SSC বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়: সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর (ফ্রি PDF)
সৃজনশীল প্রশ্ন
৬ দফা : পূর্ব বাংলার মুক্তির সনদ
একটি দেশের ‘ক’ নামক প্রদেশের সাথে কেন্দ্রীয় সরকার ব্যাপক বৈষম্যমূলক আচরণ করে। প্রতিবাদে ঐ প্রদেশের একজন জনপ্রিয় নেতা এক সাংবাদিক সম্মেলনে সরকার ব্যবস্থা, প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র, মুদ্রা, বৈদেশিক মুদ্রার হিস্যা ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা বাহিনীসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে স্বায়ত্তশাসনের দাবি পেশ করেন। শুরু হয় আন্দোলন। ফলে উক্ত নেতার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহ মামলা দিয়ে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার শুরু করে।
ক. যুক্তফ্রন্ট সরকার কতদিন ক্ষমতায় ছিলেন?
খ. ভাষা আন্দোলন কীভাবে জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটায়?
গ. উদ্দীপকের আন্দোলনের সাথে তোমার পাঠ্যপুস্তকের যে ঐতিহাসিক ঘটনার মিল রয়েছে তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ঘটনা এবং উক্ত ঘটনার পরিণতি কি একই ছিল? মূল্যায়ন কর।
- উত্তর ডাউনলোড করুন> SSC পূর্ব বাংলার আন্দোলন:গুরুত্বপূর্ণ বহুনির্বাচনি প্রশ্নোত্তর (PDF)
- উত্তর ডাউনলোড করুন>SSC পূর্ব বাংলার আন্দোলন সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর (ফ্রি PDF)
- উত্তর ডাউনলোড করুন>SSC:পূর্ব বাংলার আন্দোলন ও জাতীয়তাবাদের উত্থান
- উত্তর ডাউনলোড করুন> SSC ব্যবসায় উদ্যোগ:অনুধাবন ও জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর (PDF)
- উত্তর ডাউনলোড করুন> নবম-দশম শ্রেণি ব্যবসায় উদ্যোগ:সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর (ফ্রি PDF)
- উত্তর ডাউনলোড করুন> নবম-দশম শ্রেণি:দ্বিতীয় অধ্যায় MCQ (উত্তরসহ ফ্রি PDF)
সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক যুক্তফ্রন্ট সরকার ৫৬ দিন ক্ষমতায় ছিলো।
খ বাঙালির জাতীয়তাবাদের বিকাশে ভাষা আন্দোলন সকলকে ঐক্যবদ্ধ করে। পাকিস্তানের প্রতি ভাষা আন্দোলন পূর্ব যে মোহ ছিল তা দ্রুত কেটে যেতে থাকে। নিজস্ব জাতিসত্তা সৃষ্টিতে ভাষা ও সংস্কৃতির সম্পর্ক এবং গুরুত্ব পূর্ব বাংলার মানুষের কাছে অধিকতর স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
তারা বাঙালি হিসেবে নিজেদের আত্মপরিচয়ে রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি গড়ে তোলার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে থাকে। ভাষাকেন্দ্রিক এই ঐক্যই জাতীয়তাবাদের মূল ভিত্তি রচনা করে, যা পরবর্তী সময়ে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
গ উদ্দীপকে উল্লিখিত আন্দোলনের সাথে আমার পাঠ্যপুস্তকের যে ঐতিহাসিক ঘটনার মিল রয়েছে তা হলো ছয় দফা। ঐতিহাসিক ছয় দফা ছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদের চূড়ান্ত প্রকাশ। এটি ছিল বাঙালির আশা-আকাক্সক্ষার প্রতীক। বাঙালির মুক্তির সনদ। ফলে এ কর্মসূচির প্রতি ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন ছিল।
উদ্দীপকের দিকে লক্ষ করলে আমরা দেখতে পাই, ‘ক’ প্রদেশের নেতা কেন্দ্রীয় সরকারের সকল প্রকার বৈষম্যের বিরুদ্ধে কতগুলো দাবি পেশ করেন এবং এ সকল দাবি আদায়ে আন্দোলন শুরু হয়। তদ্রƒপভাবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকালে উদ্দীপকের ন্যায় ঘটনার পুনরাবৃত্তি লক্ষ করা যায়।
পূর্ব বাংলার অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান পশ্চিম পাকিস্তানের সকল বৈষম্যের হাত থেকে পূর্ব পাকিস্তানকে রক্ষার জন্য ১৯৬৬ সালে ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন। ছয় দফা দাবি পাক শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক প্রত্যাখ্যান করা হলে এ দাবি আদায়ে রাজপথে আন্দোলন শুরু হয়।
উদ্দীপকে উল্লিখিত নেতার দাবিতে প্রদেশের যেসকল বিষয় উঠে এসেছে তেমনি ছয় দফা দাবিতে ঐসকল বিষয়ই তুলে ধরেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। তাই একবাক্যে বলা যায়, উদ্দীপকের ঘটনার সাথে ঐতিহাসিক ছয় দফার ঘটনাটির সাদৃশ্যই বিদ্যমান।
ঘ উদ্দীপকে উল্লিখিত ঘটনার পরিণতিতে আন্দোলন শুরু হলে ‘ক’ নামক এদেশের জনপ্রিয় নেতার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহ মামলা দিয়ে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার শুরু হয়। আমি মনে করি বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৬ দফা দাবিনামার ঘটনার পরিণতিও একই রূপ ছিল। ৬ দফা পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামরিকসহ সকল অধিকারের কথা তুলে ধরে।
আইয়ুব সরকার একে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী কর্মসূচি’ হিসেবে আখ্যায়িত করে। এ কর্মসূচি বাঙালির চেতনা-মূলে বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে প্রত্যক্ষভাবে স্বাধীনতার কথা বলা না হলেও এ ৬ দফা কর্মসূচি বাঙালিদের স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনীতির চূড়ান্ত লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং তাঁর বিশ্বাস ছিল শেষ পর্যন্ত সশস্ত্র সংগ্রাম ব্যতীত বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন করা সম্ভব হবে না।
তাই তিনি সশস্ত্র পন্থায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য সে সময়ে গোপনে গঠিত বিপ্লবী পরিষদের সদস্যদের তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সম্মতি দিয়েছিলেন। এদিকে ৬ দফা আন্দোলনও তখন তুঙ্গে। এ অবস্থায় বাংলার অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে এক নম্বর আসামি করে রাজনীতিবিদ, বেসামরিক সরকারি কর্মকর্তা, সামরিক ও প্রাক্তন সামরিক কর্মকর্তা এবং অন্যান্য বেসামরিক ব্যক্তিবর্গসহ মোট ৩৫ জনকে আসামি করা হয়।
তাঁদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানি দণ্ডবিধির ১২১-এ ও ১৩১ ধারায় তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানকে সশস্ত্র পন্থায় স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করার অভিযোগ আনা হয়। বিচারের উদ্দেশ্যে গঠিত এবং ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে প্রতিষ্ঠিত বিশেষ ট্রাইব্যুনালে ১৯৬৮ সালের ১৯ জুন তারিখে এ মামলার শুনানি শুরু হয়। সুতরাং বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা দাবিনামার পরিণতিতে ঐতিহাসিক আগরতলা মামলার ঘটনা পর্যন্ত ইতিহাসের গতিধারার সাথে উদ্দীপকে ‘ক’ নামক প্রদেশের ঘটনার পরিণতির মিল রয়েছে।
সৃজনশীল প্রশ্ন
ভাষা আন্দোলনের পটভূমি
সুমনের নানা শামসুদ্দিন সাহেব দেশের গল্প শোনাতে গিয়ে সুমনকে একটি আন্দোলনের কথা বললেন যা ৪০ এর দশকে শুরু হয়ে ৫০ এর দশকে শেষ হয়। তিনি পূর্বাপর সকল ঘটনা বর্ণনা করে বললেন, “এতে অনেকে শহিদ হলেও এটি আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের ভিত রচনা করে।”
ক. কাকে ঐতিহাসিক আগরতলা মামলার এক নম্বর আসামি করা হয়?
খ. ৬ দফাকে পূর্ব বাংলার ‘মুক্তির সনদ’ বলা হয় কেন?
গ. উদ্দীপকে সুমনের নানা সুমনকে যে আন্দোলনের কথা শুনালেন তার প্রেক্ষাপট বর্ণনা কর।
ঘ. উক্ত আন্দোলন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ভিত রচনা করে, তুমি কি এ উক্তিটির সাথে একমত? বিশ্লেষণ কর।
সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ঐতিহাসিক আগরতলা মামলার এক নম্বর আসামি করা হয়।
খ ৬ দফা পূর্ববাংলার জনগণের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামরিকসহ সকল অধিকারের কথা তুলে ধরে।
এ কর্মসূচি বাঙালির জাতীয় চেতনার বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে প্রত্যক্ষভাবে স্বাধীনতার কথা বলা না হলেও এ ৬ দফা কর্মসূচি বাঙালিদের স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করে। তাই ৬ দফা আন্দোলনকে পূর্ববাংলা বা বাঙালির মুক্তির সনদ বলা হয়।
গ উদ্দীপকে সুমনের নানা সুমনকে ভাষা আন্দোলনের কথা শোনান। উদ্দীপকে সুমনের নানা শামসুদ্দিন সাহেব ৪০ এর দশক থেকে ৫০ এর দশকে শেষ হওয়া যে আন্দোলনের কথা বলেন তা ’৪৭ থেকে শুরু হয়ে ’৫২ তে পরিণতি লাভ করা ভাষা আন্দোলনকেই নির্দেশ করে। এ আন্দোলনে অনেকে শহিদ হন।
তথ্যটিও ভাষা আন্দোলনের ইঙ্গিতবাহী। ১৯৪৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান এ দুটি অংশ নিয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। তবে শুরু থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানের শাষক গোষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করতে থাকে। আর সংখ্যাগরিষ্ঠের ভাষা হওয়া সত্ত্বেও বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা না করার সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে মাতৃভাষা রক্ষা করার জন্য ভাষা আন্দোলন শুরু হয়।
১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারি ঢাকার পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত জনসভায় পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার নতুন ঘোষণা প্রদান করেন। প্রতিবাদে ছাত্রসমাজ ৩০ জানুয়ারি ধর্মঘট পালন করে। ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ছাত্র ধর্মঘট পালিত হয়। ২১ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘট এবং রাষ্ট্রভাষা দিবস পালন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
কিন্তু ২০ ফেব্রুয়ারি সরকারি এক ঘোষণায় ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। ছাত্রসমাজ ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল বের করলে পুলিশ মিছিলে গুলি করে। এতে আবুল বরকত, জব্বার, রফিক, সালামসহ আরও অনেকে শহিদ হন, আহত হন। বস্তুত ১৯৪৭ সালে সূচিত রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ সালে প্রতিবাদ ও রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে রূপ নেয়।
ঘ উক্ত আন্দোলন অর্থাৎ বাঙালির মাতৃভাষা আন্দোলনই স্বাধীনতা সংগ্রামের ভিত রচনা করে। আমি এ বিষয়ে একমত। পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পাকিস্তানের শাসনভার পশ্চিম পাকিস্তানের ধনিক গোষ্ঠীর হাতে কেন্দ্রীভূত হওয়ায় পূর্ব বাংলার সংস্কৃতি, অর্থনীতি, রাজনীতি ও সমাজ ব্যবস্থাকে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী নিজেদের করায়ত্ত করতে শুরু করে।
এর বিরুদ্ধে পূর্ব বাংলার জনগণ প্রতিবাদ ও আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তোলে। মাতৃভাষা বাংলাকে রক্ষা করার জন্য ভাষা আন্দোলন শুরু হয়। ১৯৪৭ সালে সূচিত রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ সালে প্রতিবাদ ও রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে রূপলাভ করে। ফলে পাকিস্তান সরকার বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়। ভাষা আন্দোলন এ দেশের মানুষকে তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে তোলে।
অর্থাৎ বাঙালির জাতীয়তাবাদের বিকাশে ভাষা আন্দোলন সকলকে ঐক্যবদ্ধ করে। পাকিস্তানের প্রতি আগে যে মোহ ছিল তা দ্রুত কেটে যেতে থাকে। নিজস্ব জাতিসত্তা সৃষ্টিতে ভাষা ও সংস্কৃতির সম্পর্ক এবং গুরুত্ব পূর্ব বাংলার মানুষের কাছে অধিকতর স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বাঙালি হিসেবে নিজেদের আত্মপরিচয়ে রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি গড়ে তোলার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে থাকে।
ভাষাকেন্দ্রিক জাতীয় ঐক্যই বাঙালি জাতীয়তাবাদ। এ বাঙালি জাতীয়তাবাদই অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠনে জনগণকে অনুপ্রাণিত করে। এরই ধারাবাহিকতায় নয় মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম আমাদের প্রাণপ্রিয় বাংলাদেশ। সর্বোপরি আমি মনে করি, ভাষা আন্দোলনই বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ভিত রচনা করে।
- সৃজনশীল প্রশ্ন
- (ভাষা আন্দোলন)
বিরল সম্মান আর শ্রদ্ধার আসনে ২১শে ফেব্রুয়ারি আজ সারাবিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। কিন্তু এ অর্জন সহজ পথে আসেনি। নিজেদের মাতৃভাষায় কথা বলার জন্য, নিজের ভাষায় শিক্ষা অর্জনের অধিকার রক্ষার জন্য এদেশের ছাত্রজনতা রাজপথে নিজেদের বুকের তাজা রক্ত উৎসর্গ করেছিল। এ আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালিরা বিভিন্ন আন্দোলনের সংগ্রামী চেতনা গ্রহণ করেছিল। যার ফল আজকের স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।
ক. কত সালে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন ঘটেছিল?
খ. ‘৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম কারণ কী ছিল? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালিরা কীভাবে জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ হয়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘আন্দোলনের পথ ধরেই আজকের এই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ’ পাঠ্যপুস্তকের আলোকে উক্তিটির যথার্থতা নির্ণয় কর।
সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক ১৯৪৭ সালে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন ঘটেছিল।
খ ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম কারণ ছিল বন্দিদের মুক্তি ও আগরতলা মামলা প্রত্যাহার। পাক শাসকগোষ্ঠীর চরম অত্যাচার ও নির্যাতনে পূর্ববাংলার জনগণ যখন মনে মনে তুষের আগুনের ন্যায় জ্বলছিল ঠিক সে সময় ছয় দফা দাবি প্রত্যাখ্যান ও শেখ মুজিবসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ও শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করায় বাঙালি প্রকাশ্যে প্রতিবাদী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। যা গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। মূলত এ কারণেই ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল।
গ উদ্দীপকে ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারির স্মৃতিবিজড়িত ভাষা আন্দোলনের কথা বলা হয়েছে। ১৯৪৭ সালে সূচিত রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন ১৯৫২ সালে প্রতিবাদ ও রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে রূপ লাভ করে। ফলে পাকিস্তান সরকার বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়। ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের সংবিধানে বাংলা ভাষাকে অন্তর্ভুক্তও করা হয়।
নিজের ইতিহাস, ঐতিহ্য, ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে পূর্ব বাংলার বাঙালি এবং অন্যান্য জনগোষ্ঠী মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সাহস ও আত্মপ্রত্যয় খুঁজে পায়। বাঙালিরা জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ হয়। ফলে দেখা যায়, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পর পঞ্চাশের দশক ব্যাপী ছিল বাঙালিদের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রস্তুতিকাল। ভাষা আন্দোলন পরবর্তীকালে সকল রাজনৈতিক আন্দোলনের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল।
এ আন্দোলন এ দেশের মানুষকে তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে তোলে। এ আন্দোলন বাঙালিদের মধ্যে ঐক্য ও স্বাধীনতার চেতনা জাগিয়ে তোলে। পাকিস্তানি শাসনপর্বে এটি তাদের জাতীয় মুক্তির প্রথম আন্দোলন। আর এভাবে বাঙালিরা ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ হয়।
ঘ ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই আজকের এই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট রাতে ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনের অবসান হয়। জন্ম নেয় ভারত এবং পাকিস্তান নামে দু’টি স্বাধীন রাষ্ট্র। পাকিস্তানের ছিল দু’টি অংশ। পূর্ববাংলা পাকিস্তানের একটি প্রদেশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এ অংশের নাম হয় পূর্ব পাকিস্তান অপর অংশটি পশ্চিম পাকিস্তান হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
তবে শুরু থেকেই পাকিস্তানের শাসনভার পশ্চিম পাকিস্তানের ধনিক গোষ্ঠীর হাতে কেন্দ্রিভূত হওয়ায় পূর্ব বাংলার সংস্কৃতি, অর্থনীতি, রাজনীতি ও সমাজ ব্যবস্থাকে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী নিজেদের করায়ত্ত করতে শুরু করে। এর বিরুদ্ধে পূর্ব বাংলার জনগণ প্রতিবাদ ও আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তোলে। মাতৃভাষা বাংলাকে রক্ষা করার জন্য ভাষা আন্দোলন শুরু হয়।
এর মাধ্যমে পূর্ব বাংলার বাংলা ভাষাভাষী বাঙালি জনগোষ্ঠী ঐক্যবদ্ধ হয়। মাতৃভাষা রক্ষার চেতনা থেকে পূর্ব বাংলার জনগণ ক্রমান্বয়ে পাকিস্তানের সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রাম ও গণঅভ্যুত্থান গড়ে তোলে। ভাষা আন্দোলন ও ’৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান স্বাধীনতা অর্জনের পথে দুটি মাইলফলক।
অতঃপর ঐতিহাসিক ছয় দফার ভিত্তিতে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বাঙালি জাতীয়তাবাদের পক্ষে ভোট প্রদানের মাধ্যমে পূর্ব বাংলার জনগণ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত করে। বাংলা ভাষা, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও বাঙালি জাতিগত পরিচয়ে জাতীয় ঐক্য গঠিত হয়। এই জাতীয় ঐক্যই বাঙালি জাতীয়তাবাদ।
এ বাঙালি জাতীয়তাবাদই অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠনে জনগণকে অনুপ্রাণিত করে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে নয়মাস ব্যাপী রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম আমাদের প্রাণপ্রিয় বাংলাদেশ। তাই প্রশ্নোক্ত উক্তিটি যথার্থ হয়েছে বলে আমি মনে করি।
- সৃজনশীল প্রশ্ন
- (পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি বৈষম্যসমূহ)
ঐশীর বাবা একজন সচিব। তার চাচা সামরিক বাহিনীর একজন পদস্থ অফিসার। দেশের বিভিন্ন স্থানে বসবাসরত তাদের অনেক আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব এবং তাদের এলাকার অনেকেই আজ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। পক্ষান্তরে ঐশীর দাদা মি. রাকিব যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও নিম্ন বেতনভুক্ত কর্মচারী হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শেষ করেছেন। ১৯৫২ ও ১৯৬৯ এর আন্দোলনের ফলে ঐশীরা আজ বাংলাদেশের গর্বিত নাগরিক।
ক. যুক্তফ্রন্ট কতটি দল নিয়ে গঠিত হয়?
খ. মৌলিক গণতন্ত্র নামে একটি ব্যবস্থা চালু করা হয় কেন? ব্যাখ্যা কর।
গ. মি. রাকিবের এই পরিণতির জন্য দায়ী কারণসমূহ সনাক্ত করে ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ১৯৫২ ও ১৯৬৯ এর আন্দোলনের ফলে ঐশীরা আজ বাংলাদেশের গর্বিত নাগরিক উক্তিটির যথার্থতা প্রমাণ কর।
সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক যুক্তফ্রন্ট ৪টি দল নিয়ে গঠিত হয়।
খ সামরিক শাসনকে দীর্ঘস্থায়ী করার লক্ষ্যে আইয়ুব খান মৌলিক গণতন্ত্র নামে একটি ব্যবস্থা চালু করেন। এই ব্যবস্থায় পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান থেকে মোট ৮০ হাজার নির্বাচিত ইউনিয়ন কাউন্সিল সদস্য নিয়ে নির্বাচকমণ্ডলী গঠন হবে।
তাদের ভোটেই রাষ্ট্রপতি, জাতীয় পরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার বিধান রাখা হয়। ফলে এই পরোক্ষ নির্বাচন পদ্ধতিতে আইয়ুব খান খুব সহজেই নিজের সামরিক শাসন পাকাপোক্ত করতে পারেন। এ কারণেই মৌলিক গণতন্ত্র নামে তিনি একটি ব্যবস্থা চালু করেন।
গ মি. রাকিবের এই পরিণতি অর্থাৎ যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও নিম্নবেতনভুক্ত কর্মচারী হিসেবে কর্মজীবন শেষ করার পিছনে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের প্রশাসনিক বৈষম্যই দায়ী। উদ্দীপকে মি. রাকিব তার কর্মজীবন পাকিস্তান আমলে শেষ করেন।
উদ্দীপকে ১৯৫২ ও ১৯৬৯ সালের আন্দোলনের উল্লেখ তা নির্দেশ করে। মূলত ১৯৪৭ সালে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসন-শোষণ প্রতিষ্ঠার ফলে পূর্ব পাকিস্তান সর্বক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হয়। মূলত প্রশাসনিক ক্ষেত্রে বৈষম্য ছিল ব্যাপক। পাকিস্তানের প্রশাসনিক ব্যবস্থায় পূর্ব পাকিস্তানের ভূমিকা ছিল অতি নগণ্য। ১৯৬৬ সালে পাকিস্তান প্রশাসনের চিত্র ছিল নিম্নরূপ :
১৯৬৬ সালে পাকিস্তান প্রশাসনের চিত্র
নং খাত বাঙালি পশ্চিম পাকিস্তানি
১. প্রেসিডেন্টের সচিবালয় ১৯% ৮১%
২. দেশরক্ষা ৮.১% ৯১.৯%
৩. শিল্প ২৫.৭% ৭৪.৩%
৪. স্বরাষ্ট্র ২২.৭% ৭৭.৩%
৫. তথ্য ২০.১% ৭৯.৯%
৬. শিক্ষা ২৭.৩% ৭২.৭%
৭. স্বাস্থ্য ১৯% ৮১%
৮. আইন ৩৫% ৬৫%
৯. কৃষি ২১% ৭৯%
উপরিউক্ত পদোন্নতির ক্ষেত্রেও পশ্চিম পাকিস্তানিদের প্রাধান্য দেওয়া হতো। তাই যোগ্যতা থাকা স্বত্ত্বেও বাঙালি হিসেবে মি. রাকিব সারাজীবন নিম্ন বেতনভুক্ত কর্মচারী হয়ে থাকেন।
ঘ ১৯৫২ ও ১৯৬৯-এর আন্দোলনের ফলে ঐশীরা আজ বাংলাদেশের গর্বিত নাগরিক। বস্তুত বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন এবং ১৯৬৯ সালে গণ-অভ্যুত্থান দুইটি মাইলফলক। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ছিল বাঙালির সাংস্কৃতিক ও স্বাধিকার আন্দোলন। পরবর্তীকালে এই আন্দোলন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনের জন্ম দেয়। বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনা বিকাশের প্রথম পদক্ষেপ ছিল এই আন্দোলন।
১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে এই আন্দোলন ব্যাপক রূপ লাভ করে। সারা দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে ওঠে। পৃথিবীতে ভাষার জন্য প্রথম শহিদ হন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ আরো অনেকে। এভাবে ভাষা আন্দোলন বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার মন্ত্রে দীক্ষা দেয়। অতঃপর আন্দোলনের নানা পর্যায় পেরিয়ে ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের গণঅভ্যুত্থানে বাঙালির শক্তি দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ঐতিহাসিক আগরতলা মামলা থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির পর ঊনসত্তর গণআন্দোলন নতুন রূপ লাভ করে।
২৩ ফেব্রুয়ারির সংবর্ধনা সভায় বঙ্গবন্ধুর ১১ দফা দাবির প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেন এবং ৬ দফা ও ১১ দফা বাস্তবায়নে বলিষ্ঠ প্রতিশ্রুতি দেন। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে গ্রাম ও শহরের কৃষক ও শ্রমিকদের মাঝে শ্রেণি চেতনার উন্মেষ ঘটে। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের আকাক্সক্ষা বৃদ্ধি পায়।
- উত্তর ডাউনলোড করুন> নবম-দশম শ্রেণি:দ্বিতীয় অধ্যায় বহুনির্বাচনি প্রশ্নোত্তর(PDF)
- উত্তর ডাউনলোড করুন> নবম-দশম শ্রেণি:দ্বিতীয় অধ্যায় ব্যবসায় উদ্যোগ ও উদ্যোক্তা
- উত্তর ডাউনলোড করুন> (PDF)নবম-দশম শ্রেণি:ব্যবসায় উদ্যোগ MCQ (উত্তরসহ)
- উত্তর ডাউনলোড করুন> নবম-দশম শ্রেণি :ব্যবসায় উদ্যোগ প্রথম অধ্যায় ব্যবসায় পরিচিতি
- উত্তর ডাউনলোড করুন>SSC:ফিন্যান্স ও ব্যাংকিংজ্ঞান ও অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর(PDF)
- উত্তর ডাউনলোড করুন> SSC:ফিন্যান্স ও ব্যাংকিংসমন্বিত সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর(PDF)
বাঙালি জাতীয়তাবাদী পরিপূর্ণতা লাভ করে, যাতে বলীয়ান হয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে বাঙালি ঝাঁপিয়ে পড়ে। অবশেষে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে। উপরিউক্ত আলোচনা থেকে আমরা বলতে পারি, ১৯৫২ ও ১৯৬৯-এর আন্দোলনের ফলে ঐশীরা আজ বাংলাদেশের গর্বিত নাগরিক-প্রশ্নোক্ত উক্তিটি যথার্থ।
- সৃজনশীল প্রশ্ন
- (ছয়দফা কর্মসূচি)
জনাব রহমান একজন জনপ্রিয় আঞ্চলিক নেতা। তিনি জনগণের অধিকার আদায়ে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তিনি শাসকগোষ্ঠীর নিকট তার অঞ্চলের জন্য দাবি করেন ব্যবসা-বাণিজ্য, ব্যাংক পরিচালনার ক্ষমতা, প্রতিরক্ষা ও অন্যান্য দেশের সাথে সম্পর্ক, সর্বজনীন ভোটাধিকারের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ও আইনসভা গঠন, রাজস্ব আদায়ের ক্ষমতা।
ক. ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার কত শতাংশ ছিল?
খ. বঙ্গবন্ধুর ‘দ্বিতীয় বিপ্লব কর্মসূচি’ বলতে কী বোঝায়?
গ. জনাব রহমান-এর দাবিনামায় বঙ্গবন্ধুর কোন কর্মসূচির প্রতিফলন ঘটেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উক্ত দাবিনামা বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছিল।”Ñ উক্তিটির মূল্যায়ন কর।
সৃজনশীল প্রশ্নর উত্তর
ক ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ৭০ শতাংশ।
খ বঙ্গবন্ধু শোষণহীন সমাজ গঠনের লক্ষ্যে ‘দ্বিতীয় বিপ্লবের’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। মুক্তিযুদ্ধের সীমাহীন ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বাংলাদেশ যখন ব্যস্ত তখন আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্যবৃদ্ধি, খাদ্য সংকট, ১৯৭৩-৭৪ সালে বন্যায় দেশে খাদ্যোৎপাদন দারুণভাবে ব্যাহত হয়। ফলে খাদ্য সংকট সৃষ্টি হয়। দেশের অভ্যন্তরে মজুদদার, দুর্নীতিবাজ এবং ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠী তৎপর হতে থাকে।
বঙ্গবন্ধুর সরকার জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি এবং শোষণহীন সমাজ গঠনের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ, ন্যাপ, কমিউনিস্ট পার্টিসহ বিভিন্ন দল নিয়ে বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) গঠন করেন। দেশের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তিনি নতুন একটি ব্যবস্থা প্রবর্তনের উদ্যোগ নেন। এটিকে তিনি ‘দ্বিতীয় বিপ্লব’ বলে অভিহিত করেন।
গ জনাব রহমান-এর দাবিনামায় বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা কর্মসূচির প্রতিফলন ঘটেছে। ১৯৬৬ সালের ৫-৬ ফেব্রুয়ারি লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী দলসমূহের এক সম্মেলনে যোগদান করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান। সেখানে তিনি সাংবাদিক সম্মেলন করে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের অধিকার রক্ষার জন্য ৬ দফা তুলে ধরেন। দফাগুলো হচ্ছে,
১. যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাধীনে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার হবে। সর্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে প্রাপ্ত বয়স্কদের ভোটে নির্বাচন অনুষ্ঠান।
২. কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে মাত্র দুটি বিষয় থাকবে, প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অন্যান্য সকল বিষয়ে অঙ্গরাজ্যগুলোর পূর্ণ ক্ষমতা থাকবে।
৩. সারা দেশে হয় অবাধে বিনিয়োগযোগ্য দু’ধরনের মুদ্রা, না হয় বিশেষ শর্ত সাপেক্ষে একই ধরনের মুদ্রা প্রচলন করা।
৪. সকল প্রকার কর ধার্য করার ক্ষমতা থাকবে আঞ্চলিক সরকারের হাতে। আঞ্চলিক সরকারের আদায়কৃত রাজস্বের একটা নির্দিষ্ট অংশ কেন্দ্রীয় সরকারকে দেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে।
৫. অঙ্গরাজ্যগুলো নিজেদের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার মালিক হবে, এর নির্ধারিত অংশ তারা কেন্দ্রকে দেবে।
৬. অঙ্গ রাজ্যগুলোকে আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য আধাসামরিক বাহিনী গঠন করার ক্ষমতা দেওয়া।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে জনাব রহমান এর দাবিনামা মূলত বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা কর্মসূচির প্রতিফলন।
ঘ উক্ত দাবিনামা তথা বঙ্গবন্ধুর ‘৬ দফা দাবি’ বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছিল। পূর্ব বাংলার জনগণের প্রতি পাকিস্তান রাষ্ট্রের চরম বৈষম্যমূলক আচরণ ও অবহেলার বিরুদ্ধে দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রাম সুস্পষ্ট রূপ লাভ করে ৬ দফার স্বায়ত্তশাসনের দাবিনামায়। ৬ দফা পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামরিকসহ সকল অধিকারের কথা তুলে ধরে।
আইয়ুব সরকার একে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী কর্মসূচি’ হিসেবে আখ্যায়িত করে। এ কর্মসূচি বাঙালির জাতীয় চেতনা-মূলে বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে প্রত্যক্ষভাবে স্বাধীনতার কথা বলা না হলেও এ ৬-দফা কর্মসূচি বাঙালিদের স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করে। এটি ছিল বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ।
পাকিস্তান সরকার এটি গ্রহণ না করে দমন-পীড়ন শুরু করলে আন্দোলন অনিবার্য হয়ে ওঠে। এ আন্দোলন ছিল মূলত স্বাধিকারের আন্দোলন। পরবর্তীতে এ আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ও ধারাবাহিকতায় স্বাধীন বাংলাদেশের উদ্ভবও নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করে ‘৬ দফা দাবি’-ই বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছিল।
যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে।