এন্ট্রিসহ ভিসাপ্রাপ্তদের এক মাস ওই দেশে থাকতে দেওয়া হবে এবং একাধিক এন্ট্রি ভিসা যাদের রয়েছে, তাদের তিন মাস পর্যন্ত থাকতে দেওয়া হবে। রক্ষণশীল দেশটির কিছু বিধিনিষেধ পর্যটকদের ক্ষেত্রেও থাকবে। সৌদি আরবে মদ অবৈধ। ফলে মাদক বা মদ নেওয়া অবৈধ।
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময়ে পাবলিক স্পেসে সংক্ষিপ্তভাবে সংগীত এবং অনেক দোকানপাট বন্ধ থাকে। সৌদি টুরিজম ওয়েবসাইট ভ্রমণেচ্ছুদের আরও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে, রমজানের সময় দিনের বেলায় পর্যটকদের প্রকাশ্যে খাওয়া বা পান করা এড়িয়ে চলাটা মুসলিমদের প্রতি সম্মানজনক আচরণের বহিঃপ্রকাশ।
সাইটটি আরও উল্লেখ করেছে, ‘প্রকাশ্যে স্নেহ প্রদর্শন (পিডিএ) স্থানীয় সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এবং দর্শনার্থীদেরও অশ্লীল ভাষা বা অঙ্গভঙ্গি ব্যবহার করা এড়ানো উচিত।’ সৌদি আরব পরিদর্শনে আসা নারী–পুরুষ রক্ষণশীল পোশাক পরবেন বলে আশা করা হচ্ছে। বিশেষত নারীরা জনসমক্ষে কাছে কাঁধ এবং হাঁটু আবৃত রাখবেন বলে সাইটটিতে আশা প্রকাশ করা হয়েছে।
নিয়ম ভাঙার জন্য শাস্তি বা জরিমানা কী হবে, তা পরিষ্কার করে উল্লেখ করা হয়নি সাইটে। উল্লেখ্য, পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের অন্যান্য দেশ থেকে আগত দর্শনার্থীরা, যারা সাংস্কৃতিক রীতিনীতি মেনে চলেনি তাদের অনেককেই কারাবরণ করতে হয়েছে।
এদিকে মহিলা পর্যটকেরা একাই গাড়ি চালাতে পারবেন নাকি পুরুষ সঙ্গী থাকলে চালাতে পারবেন, পর্যটন কমিশন তা সুনির্দিষ্ট করেনি। তবে টুরিজম কমিশন বলছে, ভ্রমণের সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে গাড়ি। কমিশন পর্যটকদের গাড়ি ভাড়া নিতে উৎসাহ দিচ্ছে। গাড়ি পরিষেবা উবার ও কেরেম, পাশাপাশি ট্রেন ও বাস সম্পর্কিত সব তথ্য দর্শনার্থীরা ওয়েবসাইটেই পেয়ে যাবেন।
কেবল মুসলিমদেরই পবিত্র মক্কা ও মদিনা নগরে যেতে অনুমতি দেওয়া হবে। তবে সৌদি অন্তর্ভুক্ত ইউনেসকো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলো সবার জন্য উন্মুক্ত। যেমন সৌদি রাজ্যের প্রথম রাজধানী আদ-দিরিয়ায় আত-তুরাইফ জেলা, ঐতিহাসিক জেদ্দা, মক্কার প্রবেশদ্বার, আল-আহসা মরূদ্যান ও হাইল অঞ্চল, যেখানে মানব ও প্রাণী জগতের ১০ হাজার বছরের পুরোনো শিলালিপি রয়েছে, এমন সব ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শনে পর্যটকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে।
সৌদি আরবের বিনিয়োগ কর্তৃপক্ষ, পর্যটন ও জাতীয় ঐতিহ্য কমিশন ২০ ডিসেম্বর বলেছে, তারা বিমানবন্দর, হোটেল ও রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে হোটেল, একটি স্কি স্লোপ ও স্নো পার্ক, একটি ওয়াটার পার্ক, শপিং মলসহ দেশজুড়ে পর্যটন-বান্ধব স্থান নির্মাণে উন্নয়ন চুক্তি করেছে।
- আরো পড়ুন: আমেরিকা যাওয়ার ডকুমেন্টস ডেলিভারির ঠিকানা নির্বাচন
- আরো পড়ুন: আমেরিকার ভিসা অনুমোদন এবং ইস্যুর পরবর্তী ধাপ
- আরো পড়ুন: আমার পাসপোর্ট ট্র্যাক করা, পাসপোর্ট/ভিসা সংগ্রহ করার স্থান
সৌদি পর্যটন কমিশন ২০৩০ সালের মধ্যে শীর্ষ পাঁচটি গন্তব্যের একটি দেশ হিসেবে সৌদিকে গড়ে তুলতে ভ্রমণ ও পর্যটন শিল্পের বেসরকারি ক্ষেত্রের প্রতিনিধিত্বকারী বিশ্ব ভ্রমণ সংস্থা বিশ্ব ভ্রমণ ও পর্যটন কাউন্সিলের সঙ্গেও অংশীদার হয়েছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা সৌদি আরব ভ্রমণকারী পর্যটকদের জন্য সম্ভাব্য প্রতিবন্ধক হিসেবে পর্যটনের আর্থিক ব্যয় এবং দেশজুড়ে ভ্রমণে অসুবিধা তুলে ধরেছেন।
সৌদি অ্যাকটিভিস্ট ও এমআইটির সৌদি বিশেষজ্ঞ হালা আলদোসারি টাইমসকে বলেন, ‘পাবলিক রেস্ট রুম, মহাসড়ক,এসব সমস্যা পশ্চিমা পর্যটকদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিতে পারে। সূত্র: প্রথম আলো
যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন। এবং আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে।