জেনে নিন ওয়েব ডিজাইনার হতে কি কি গুণ থাকা প্রয়োজন? আসুন এ বিষয়ে আলোচনা করে আজকে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক। একজন ওয়েব ডিজাইনারকে ওয়েবসাইট ডিজাইন করার সময় বিশাল তথ্য ভালোভাবে সাজিয়ে সুন্দর একটি ওয়েবসাইট ডিজাইনের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়। অনেক সময় একজন ওয়েব ডিজাইনারকে ওয়েবসাইট তৈরির পাশাপাশি ওয়েবসাইটটি যে ব্যবসার জন্য তৈরি সে ব্যবসার সফলতার জন্য অনেক পদক্ষেপ নিতে হয়। সে জন্য একজন সফল ওয়েব ডিজাইনার হতে হলে অনেকগুলো বিষয় নজর রাখত হয়।
- আরো পড়ুন: কি কি শিখলে ওয়েব ডিজাইনার হতে পারবেন?
- আরো পড়ুন:ক্যারিয়ার হিসেবে জাভাস্ক্রিপ্ট কেন বেছে নিবেন?
- আরো পড়ুন:ওয়েব ডিজাইন ফন্ট ব্যবহারের চূড়ান্ত গাইডলাইন
তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক ওয়েব ডিজাইনার হতে কি কি গুণ থাকা প্রয়োজন?
১. যোগাযোগ দক্ষতা
যাদের ভালো যোগাযোগ দক্ষতা আছে তারা সকল ক্ষেত্রেই সফলতা অর্জন করে। ওয়েব ডিজাইন ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়। বরং অনেক বেশি জরুরী। একজন ক্লায়েন্ট, ডিজাইনার এবং ডেভেলপার সকলের সমন্বিত সহযোগিতার মাধ্যমে ভালো ওয়েবসাইট ডিজাইন হয়ে থাকে। যখন আপনি একটি ডিজাইন করলেন সেটি আপনাকেই বোঝাতে হবে কেন ডিজাইনটি আপনি করেছেন। এ ডিজাইনটি কিভাবে ক্লায়েন্টের ব্যবসার জন্য সঠিক পছন্দ হবে। এগুলো যদি আপনি ভালোভাবে ক্লায়েন্টের সঙ্গে আলোচনা করতে না পারেন তাহলে আপনার ডিজাইনটি ক্লায়েন্টের সেরা পছন্দ হবে না। সবসময় কিছু খুত থাকবে।
২. নিজের যোগ্যতা প্রচার করা
আপনি অনেক কাজ জানেন কিন্তু কেউ সেটা জানে না। তাহলে, কোনো লাভ নেই। বর্তমান সময় প্রতিযোগিতার বাজার। সুতরাং যে যত বেশি মানুষের কাছে নিজেকে এবং নিজের যোগ্যতাকে প্রচার করতে পারবে সেই অন্যদের চাইতে বেশি লাভবান হবে এবং এ প্রতিযোগিতার বাজারে এগিয়ে থাকবে। এ প্রচারটা করার জন্য অনেকগুলো উপায় রয়েছে। যেমন: মুখে মুখে প্রচার, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, ই-মেইল মার্কেটিংসহ আরো অনেকগুলো পদ্ধতিতে আপনার যোগ্যতাকে প্রচার করার এই গুণটি থাকতে হবে একজন ওয়েব ডিজাইনারকে।
৩. ওয়েব ডিজাইনের শুরুতে পরিকল্পনা করা
যেকোনো কোম্পানীর ওয়েব ডিজাইন করার আগে ভালোভাবে পরিকল্পনা করুন। ক্লায়েন্টের কোম্পানী নিয়ে গবেষণা করুন। ক্লায়েন্ট তার ওয়েবসাইট থেকে কি চায়? ওয়েবসাইট তৈরির উদ্দেশ্য কি? ইত্যাদি ছোট-বড় তথ্য আগে ভালোভাবে জানুন। ক্লায়েন্টের প্রতিদ্ধন্দীদের ব্যপারে এবং তাদের ওয়েবসাইটটি আগে ভিজিট করে দেখুন এবং অ্যানালাইস করুন। এবার প্রথমে মনে মনে একটি ডিজাইন সাজান, তারপর সেটিকে কোড দিয়ে ডিজাইন করুন। অনেক ডিজাইনার এ কাজটি করে না।
৪. নিজের কাজকে নিজেই মুল্যায়ন করতে শিখুন
ডিজাইন করা শেষ হলে একবার নিজেই নিজের ডিজাইন খুব ভালোভাবে দেখুন এবং ভুলগুলো ভালোভাবে খুজে বের করুন। একজন দক্ষ ডিজাইনারের নিজের ভুল ধরতে পারার মত চোখ থাকা উচিত। নিজের ভুল ধরতে পারা অনেক বিরল গুণ।
৫. ওয়েব ডিজাইন ও গ্রাফিক্স ডিজাইনের মধ্যে পার্থক্য জানতে হবে
অনেকের মাঝে একটি ভুল ধারণা রয়েছে, গ্রাফিক্স ডিজাইনার হলেই সে ওয়েব সম্পর্কিত ডিজাইনগুলোও পারবে। আসলে প্রিন্টিং এর জন্য ডিজাইন এবং ওয়েবের জন্য ডিজাইনে বেশ পার্থক্য রয়েছে। ডিজাইন সম্পর্কিত পার্থক্যের সঙ্গে এ ২ কাজের উদ্দেশ্য এবং অডিয়েন্সও ভিন্ন। হ্যা এটা সত্য যে, একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার ওয়েবডিজাইন সম্পর্কিত কিছু টেকনিক্যাল বিষয় শিখে ওয়েবডিজাইনার হিসেবে নিজের যোগ্যতার আরো একটি ধাপ উন্নত করতে পারে। কিন্তু তার মানে এটা না যে অনেক নাম করা গ্রাফিক্স ডিজাইনার, এ জন্য চাইলেই ওয়েবের জন্য ডিজাইন করতে পারবে। ওয়েবের জন্য ডিজাইন করতে হলে অবশ্যই এ সম্পর্কিত বিষয়গুলো খুব ভালোভাবে জেনে নিতে হবে।
৬. নতুন প্রযুক্তির ব্যাপারে নিজেকে আপডেট রাখুন
বিশ্বজুড়ে প্রতিদিন নতুন টেকনোলজি দেখা যায়। ওয়েব সম্পর্কিত টেকনোলজিও প্রতিদিন পরিবর্তন হয়। আগে ব্যবহার হত HTML4 আর এখন ব্যবহার হয় HTML5, আগে ব্যবহার হত CSS2 কিন্তু এখন ব্যবহার হয় CSS3। এরকম নিয়মিত আপডেট হচ্ছে। এগুলো যদি শিখে না নেন, তাহলে অন্যদের থেকে আপনি পিছিয়ে যাবেন। সেজন্য সবসময় শেখার উপর থাকতে হবে।
৭. ওয়েব ডিজাইন সম্পর্কিত ছোট ছোট বিষয়গুলো সম্পর্কেও পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকতে হবে
ওয়েব ডিজাইনার হিসেবে সফলতা পেতে হলে এ সম্পর্কিত ছোট ছোট সকল বিষয়গুলো ভালোভাবে জানা থাকতে হবে। ছোট ছোট কিছু বিষয় রয়েছে, যেগুলো জানা না থাকলে আসলে আপনাকে কেউ কাজ দিতে উৎসাহিত হবে না। যেমন: রেসপন্সিভ ওয়েবসাইট ডিজাইন, সার্চ ইঞ্জিন উপযোগী ওয়েবসাইট তৈরি, UI & UX ডিজাইন, বিভিন্ন ফ্রেম ওয়ার্কের ব্যবহার ইত্যাদি।
৮. অভিজ্ঞতা
ওয়েব ডিজাইনের কাজে অভিজ্ঞতা খুব বেশি জরুরী। অনেক সময় দক্ষতা দেখেও ক্লায়েন্ট সন্তুষ্ট হয় না, অভিজ্ঞতাকে তারা বেশি পছন্দ করে। আপনি কয়টি ওয়েবসাইট তৈরি করেছেন, কোন বিখ্যাত কোন কোম্পানী কিংবা বড় কোন কোম্পানীর ওয়েবসাইট তৈরি করেছেন কিনা, কি রকম প্রজেক্ট এখন পর্যন্ত সম্পন্ন করেছেন। এগুলো একজন ওয়েব ডিজাইনারের জন্য খুব জরুরী। এ জন্য আমার পরামর্শ হবে যে, কোন জায়গা হতে ওয়েব ডিজাইনের প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর চাকুরীতে প্রবেশ করতে হলে কিংবা আউটসোর্সিংয়ে ক্যারিয়ার গঠন করতে চাইলে অবশ্যই ঘরে বসে কাছের মানুষদের কিংবা নিজের কমপক্ষে ১০টি ভিন্ন ওয়েবসাইট প্রজেক্ট সম্পন্ন করা উচিত।
৯. নিজের ব্যবহৃত কম্পিউটারের সকল কিছু গুছিয়ে রাখা
সকল কাজের ক্ষেত্রে সফলতার জন্য সবচাইতে প্রথম দরকার গোছানো কাজ করা। ওয়েব ডিজাইনের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নাই। একটি ওয়েবসাইট ডিজাইনের সময় ছবি, ভিডিও, অনেক ডিজাইন স্যাম্পল, ফন্ট, সাউন্ড ফাইলসহ আরো অনেক কিছুর প্রয়োজন। নিজের ব্যবহৃত কম্পিউটারে এগুলো সব ফোল্ডার আকারে গুছিয়ে রাখা উচিত। তাহলে প্রয়োজনের সময় সব খুজে পাওয়া যাবে সহজে। এতে কাজ সম্পন্ন করতে সময় অনেক কম লাগবে, কাজও অনেক ভালো হবে। আমরা অনেক সময় ব্যস্ততার কারনে এদিকে কম মনোযোগ দেই কিন্তু এটিও ভাল কাজ করার জন্য অন্যতম প্রধান সহায়ক।
- আরো পড়ুন:ওয়েব ডিজাইনারদের প্রয়োজনীয় ৭ টি ওয়েবসাইট
- আরো পড়ুন:ওয়েব ডিজাইনের বাংলা বই ডাউনলোড করুন (a to z) ভিডিওসহ
- আরো পড়ুন:ওয়েব ডেভেলপমেন্ট শিখতে কি কি প্রয়োজন
১০. ব্যবসায়িক জ্ঞান
সকল ওয়েব ডিজাইনার হোক সে ফ্রিল্যান্সার কিংবা বেতনভোগী চাকুরীজীবি, তাকে অবশ্যই ব্যবসায়িক মনোভাব থাকা উচিত যখন সে কোন প্রজেক্টের কাজ করতে থাকে। একজন সফল ওয়েবডিজাইনার ক্লায়েন্টের জন্য শুধুমাত্র ওয়েবসাইট ডিজাইনই করেনা, সে ক্লায়েন্টের ব্যবসার মার্কেটিং সলিউশনও করে থাকে। সেজন্য তাকে ক্লায়েন্টের পণ্যের মার্কেটিংয়ের প্রয়োজনীয়তা, তাদের সম্ভাব্য ক্রেতা ও তাদের প্রতিদ্ধন্ধীদের ব্যপারে খেয়াল রেখে ডিজাইন করতে হবে। সফল ওয়েবডিজাইনার হতে হলে এ বিষয়গুলোরও চর্চা করতে হবে।
১১. টিম মেম্বার হিসেবে কাজ করার দক্ষতা
ওয়েব ডেভেলপিং অনেক ক্ষেত্রে একা করা সম্ভব হয় না। একদম ছোট কোন কোম্পানীর কাজ হলে, সেটা এক ধরনের বিষয়। কিন্তু মোটামুটি বড় কোন প্রজেক্ট হলে সেটা একার পক্ষ্যে শেষ করা সম্ভব না। এ ক্ষেত্রে একটি প্রফেশনাল টিম নিয়ে কাজ করতে হয়। সেই টিমে থাকবে একজন ডিজাইনার, একজন কনটেন্ট রাইটার, একজন ডাটাবেস এক্সপার্ট, এ জন্য ডেভেলপার আর একজন থাকবে টিম লিডার। পুরো টিমের মধ্যে সমন্বয়টা খুব ভালো হতে হবে। এ ক্ষেত্রে বড় প্রজেক্ট খুব ভালোভাবে সম্পন্ন হবে।