PDF এসএসসি‘অর্থনীতির বোর্ড ও সেরা স্কুলের সৃজনশীল প্রশ্ন-উত্তর
বোর্ড ও সেরা স্কুলের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন- ১ অর্থনৈতিক সম্পদ
আবেদ একজন চা বিক্রেতা। শেখাহার বাজারে প্রতিদিন চা বিক্রয় করে জীবিকা নির্বাহ করে। সন্তানেরা প্রতিদিন টিভি দেখার জন্য পাশের বাড়িতে যায়। এতে তার মন খারাপ হয়। নির্বাচনের কারণে গত কয়েকদিন ভালো চা বিক্রয় হওয়ায় সন্তানেরা টিভির জন্য বায়না ধরে। সে একটি টিভি ক্রয় করে। [স. বো. ’১৬]
ক. প্রাকৃতিক সম্পদ কী?
খ. হস্তান্তরযোগ্যতা বলতে কী বুঝায়?
গ. প্রথমদিকে আবেদ টিভি ক্রয় করতে সক্ষম হয়নি কেন? অর্থনীতির ভাষায় তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত ক্রয়কৃত টিভিটি কী অর্থনীতিতে সম্পদ? যুক্তিসহ উপস্থাপন কর।
সৃজনশীল উত্তর
ক প্রকৃতির কাছ থেকে প্রাপ্ত যেসব সম্পদ মানুষের প্রয়োজন মেটায় তাই প্রাকৃতিক সম্পদ।
খ সম্পদের একটি বৈশিষ্ট্য হলো এর হস্তান্তরযোগ্যতা। হস্তান্তরযোগ্য বলতে বোঝায় হাত বদল হওয়া। অর্থাৎ যে দ্রব্যের মালিকানা বদল বা পরিবর্তন করা যায় তাই হলো সম্পদ।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিভাকে অর্থনীতির ভাষায় সম্পদ বলা যাবে না। কারণ তার প্রতিভাকে হস্তান্তর বা মালিকানা বদল করা সম্ভব নয়। আবার টিভির মালিকানা বদল করা যায় বলে টিভি সম্পদ।
গ প্রথমদিকে আবেদ প্রয়োজনীয় আর্থিক সামর্থ্যরে অভাবে টিভি ক্রয় করতে সক্ষম হয়নি। এক্ষেত্রে অর্থনীতির ভাষায় বলা যায়, আবেদ চাহিদার অভাবে টিভি ক্রয় করতে সক্ষম হয়নি। উদ্দীপকে চা বিক্রেতা আবেদের প্রথমদিকেও টিভি কেনার আকাক্সক্ষা ছিল।
কেননা তার সন্তানেরা প্রতিদিন টিভি দেখার জন্য পাশের বাড়িতে গেলে তার মন খারাপ হয়। কিন্তু অর্থনীতির ভাষায় আমাদের সব আকাক্সক্ষাই চাহিদা নয়। অর্থনীতিতে চাহিদা হতে হলে তিনটি শর্ত পূরণ করতে হয়।
যেমন- ১. কোনো দ্রব্য পাওয়ার ইচ্ছা বা আকাক্সক্ষা, ২. ক্রয়ের জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক সামর্থ্য এবং ৩. অর্থ ব্যয় করে দ্রব্যটি ক্রয়ের ইচ্ছা।
সুতরাং, ক্রেতার একটি পণ্য নির্দিষ্ট সময়ে কেনার আকাক্সক্ষা, সামর্থ্য এবং নির্দিষ্ট মূল্যে দ্রব্যটি ক্রয় করার ইচ্ছা থাকলে তাকে অর্থনীতিতে চাহিদা (Demand) বলে। উদ্দীপকে আবেদের টিভি ক্রয়ের আকাক্সক্ষা ও ইচ্ছা ছিল কিন্তু সামর্থ্য ছিল না।
ঘ উদ্দীপকে বর্ণিত ক্রয়কৃত টিভিটি অর্থনীতিতে সম্পদ। কোনো জিনিসকে যদি অর্থনীতিতে সম্পদ বলতে হয় তবে তার চারটি বৈশিষ্ট্য থাকা আবশ্যক।
বৈশিষ্ট্যগুলো হলো- ১. উপযোগ : উপযোগ বলতে বোঝায় কোনো দ্রব্যের মানুষের অভাব মেটানোর ক্ষমতা। কোনো দ্রব্য সম্পদ হতে হলে সেই দ্রব্যের উপযোগ সৃষ্টির ক্ষমতা থাকতে হবে। টিভি দেখার উপযোগ মানুষের রয়েছে। ২. অপ্রাচুর্যতা : কোনো দ্রব্য সম্পদ হতে হলে তার পরিমাণ ও যোগান সীমিত থাকবে।
যেমন : নদীর পানি, বাতাস প্রভৃতির যোগান প্রচুর। এগুলো সম্পদ নয়। এক্ষেত্রে টিভি চাইলেই প্রচুর পাওয়া সম্ভব নয়। অর্থাৎ টিভি আমাদের কাছে অপর্যাপ্ত দ্রব্য।
৩. হস্তান্তরযোগ্য : সম্পদের একটি বৈশিষ্ট্য হলো এর হস্তান্তরযোগ্যতা। হস্তান্তরযোগ্য বলতে বোঝায় হাত বদল হওয়া। অর্থাৎ যে দ্রব্যের মালিকানা বদল বা পরিবর্তন করা যায় তাই হলো সম্পদ।
যেমন : উদ্দীপকে আবেদ টিভি ক্রয় করে তার মালিক হয়েছে। ৪. বাহ্যিকতা : যে সমস্ত দ্রব্য মানুষের অভ্যন্তরীণ গুণ বোঝায় তা অর্থনীতির ভাষায় সম্পদ নয়। টিভির বাহ্যিক অস্তিত্ব রয়েছে। সুতরাং, সম্পদের চারটি বৈশিষ্ট্যই পূরণ করে বলে টিভি অর্থনীতিতে সম্পদ।
- উত্তর ডাউনলোড করুন> PDF এসএসসি‘অর্থনীতির বোর্ড ও সেরা স্কুলের বহুনির্বাচনি প্রশ্নোত্তর
- উত্তর ডাউনলোড করুন> এসএসসি‘ দ্বিতীয় অধ্যায়।। অর্থনীতির বর্ণনামূলক প্রশ্নোত্তর(PDF)
- উত্তর ডাউনলোড করুন> এসএসসি‘ দ্বিতীয় অধ্যায়।। অর্থনীতির সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর(PDF)
- উত্তর ডাউনলোড করুন> এসএসসি‘ দ্বিতীয় অধ্যায় ।। অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ ধারণাসমূহ (PDF)
- উত্তর ডাউনলোড করুন> এসএসসি‘র অর্থনীতি পরিচয় MCQ সেরা স্কুল ও সকল বোর্ড (PDF)
- উত্তর ডাউনলোড করুন> এসএসসি‘ প্রথম অধ্যায় ।। বর্ণনামূলক প্রশ্নোত্তর (PDF)
- উত্তর ডাউনলোড করুন> এসএসসি‘ প্রথম অধ্যায় ।। সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (PDF)
- উত্তর ডাউনলোড করুন> SSC ৩য় অধ্যায় পৌরনীতি আইন,স্বাধীনতা ও সাম্য পরিচিতি(PDF)
সৃজনশীল প্রশ্ন-২
অর্থনৈতিক ও অ-অর্থনৈতিক কার্যাবলি
স্বল্পশিক্ষিত শামীমা তার দুই ছেলে ও দুই মেয়ের লালনপালন ও পারিবারিক যাবতীয় কাজ দেখাশুনা করত। তার স্বামী একটি কারখানায় কাজ করত। স্বামীর আকস্মিক মৃত্যুর পর শামীমা আর্থিক সংকট দূর করার জন্য উক্ত কারখানায় কাজে যোগদান করে। [স. বো. ’১৫]
ক. বিনিয়োগ কী?
খ. সঞ্চয় বলতে কী বোঝায়? ব্যাখ্যা কর।
গ. শামীমা প্রাথমিক পর্যায়ে যে সকল কাজ করত, সেগুলো কোন ধরনের কার্যাবলির অন্তর্ভুক্ত? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. দৃশ্যকল্প অনুযায়ী শামীমার পরবর্তী কাজটিই “অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মূল প্রেরণা” উক্তিটির যথার্থতা প্রমাণ করে মতামত দাও।
সৃজনশীল উত্তর
ক মানুষ কর্তৃক সঞ্চিত অর্থ যখন উৎপাদন বাড়ানোর কাজে ব্যবহৃত হয় তখন তাকে বিনিয়োগ বলে।
খ মানুষ আয় করে ভোগ করার জন্য। ভবিষ্যতের কথা ভেবে বর্তমানে অর্জিত আয়ের পুরোটাই মানুষ ভোগ করে না।
আয়ের একটি অংশ রেখে দেয় কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানে। এই রেখে দেওয়া অংশের নাম সঞ্চয়। সঞ্চয়ের ধারণাটি সমীকরণ দিয়ে বোঝানো যায়। যেমন : S = Y – C (যখন Y > C)
এখানে, S = সঞ্চয়, Y = আয়, C= ভোগ ব্যয়।
ব্যক্তির সঞ্চয় নির্ভর করে মূলত আয়ের পরিমাণ, পারিবারিক দায়িত্ববোধ, দূরদৃষ্টি, সামাজিক নিরাপত্তা এবং সুদের হারের ওপর।
গ শামীমা প্রাথমিক পর্যায়ে যেসব কাজ করত তা অ-অর্থনৈতিক কার্যাবলির অন্তর্ভুক্ত। যে সমস্ত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অর্থ উপার্জিত হয় না এবং তা জীবনধারণের জন্য ব্যয় করা যায় না তাকে অ-অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বলা হয়।
এ ধরনের কর্মকাণ্ড মানুষের অভাব পূরণ করলেও অর্থ উপার্জনে ভূমিকা রাখতে পারে না। যেমন : পিতামাতার সন্তান লালনপালন, শখের বশে খেলাধুলা করা ইত্যাদি অ-অর্থনৈতিক কাজের উদাহরণ। উদ্দীপকে স্বল্পশিক্ষিত শামীমাও প্রাথমিক পর্যায়ে তার দুই ছেলে ও দুই মেয়ের লালনপালন ও পারিবারিক যাবতীয় কাজ দেখাশুনা করত। যার সাথে অর্থ উপার্জনের কোনো সম্পর্ক নেই। তাই শামীমার প্রাথমিক পর্যায়ের কাজগুলো অ-অর্থনৈতিক কার্যাবলির অন্তর্ভুক্ত।
ঘ দৃশ্যকল্প অনুযায়ী শামীমার পরবর্তী কাজটি “অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মূল প্রেরণা। এক্ষেত্রে আমরা দেখি স্বামীর আকস্মিক মৃত্যুর পর শামীমা আর্থিক সংকট দূর করার জন্য কারখানায় কাজে যোগদান করে। অর্থাৎ আর্থিক সংকট দূর করাই “অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মূল প্রেরণা”। বেঁচে থাকার জন্য মানুষ নানাবিধ কাজ করে।
এসব কাজের মূল লক্ষ্য হলো জীবিকা সংগ্রহ করা। জীবিকার জন্য কেউ কল-কারখানায়, কেউ অফিস বা কেউ জমিতে কাজ করে। মানুষ জীবিকা সংগ্রহের জন্য যে কার্যাবলি করে থাকে তাকে অর্থনৈতিক কার্যাবলি বলা হয়। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে মানুষ অর্থ উপার্জন করে এবং জীবন ধারণের জন্য তা ব্যয় করে।
যেমন : শ্রমিকরা কলকারখানায় কাজ করে, কৃষকরা জমিতে কাজ করে, ডাক্তার রোগীদের চিকিৎসা করে, শিল্পপতিরা শিল্পপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেÑ এগুলো হলো অর্থনৈতিক কাজ। মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মূল প্রেরণা হলো দ্রব্যসামগ্রীর অভাব পূরণ করা। এক্ষেত্রে অর্থই মাধ্যম। তাই এভাবেও বলা যায়, মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মূল প্রেরণা আর্থিক সংকট দূর করা। দৃশ্যকল্পে যা শামীমার পরবর্তী কাজে ধরা পড়েছে।
সৃজনশীল প্রশ্ন- ৩
সুযোগ ব্যয় ও নির্বাচন
আনোয়ার মিয়ার ৫ বিঘা জমি আছে। এই জমিতে ৪০ মণ ধান অথবা ২০ মণ পাট উৎপাদন করতে পারেন। কিন্তু তার দুটোই চাই। এ কারণে তিনি ২০ মণ ধান এবং ১০ মণ পাট উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। [বরিশাল সরকারি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়]
ক. সুন্দরবনের আয়তন কত?
খ. বাংলাদেশের প্রাকৃতিক গ্যাসের অবস্থান, মজুদ ও ব্যবহারের বর্ণনা দাও।
গ. আনোয়ার মিয়ার ধান-পাট উৎপাদনের ধারণাটি চিত্রে উপস্থাপন করে ব্যাখ্যা কর।
ঘ. আনোয়ার মিয়ার দুটি দ্রব্য উৎপাদনের অর্থনৈতিক তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর। ৪
সৃজনশীল উত্তর
ক সুন্দরবনের আয়তন ৬,০১৭ বর্গকিলোমিটার।
খ প্রাকৃতিক গ্যাস বাংলাদেশের প্রধান খনিজ সম্পদ। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ২৫টি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। এখানে গ্যাসের মোট মজুদ প্রায় ১৬ বিলিয়ন ঘনফুট।
বর্তমানে কেবল ১৯টি গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলিত হচ্ছে। এ গ্যাস রাসায়নিক সার তৈরিতে কাঁচামালরূপে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে, কলকারখানা ও গৃহে এ গ্যাস জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
গ আনোয়ার মিয়া ৫ বিঘা জমিতে ৪০ মণ ধান অথবা ২০ মণ পাট উৎপাদন করতে পারেন। এই দুটি দ্রব্যের মধ্যে যেকোনো একটিকে বেছে নেওয়া হলো ‘সুযোগ ব্যয়’। কিন্তু আনোয়ার মিয়া দুটি দ্রব্যই উৎপাদন করতে চান। এক্ষেত্রে দুটি দ্রব্য উৎপাদন করার ধারণাই হলো নির্বাচন। আনোয়ার মিয়ার ধান-পাট উৎপাদনের ধারণার চিত্রটি নি¤œরূপ :
চিত্রে OX অক্ষে ধান এবং OY অক্ষে পাট দেখানো হয়েছে।
আনোয়ার মিয়ার সব সম্পদ যদি পাট উৎপাদনের জন্য ব্যয় করা হয় তবে ঙঅ পরিমাণ পাট অর্থাৎ ২০ মণ পাট উৎপাদন করতে পারবেন। আবার যদি শুধু ধান উৎপাদন করতে চান তবে ঙই পরিমাণ ধান অর্থাৎ ৪০ মণ ধান উৎপাদন করতে পারবেন।
অ ও ই বিন্দু সংযোগকারী অই রেখাটি হলো উৎপাদন সম্ভাবনা রেখা বা Production Posibility Curve। এক্ষেত্রে আনোয়ার মিয়া ধান ও পাট দুটিই উৎপাদন করতে চায়। তাই তিনি পুরো সম্পদ ব্যয় করে ON পরিমাণ পাট।
অর্থাৎ ১০ মণ পাট এবং OM পরিমাণ ধান অর্থাৎ ২০ মণ ধান উৎপাদন করতে পারবেন। উৎপাদন সম্ভাবনা রেখা ক বিন্দু এই অবস্থা দেখায়। আনোয়ার মিয়া ইচ্ছে করলে পাটের পরিমাণ কমিয়ে N1 এবং ধানের উৎপাদন বাড়িয়ে OM1 উৎপাদন করতে পারেন।
ঘ আনোয়ার মিয়ার ধান ও পাট উৎপাদনের অর্থনৈতিক তাৎপর্য রয়েছে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কৃষি তথা ধান ও পাট উৎপাদনের ধারণাটির কার্যকারিতা অর্থবহ এবং ফলপ্রসূ। মানুষের জীবনে অভাব অসীম, কিন্তু তা পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ নিতান্তই কম।
সম্পদের এ সীমাবদ্ধতার জন্য মানুষ কিছু অভাব পূরণ করলে অন্যগুলো তার হাতছাড়া হয়। কিন্তু সুন্দরভাবে জীবনযাপনের জন্য অনেক অভাব পূরণের প্রয়োজন পড়ে। সেক্ষেত্রেও মানুষ অভাব নির্বাচন করে। অভাব নির্বাচন করতে গিয়ে যেগুলো অধিক প্রয়োজন সে অভাবগুলো মানুষ আগে পূরণ করে। এক্ষেত্রেও মানুষ অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়।
সম্পদ কম বলে তাকে অধিক প্রয়োজনীয় অভাবের মধ্যেও অভাব নির্বাচন করতে হয়। কিন্তু অতি প্রয়োজনীয় অভাবগুলোর মধ্যে একটির বদলে অন্য অভাবটি পূরণ করে।
এর ফলে জীবন সুন্দর ও স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ হয়। এ অবস্থার প্রেক্ষিতে দেখা যায়, মানুষ দুটি প্রয়োজনীয় অভাবের মধ্যে একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটি পূরণের চেষ্টা করে না বরং সে তার সীমিত অর্থ দিয়ে দুটি দ্রব্যের অভাবই অল্প অল্প করে পূরণ করে। উপর্যুক্ত আলোচনায় প্রমাণিত হয় আনোয়ার মিয়ার দুটি দ্রব্য উৎপাদনের যথেষ্ট অর্থনৈতিক তাৎপর্য রয়েছে।
সৃজনশীল প্রশ্ন-৪
সম্পদের শ্রেণিবিভাগ ও দ্রব্য
রানার লেখা কবিতা সাপ্তাহিক ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হওয়ায় বন্ধুরা তার অনেক প্রশংসা করল। রানার বাবাও খুব খুশি হলো এবং তাকে একটি নতুন ড্রেস কিনে দিল। এতে রানা খুব আনন্দিত হলো। [কামরুন্নেসা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ঢাকা]
ক. সঞ্চয় কী?
খ. অর্থনৈতিক কার্যাবলি কাকে বলে? ব্যাখ্যা কর।
গ. রানার বাবা রানাকে যে উপহারটি দেয় সেটি অর্থনীতিতে কী ধরনের দ্রব্য? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. রানার কাজটি কী সম্পদ? তোমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।
সৃজনশীল উত্তর
ক বর্তমান আয়ের যে অংশ ভোগ না করে মানুষ ভবিষ্যতের জন্য রেখে দেয় তা-ই সঞ্চয়।
খ অর্থনৈতিক কার্যাবলি বলতে মানুষের জীবিকা সংগ্রহের জন্য সম্পাদিত কার্যাবলিকে বোঝায়।
অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে মানুষ অর্থ উপার্জন করে এবং জীবনধারণের জন্য তা ব্যয় করে। যেমন শ্রমিকরা কলকারখানায় কাজ করে, কৃষকরা জমিতে কাজ করে, ডাক্তার রোগীর চিকিৎসা করে প্রভৃতি। এগুলো সবই অর্থনৈতিক কার্যাবলি।
গ রানার বাবা রানাকে উপহার হিসেবে যে নতুন ড্রেসটি কিনে দেয়, অর্থনীতিতে তা ভোগ্য দ্রব্য নামে পরিচিত। মানুষের অভাব মেটানোর ক্ষমতাসম্পন্ন বস্তুগত ও অবস্তুগত সব জিনিসকে আমরা অর্থনৈতিক দ্রব্য বলে থাকি। অর্থাৎ যে জিনিসের উপযোগ আছে অর্থনীতিতে তাই দ্রব্য।
এসব দ্রব্যকে অভাব মেটানোর ক্ষমতানুযায়ী বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ভোগ্যদ্রব্য এর মধ্যে একটি। ভোগ বা ব্যবহারের মাধ্যমে যেসব দ্রব্যের উপযোগ নিঃশেষ করা হয়, তাদেরকে ভোগ্যদ্রব্য বলে।
যেমন- গাড়ি, বস্ত্র প্রভৃতি। উদ্দীপকে রানার বাবা তার কাজে খুশি হয়ে ছেলেকে একটি ড্রেস কিনে দিয়েছে। এই দ্রব্যটি ব্যবহার বা ভোগের মাধ্যমে এর উপযোগ নিঃশেষ হবে। তাই অর্থনীতির দৃষ্টিতে এ দ্রব্যটি একটি ভোগ্যদ্রব্য।
ঘ অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে রানার কাজটি সম্পদ নয়, তবে এটি এক ধরনের মানবিক সম্পদ। অর্থনীতিতে চারটি বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন বস্তুগত বা অবস্তুগত দ্রব্যসামগ্রীকে সম্পদ বলা হয়। এগুলো হলো- উপযোগ, অপ্রাচুর্যতা, হস্তান্তরযোগ্যতা এবং বাহ্যিকতা।
কিন্তু রানার কাজটির এ চারটি বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায় না। রানা একজন প্রতিভাবান ছাত্র। তার লেখা কবিতা ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে। কবিতা লেখার কাজটি এক ধরনের যোগ্যতা বা দক্ষতা। এটি হস্তান্তরযোগ্য নয় বা এর কোনো বাহ্যিকতা নেই। তাই অর্থনীতিতে এটি সম্পদ নয়।
তবে মানুষের বিভিন্ন প্রকার যোগ্যতা বা দক্ষতাকে মানবিক সম্পদ বলা হয়, যেমন- শারীরিক যোগ্যতা, প্রতিভা, উদ্যোগ, দক্ষতা, সাংগঠনিক ক্ষমতা ইত্যাদি। এই দৃষ্টিকোণ থেকে রানার কাজটিকে মানবিক সম্পদ বলা যেতে পারে। পরিশেষে বলা যায়, সম্পদ হওয়ার বৈশিষ্ট্যগুলো না থাকার কারণে রানার কাজটি অর্থনীতিতে সম্পদ নয়।
মাস্টার ট্রেইনার প্রণীত সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
সৃজনশীল প্রশ্ন- ৫
সম্পদের শ্রেণিবিভাগ
রূপগঞ্জ উপজেলার মেধাবী ছাত্র জহির খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগ থেকে এমএ পাস করেন। তিনি বহুমুখী গুণসম্পন্ন একজন মানুষ। তবে কবিতা লেখায় তিনি অত্যন্ত পারদর্শী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক কবিতা উৎসবে তিনি বরাবরই প্রথম হতেন। একটি বেসরকারি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে নিজ উদ্যোগে রূপগঞ্জে একটি কলেজ স্থাপন করে স্থায়ীভাবে সবার দৃষ্টি ও মনে স্থান করে নেন।
ক. অর্থনীতিতে সম্পদ কী?
খ. সম্পদের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা কর।
গ. জহির খানের কবিতা লেখার পারদর্শিতা কোন ধরনের সম্পদ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘জহির খানের স্থাপিত কলেজটি একটি উৎপাদিত সম্পদ’- মন্তব্যটির সত্যতা যাচাই কর।
সৃজনশীল উত্তর
ক যেসব জিনিস বা দ্রব্য পেতে হলে অর্থ ব্যয় করতে হয় অর্থনীতিতে তাই সম্পদ।
খ উপযোগ সম্পদের প্রধান বৈশিষ্ট্য। কোনো দ্রব্যের অভাব মোচনের ক্ষমতাকে উপযোগ বলে। অর্থাৎ উপযোগ বলতে কোনো দ্রব্যের উপকারিতাকে বোঝায়।
যেকোনো দ্রব্য তা বস্তুগত বা অবস্তুগত হোক, তা যদি মানুষের কোনো অভাব পূরণ করতে পারে তা হলে বোঝা যায়, দ্রব্যটির উপযোগ আছে। যেমন- খাদ্য, বস্ত্র, বইপত্র, কলম ইত্যাদি।
গ জহির খানের প্রতিভা মানবিক সম্পদ। উৎপত্তিগত দিক দিয়ে সম্পদের যে শ্রেণিবিভাগ করা হয়েছে তার মধ্যে মানবিক সম্পদ একটি। মানুষের মানবীয় গুণাবলিকে মানবিক সম্পদ বলা হয়। যেমন- শারীরিক যোগ্যতা, প্রতিভা, উদ্যোগ, দক্ষতা, সাংগঠনিক ক্ষমতা ইত্যাদি।
এগুলোর হস্তান্তরযোগ্যতা ও বাহ্যিকতা না থাকার কারণে অর্থনীতিতে সম্পদ হিসেবে গণ্য না হলেও মানবিক সম্পদ বলে বিবেচ্য। উদ্দীপকে জহির খান বহুমুখী গুণসম্পন্ন একজন মানুষ।
তিনি কবিতা লেখায় অত্যন্ত পারদর্শী। বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক কবিতা উৎসবে তিনি বরাবরই প্রথম স্থান অধিকার করতেন। তার এ পারদর্শিতা তার ব্যক্তিগত প্রতিভা, আর এটি মানবীয় গুণাবলির অন্তর্ভুক্ত। তাই জহির খানের কবিতা লেখার পারদর্শিতা মানবিক সম্পদ।
ঘ ‘জহির খানের স্থাপিত কলেজটি একটি উৎপাদিত সম্পদ’- মন্তব্যটি সঠিক। উৎপত্তিগত দিক থেকে সম্পদের যে শ্রেণিবিভাগ করা হয় তার মধ্যে উৎপাদিত সম্পদ একটি।
প্রাকৃতিক ও মানবিক সম্পদ কাজে লাগিয়ে যে সম্পদ সৃষ্টি হয় তাকে উৎপাদিত সম্পদ বা মানুষের তৈরি সম্পদ বলা হয়। যেমন : কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি, কলকারখানা, যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ইত্যাদি।
উদ্দীপকে জহির খান একজন মেধাবী মানুষ। তিনি বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। তার এই মেধা ও প্রতিভা মানবিক সম্পদ। বার্ষিক কবিতা উৎসবে এ সম্পদ ব্যবহার করে তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেছেন।
উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত অবস্থায়ও তিনি এই মানবিক সম্পদ ব্যবহার করেছেন। অবশেষে এই ব্যবহৃত সম্পদের ফলে তিনি যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন সে অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি নিজ এলাকায় কলেজ স্থাপন করেন। কলেজটি যেখানে স্থাপন করা হয় সেই ভূমি বা জমি একটি প্রাকৃতিক সম্পদ।
আর আমরা জানি মানবিক ও প্রাকৃতিক সম্পদ কাজে লাগিয়ে যে সম্পদ সৃষ্টি হয় তা হলো উৎপাদিত সম্পদ। উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, জহির খানের স্থাপিত কলেজটি একটি উৎপাদিত সম্পদ।
সৃজনশীল প্রশ্ন- ৬
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কার্যাবলি
মি. শিহাব একটি খাবার হোটেলের মালিক। এটি পুরনো ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডে অবস্থিত। তার হোটেলের খাবারের গুণগত মান এবং সার্বিক পরিবেশ অত্যন্ত ভালো। ঢাকার এই অঞ্চলে মি. শিহাব সততা এবং সুনামের সাথে প্রায় ২০ বছর ধরে ব্যবসা চালিয়ে আসছেন।
এ সময়ের মধ্যে ব্যবসা করে মি. শিহাব তার সম্পদের বৃদ্ধি ঘটিয়েছেন। বর্তমানে তার হোটেলে প্রায় ৪০ জন লোক কাজ করে। মি. শিহাবের যে সম্পদ রয়েছে তা ব্যবহার করে তিনি তার হোটেল ব্যবসাকে আরো প্রসারিত করতে চান।
ক. উৎপত্তির দিক থেকে সম্পদ কত প্রকার?
খ. ব্যক্তিগত সম্পদ বলতে কী বোঝায়?
গ. অর্থনৈতিক সম্পদের বৈশিষ্ট্যের আলোকে শিহাব সাহেবের ব্যবসার সুনাম ব্যাখ্যা কর।
ঘ. মি. শিহাবের খাবারের হোটেল কি অর্থনৈতিক সম্পদ? উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও।
সৃজনশীল উত্তর
ক উৎপত্তির দিক থেকে সম্পদ ৩ প্রকার।
খ ব্যক্তিগত সম্পদ বলতে ব্যক্তির নিজ মালিকানাধীন সকল সম্পদকে বোঝায়। যেমন, নিজস্ব জমি, ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সুনাম ইত্যাদি ব্যক্তিগত সম্পদের অন্তর্ভুক্ত। ব্যক্তিগত সম্পদের ওপর ব্যক্তির মালিকানা বা অধিকার বজায় থাকে। ব্যক্তি ইচ্ছা করলে এ সম্পত্তি বিক্রি, দান বা নিজে ভোগ করতে পারেন।
গ শিহাবের ব্যবসায়ের সুনামে অর্থনৈতিক সম্পদের সবকটি বৈশিষ্ট্য উপস্থিত আছে।
অর্থনীতিতে যেসব দ্রব্যসামগ্রীর উপযোগ আছে, যার যোগান সীমাবদ্ধ, যা হস্তান্তরযোগ্য এবং যার বাহ্যিকতা আছে তাকে সম্পদ বলে।
কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান একবার সুনাম অর্জন করতে পারলে, সেই সুনামের ওপর ভিত্তি করে তার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বা দৈনন্দিন লেনদেন আগের তুলনায় অনেক গুণ বেড়ে যায়। শিহাবের ব্যবসায়ের প্রতিষ্ঠানটি হলো খাবার হোটেল। সুনাম বৃদ্ধির অর্থ তার পণ্যের গুণগত মান ভালো।
এ গুণগত মানের জন্যই ক্রেতারা অধিক পরিমাণে খাবার ক্রয় করেছে, যা তার অধিক মুনাফা অর্জনের জন্য অত্যন্ত সহায়ক। কোনো কারণে যদি শিহাবের হোটেলটির মালিকানা হস্তান্তরও হয়, তবুও তার প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম রাখার ঝুঁকি নতুন মালিক নেবেন না।
- উত্তর ডাউনলোড করুন> SSC ২য় অধ্যায় পৌরনীতি:সেরা স্কুলের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
- উত্তর ডাউনলোড করুন> (PDF) SSC ২য় অধ্যায় পৌরনীতি:সেরা স্কুলেরMCQ
- উত্তর ডাউনলোড করুন> এসএসসি‘ প্রথম অধ্যায় ।। অর্থনীতি পরিচিতি (PDF)
- উত্তর ডাউনলোড করুন> পৌরনীতি-নাগরিকতা অনুধাবন-জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
- উত্তর ডাউনলোড করুন> এসএসসির (PDF): পৌরনীতি-নাগরিকতা সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
কারণ এ নামটিই তার সম্পদ। এই প্রতিষ্ঠানের নামের সুনামকে পুঁজি করেই পরবর্তী ব্যবসায় আরও প্রসারিত হয়। তাই অর্থনৈতিক বৈশিষ্ট্যের বিচারে শিহাবের ব্যবসায়ের সুনামে সম্পদের সবকটি বৈশিষ্ট্যই উপস্থিত রয়েছে।
ঘ মি. শিহাবের খাবারের হোটেল একটি অর্থনৈতিক সম্পদ। অর্থনীতিতে সম্পদ বলতে যেসব দ্রব্যসামগ্রীকে বোঝায়, সেগুলো পেতে গেলে অর্থ ব্যয় করতে হয়।
যেমন- ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র, টিভি ইত্যাদি দৃশ্যমান বা বস্তুগত সম্পদ এবং ডাক্তারের সেবা অদৃশ্যমান বা অবস্তুগত সম্পদ। সম্পদের উল্লিখিত সংজ্ঞার আলোকে যেসব দ্রব্যের উপযোগ নেই অর্থের বিনিময়ে ক্রয়-বিক্রয়যোগ্য নয় তা সম্পদ হতে পারে না।
মি. শিহাবের হোটেল ব্যবসায়ের উপযোগ আছে তা অর্থের বিনিময়ে ক্রয়-বিক্রয়যোগ্য। কাজেই তার খাবারের হোটেলকে সম্পদ হিসেবে গণ্য করা যায়। আবার কোনো দ্রব্য সম্পদ হতে হলে তার যোগান চাহিদার তুলনায় অপর্যাপ্ত হতে হবে। মি. শিহাবের হোটেল ব্যবসায় চাহিদার তুলনায় অপর্যাপ্ত হওয়ায় তা সম্পদ।
মি. শিহাবের খাবারের হোটেলের মালিকানা হস্তান্তরযোগ্য। কাজেই তার হোটেলের মালিকানা পরিবর্তন করা যাবে বলে তা সম্পদ। দ্রব্য বাহ্যিক হলে তা হস্তান্তরযোগ্য হয় এবং সম্পদ হিসেবে গণ্য হয়।
যেহেতু মি. শিহাবের ব্যবসায়ের সুনাম, হোটেলের আসবাবপত্র প্রভৃতি হস্তান্তরযোগ্য কাজেই তা সম্পদ। উপর্যুক্ত যুক্তির আলোকে প্রতীয়মান হয়, মি. শিহাবের হোটেল ব্যবসায় একটি অর্থনৈতিক সম্পদ।
যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে।